বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

গেরুয়া রণনীতি

বিজেপির অবস্থা এখন অনেকটা ক্ষতবিক্ষত বাঘের মতো। ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসতে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুজরাত মডেলকে তুলে ধরেছিল গেরুয়া শিবির। তাতে ফল মিলেছিল। বিজেপি পেয়েছিল ২৮২টি আসন। ২০১৯-এ জাতীয়তাবাদের আবেগ আর মোদি ম্যাজিক ছিল জেতার চাবিকাঠি। সেবার আসন বাড়িয়ে (৩০৩) ক্ষমতা দখল করে পদ্মশিবির। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে হাতে আর মোটামুটি একবছর সময়। এবার মোদি ম্যাজিক অনেকটাই উধাও। উপরন্তু টানা দশবছরের ‘অপ-শাসনে’ দেশজুড়ে সরকার বিরোধী ক্ষোভও তুঙ্গে। করোনার মতো সর্বগ্রাসী মারণরোগের মোকাবিলায় সরকারের নজিরবিহীন ব্যর্থতা দেখেছে দেশের মানুষ। তার সঙ্গে রয়েছে গ্যাসের দাম, জ্বালানির দাম, মূল্যবৃদ্ধির হাহাকার। বেকারত্বে রেকর্ড, গরিব-মধ্যবিত্তের হাতে নগদ টাকার অভাব, দিশাহীন অর্থনীতির ভয়াবহ ছবি। আবার কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধী নেতানেত্রীদের হেনস্তা করা, সরকারের বিরোধিতা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ মোদি সরকারের নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গেই রয়েছে বিভাজনের রাজনীতি ও সংখ্যালঘুদের উপর সীমাহীন নির্যাতনের কাহিনি। স্বৈরাচারী শাসনের এমন সব ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে ২০২৪-এর ভোটে জেতা যে বেশ কঠিন তা ভালোই বুঝেছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ নেতৃত্ব। তাই ক্ষতবিক্ষত বাঘ জেতার লক্ষ্য বাড়াতে (৩৫০ আসন) নতুন কৌশল নিয়েছে। উত্তর অথবা পশ্চিম নয়, জেতার জন্য এবার তাদের মূল টার্গেট পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত। সেইসঙ্গে গোটা দেশে মহিলা ও সংঘ্যালঘু ভোটকে পাখির চোখ করেছে গেরুয়াবাহিনী। এসবের পরেও চিন্তিত মোদিদের আপাতত ভরসা জোগাচ্ছে বিরোধীদের অনৈক্যের ছবি। 
‘পুবে তাকাও’ (লুট ইস্ট) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে ১৯৯১ সালে নরসীমা রাওয়ের আমলে ‘পুবে তাকাও’ নীতি গ্রহণ করেছিল ভারত। ৩২ বছর পরেও সেই নীতির কতটা সফল রূপায়ণ হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক বিস্তর। কিন্তু পরের লোকসভা ভোটে পূর্ব ভারতের চার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডে আসন বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। কিন্তু একা পূর্ব-ভারত দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন বুঝে একইসঙ্গে দক্ষিণেও ঝাঁপাতে চায় গেরুয়াবাহিনী। পূর্বে এই মুহূর্তে চার রাজ্যে ক্ষমতায় নেই বিজেপি। দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্য তামিলনাড়ু, কেরল, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের মধ্যে শেষোক্ত অর্থাৎ কর্ণাটকে বিজেপির সরকার রয়েছে। সেখানে কয়েক মাসের মধ্যে ভোটে মোদিবাহিনী হারলে দক্ষিণও বিজেপিমুক্ত হয়ে যাবে। তাই উত্তর-পশ্চিমে নিশ্চিত বিজেপি এবার পূর্ব ও দক্ষিণে আসন বাড়াতে চমকপ্রদ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নামতে চলেছে। বিরোধীদের অবশ্য কটাক্ষ, ২০১৪-র নির্বাচনের আগে বছরে ২ কোটি চাকরি, প্রতিটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী। আবার হয়তো তেমনই কল্পতরু হয়ে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। লক্ষণীয় বিষয় হল, মোদি জমানায় সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু ও সবচেয়ে অবহেলিত মহিলাদেরই এবারের ভোটের ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। দেশের ১০টি রাজ্যের অন্তত ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে ৩০ শতাংশের বেশি ভোটার সংখ্যালঘু। স্বভাবতই ভোটের পাটিগণিতে এদের আর অচ্ছুৎ করে রাখা যাচ্ছে না। আর মহিলা ভোট যে একটা সরকারও গড়ে দিতে পারে, তার হাতেগরম উদাহরণ হতে পারে মমতার বাংলা। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মহিলাদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প তৃণমূলকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে। বিজেপিও তাই উজ্জ্বলা, প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ‘সুফল’ নিয়ে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এর সঙ্গে থাকছে ডিসেম্বরের মধ্যে মোদির একশোটি জনসভা করার পরিকল্পনা।
এত পরিকল্পনা, এত কৌশলের পরেও বিজেপি নেতৃত্বকে যেন ভরসা জোগাচ্ছে বিরোধীদের অনৈক্যের চেহারা। তথ্য বলছে, দেশের অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে লোকসভার আসন সংখ্যা ২০০টি। এর মধ্যে মাত্র ৫০টি আসন দখলে রয়েছে বিজেপির। অতএব বিরোধীদের গতবারের আসন অটুট থাকলে গেরুয়া শিবিরের সব কৌশল সরয়ূর তীরে ডুবে যেতে পারে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, বিরোধী এক্যৈর ফাটল যেন তত চওড়া হচ্ছে। একদিকে কংগ্রেস বাম ও সহযোগী কয়েকটি দল, অন্যদিকে তৃণমূল, সপা, আরজেডির মতো দলগুলি রয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন বিরোধীরা তাতে একপক্ষ অনুপস্থিত। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার দাবি করেছেন, বিরোধীরা একজোট হলে বিজেপি ১০০ আসনও পাবে না। কিন্তু একজোট হবে কি? বরং শক্তিশালী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবেন কে—তাই নিয়ে লড়াই চলছে। তাই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে শত নেতিবাচক প্রচার থাকলেও বিরোধীদের কাণ্ডকারখানা দেখে নরেন্দ্র মোদি যেন অন্তরালে হাসছেন। যদিও আপাতত।

11th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ