বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
সম্পাদকীয়
 

বিজেপি হলেই সাধু!

একটা তথ্য দেওয়া যাক। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলের দশ বছরে (২০০৪-২০১৪) ৭২ জন বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল সিবিআই। এর মধ্যে বিরোধী দলের ছিলেন ৪৩ জন, কংগ্রেস ও সহযোগী দলের ২৯ জন। আর মোদি জমানায় ২০১৪ থেকে ২০২২-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট বছরে মোট ১২৪ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই। এর মধ্যে বিরোধীদের ১১৮ জন। বিজেপি’র মাত্র ৬ জন! শতকরা হিসাবে ৯৫ শতাংশেই বিরোধী নেতানেত্রী। তালিকায় রয়েছেন তৃণমূলের ৩০ জন, কংগ্রেসের ২৬ জন, আরজেডি ও বিজেডি’র ১০ জন করে, আপ-এর ৪ জন, সিপিএমের ৪ জন। ছ’মাস আগে একটি বেসরকারি সমীক্ষায় বিরোধীদের প্রতি মোদি সরকারের মনোভাবের এই তথ্যসমৃদ্ধ দগদগে কুকীর্তির ছবি উঠে এলেও পদ্মশিবির এখনও তা অসত্য বলে উড়িয়ে দেয়নি। বরং যাবতীয় শিষ্টাচার, সৌজন্য, লজ্জাবোধ ও গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মোদি সরকার যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, এখন আর একা সিবিআই নয়, সঙ্গে দোসর হয়েছে ইডি, আইটি’র মতো অন্যান্য কেন্দ্রীয় এজেন্সিও। সরকার গঠনের শুরু থেকেই নরেন্দ্র মোদিদের এই ধ্বংসাত্মক গণতন্ত্র বিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে সবর হয়েছে দেশের প্রায় সব ক’টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। এবার  সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দেশের ৮টি রাজনৈতিক দলের ৯ জন শীর্ষ নেতা ক্ষোভ উগরে দিয়ে লিখেছেন, ‘দেশটা গণতন্ত্র থেকে ক্রমশ স্বৈরতন্ত্রের পথে এগচ্ছে।’ আসলে, বিরোধীদের কব্জা করতে স্বৈরাচারী শাসকের যাবতীয় লক্ষণ ফুটে উঠেছে মোদি সরকারের গায়ে। উপরে বর্ণিত তথ্য একটা উদাহরণ মাত্র। বিরোধীদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব মুছে দিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবার একসঙ্গে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। যেমন, বিরোধী দলে থাকাকালীন কেন্দ্রীয় এজেন্সি’র নিশানায় থাকা কোনও নেতা বিজেপিতে যোগ দিলেই তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দিয়ে নাগরিকদের জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধী সরকার ভাঙতে ঘোড়া কেনাবেচা হচ্ছে। বাংলার মতো বিরোধীশাসিত রাজ্যকে বিপদে ফেলতে অর্থনৈতিক অবরোধও তৈরি করা হচ্ছে। কোথাও-বা বিরোধীশাসিত রাজ্যে রাজ্যপালদের কেন্দ্রের এজেন্ট হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টাও কম হচ্ছে না। আবার পেগাসাস প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়িপাতার অভিযোগও উঠছে। সঙ্গতকারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শারদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উদ্ধব থ্যাকারের মতো ন’জন শীর্ষ নেতা এসব নিয়ে ক্ষোভ ও প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
মোদি শাসনের অভিজ্ঞতা বলছে, রাজনৈতিকভাবে ভোটের লড়াইয়ে বিরোধী সরকারকে দখল করতে পারছে না তারা। এর বড় উদাহরণ মমতার বাংলা। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ‘অস্ত্র’ করেছেন দিল্লির কর্তারা। এই অস্ত্রেই গত কয়েক বছরে বহু রাজনৈতিক নেতাকে তদন্তের নামে হেনস্তা করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এই অস্ত্রেই তৃণমূলের একগুচ্ছ নেতাকে জেলে ঢোকানো হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার আপাতত শেষ শিকার দিল্লির কেজরিওয়াল সরকারের উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়া। আবগারিকাণ্ডে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্লজ্জতার যাবতীয় সীমা ছাড়িয়ে মোদি সরকার দেখিয়ে দিয়েছে বিরোধী দলে থাকাকালীন অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা বিজেপি নামক ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে কীভাবে ‘সাধুপুরুষ’ হয়ে যান! একদা অসমের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-এর মন্ত্রিসভার দু’নম্বর ব্যক্তি ছিলেন হিমন্ত। সারদাকাণ্ডে ২০১৪-১৫ সালে এই হিমন্তের বিরুদ্ধেই তদন্ত শুরু করে সিবিআই, ইডি। বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শিবির বদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যান তিনি। এজেন্সিও তারপর হাত গুটিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। এই গেরুয়া নেতা এখন উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে অমিত শাহদের একনম্বর বোড়ে হিসাবে কাজ করছেন। একইভাবে নারদাকাণ্ডে এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকেও টিভি’র পর্দায় দেখেছেন মানুষ। নারদাকাণ্ডে তৃণমূলের একাধিক নেতা জেল খেটেছেন। তৃণমূলে থাকার কারণে এখনকার বিজেপি নেতাও তখন কেন্দ্রীয় এজেন্সি’র স্ক্যানারে ছিলেন। কিন্তু জামা বদলাতেই তাঁকে আর চোখেই দেখতে পাচ্ছেন না এজেন্সি’র কর্তারা! এরাজ্যে মুকুল রায় কিংবা মহারাষ্ট্রের নারায়ণ রানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বিরোধী সরকারকে চাপে রাখতে বিজেপি কীভাবে রাজ্যপালদের গেরুয়া জার্সি পরিয়ে মাঠে নামায় বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের ভূমিকা তার একটা উদাহরণ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিরোধীদের চিঠিতে নাম না করে আদানির প্রসঙ্গ এসেছে। আদানি ইস্যুতে গুরুতর অভিযোগের পরও মোদি সরকার এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি নীরব। বরং তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কার্যত বিরোধীদের ছারখার করে দিয়ে একা রাজত্ব করার প্রবণতা ও কার্যকলাপ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধেই এবার প্রশ্ন উঠল। পদ্মশিবিরের কোনও হেলদোল নেই। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিরোধী নেতাদের এই চিঠির পরেও তাদের একইরকম ‘বেশ করেছি’ মনোভাব! অনুমান করা যায়, সামনের দিন আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।

7th     March,   2023
 
 
কলকাতা
 
রাজ্য
 
দেশ
 
বিদেশ
 
খেলা
 
বিনোদন
 
আজকের দিনে
 
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনকার দর
দিন পঞ্জিকা
 
শরীর ও স্বাস্থ্য
 
বিশেষ নিবন্ধ
 
সিনেমা
 
প্রচ্ছদ নিবন্ধ