সম্পাদকীয়

লাগাম পরাতে...

অভিযোগটা ক্রমে সত্যে পরিণত হয়েছে। এরাজ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসার খরচ কার্যত লাগামছাড়া। অনেকের মতে, বাজার অর্থনীতির নিয়ম মেনে যা হওয়া উচিত অনেকক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি বিল করে একশ্রেণির বেসরকারি হাসপাতাল। এই অভিযোগ শুধু ভুক্তভোগীদের নয়, সরকারেরও। বস্তুত বছর ছয়েক আগে ২০১৭ সালে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাপ্রাপ্ত কয়েকজন বিধায়কের খরচের বিল দেখে চোখ কপালে উঠেছিল সরকারের। বিধায়কদের হাসপাতালের বিল মেটায় সরকার। সেই বিলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচারের যে খরচ দেখানো হয়েছে তা নিয়ে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয় সরকারি কর্তাদের। বিষয়টা নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে আলোচনাও করেন। তারপর ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হন বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রী খরচে লাগাম টানার কথা বলেন। পরে এক অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘হাসপাতাল আর কসাইখানা এক নয়। হাসপাতালের সঙ্গে প্রমোটিংয়ের ব্যবসাকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।’ এরপরেই ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি অ্যাক্ট সংশোধন করে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন গত কয়েকবছরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের মামলার নিষ্পত্তি করেছে। অনেকক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণও আদায় করেছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি, অভিযোগের মাত্রাও কমেনি। এই অবস্থায় সঙ্গত কারণেই রাজ্য সরকার ফের কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর। এর মূল উদ্দেশ্য হল, বেসরকারি হাসপাতালের ইন্ডোর আউটডোর থেকে রক্ত পরীক্ষা, রোগ নির্ণয় ইত্যাদি—চিকিৎসার সবক্ষেত্রে খরচ বেঁধে দেওয়া। জনস্বার্থ রক্ষায় যা বিশেষ জরুরি। কারণ দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কাজকে মমতার সরকার অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। সূত্রের খবর, হাসপাতালগুলির শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী (এ, বি, সি, ডি) খরচের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত হবে।
এখনও রাজ্যে সরকারি হাসপাতালের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় কম বলেই অথবা মনমতো উন্নতমানের পরিষেবা পেতে মানুষকে ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে। রাজ্যে প্রায় ৪ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম রয়েছে। এরমধ্যে কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় আছে ৮০টি বড় হাসপাতাল, যাদের শয্যা সংখ্যা ১০০-র বেশি। যদিও সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে চিকিৎসা মেলে, উন্নতমানের চিকিৎসাও হয়। পাশাপাশি বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বেলাগাম। অকারণ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, প্রয়োজনের তুলনায় বেশিদিন ভর্তি রাখা, প্রয়োজন না হলেও রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা, সমস্ত ধরনের পরীক্ষা, অস্ত্রোপচার, শয্যা ভাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিংহোমের একাংশের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। এরসঙ্গে রয়েছে গরমিল করে বিল বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ। এক কথায়, স্বাস্থ্য পরিষেবা নয়, আদ্যোন্ত একশ্রেণির বেসরকারি হাসপাতাল ব্যবসায়ী সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যেখানে লাভই শেষ কথা বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। এই প্রসঙ্গেই, বিশেষত দক্ষিণের রাজ্যগুলির নামজাদা হাসপাতালের চিকিৎসা খরচের সঙ্গে কলকাতার বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচের তুলনা টেনে আনেন অনেকে। একথা ঠিক, বেসরকারি হাসপাতাল ‘চ্যারিটি’ করতে আসেনি। তাদের উন্নত ও আধুনিক পরিকাঠামো এবং ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট লুকের জন্য উপভোক্তাকে প্রয়োজনীয় মূল্য দিতেই হবে। কিন্তু সেই মূল্য কত হওয়া উচিত তারই ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে চায় রাজ্য সরকার। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। এর প্রয়োজনও আছে।
ঠিক হয়েছে, একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এই কাজ করবে। কমিটিতে স্বাস্থ্যকর্তাদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনগুলির কর্তারাও রয়েছেন। খুব দ্রুত এই কমিটি বৈঠকে বসবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন হওয়ার পর তারা এ পর্যন্ত ৩৩টি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। হাসপাতালের ফার্মাসি বিলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার নির্দেশও কমিশনের। আবার চিকিৎসার গাফিলতি সংক্রান্ত ১৫০০ মামলার নিষ্পত্তির পাশাপাশি অন্তত ৬৫০টি ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছে কমিশন। সব মিলিয়ে ৬ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবু লাগাম পরানো যায়নি। কথায় বলে, আশায় মরে চাষা। তবু রাজ্যের এই উদ্যোগে আশায় বুক বাঁধছেন সাধারণ মানুষ। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে একটা কাঁটাও থেকে যাচ্ছে। মানুষের বিপদের দিনে জনস্বার্থে প্রাইভেট হাসপাতাল নার্সিংহোমগুলি এবার কতটা সহযোগিতার হাত বাড়ায় সেটাই এখন দেখার।
16Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা