সম্পাদকীয়

বাংলার বিশ্ব জয়

ফের জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পেতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবারের বিষয়, রাজ্যের সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। মাত্র কয়েক বছর আগেও এরাজ্যে পর্যটন বলতে ছিল দীঘা আর দার্জিলিং। মানচিত্রে সুন্দরবনের নাম থাকলেও সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। অথচ বাংলার অফুরান প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে এরাজ্যকে যে পর্যটনের অন্যতম গন্তব্যস্থল হিসাবে গড়ে তোলা যায়, তা মনে করেন অনেকে। রাজ্যের ৩৪ বছরের বাম সরকার এসব জেনেও পর্যটনক্ষেত্রকে চিরকাল দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতোই দেখে এসেছে। পর্যটন শিল্প ছিল অবহেলিত। মমতার সরকার সেই পথে হাঁটেনি। কথায় বলে, গোড়ায় জল দিলে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। তৃণমূল সরকার সেই পথে এগনোয় রাজ্যবাসী তার ফল পাচ্ছে হাতেনাতে। রাজ্যের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের হাত ধরে। সেটা ২০১৭ সালের কথা। গোটা দেশে সাড়া জাগানো এই প্রকল্পকে জাতিসঙ্ঘ তাদের সর্বোচ্চ জনসেবা পুরস্কারে সম্মানিত করে। ৬২টি দেশের ৫৫২টি সামাজিক প্রকল্পের মধ্যে সেরার সম্মান ছিনিয়ে আনে ‘কন্যাশ্রী’। বাংলার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ‘মা দুর্গার’ হাত ধরে। ২০২১ সালে বড়দিনের আগেই সেই সুসংবাদ এসেছিল। বাঙালির চিরকালীন দুর্গোৎসবকে ইউনেস্কো ‘আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’-র তালিকায় যুক্ত করে। অর্থাৎ ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় বিশেষ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্মান। বিশ্বের নানা স্থানে থাকা বাঙালিদের কাছেও সেরা উৎসব দুর্গোৎসব। কিন্তু প্রসার ও অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রশ্নে বাংলার দুর্গোপুজো গত এগারো বছরে এক অন্য মাত্রা পেয়েছে সন্দেহ নেই। উৎসবের সর্বজনীন আবেদন তুলে ধরতে প্রতিবছর কার্নিভ্যালের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। যা দেশ বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। এমন এক ঐতিহ্যের উৎসবকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে আবেদন জানিয়েছিল মমতার সরকার। ইউনেস্কোর এক কর্তার কথায়, ‘দুর্গাপুজো হল একুশ শতকের আদর্শ উৎসব। এর আসল জোর সামাজিক বন্ধন ও সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা।’ অতঃপর এবার স্বীকৃতি আসছে সাংস্কৃতিক পর্যটনের হাত ধরে।
এমাসের ৭ থেকে ৯ তারিখ বার্লিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পর্যটনমেলা বসতে চলেছে। সেখানেই বাংলার হাতে শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক পর্যটন গন্তব্য’-র পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব ট্যুরিজম অনুমোদিত ‘প্যাসিফিক এরিয়া রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বাংলাকে জগৎসেরা হিসাবে বেছে নিয়েছে। পুরস্কার গ্রহণ করা ছাড়াও তিনদিনের মেলায় রাজ্যের পর্যটনের ছবি তুলে ধরবেন বাংলার প্রতিনিধিরা। সন্দেহ নেই, এই মেলায় অংশ নেওয়ার ফলে বাংলার পর্যটনের কথা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের দরবারে। বিশ্বের ভ্রমণ ম্যাগাজিনগুলিতে জায়গা করে নেবে বাংলার পর্যটনের কথা। এ এক পরম প্রাপ্তি। বাম আমলে অচ্ছুৎ পর্যটন যে এখন বিশ্বমঞ্চে সেরার স্বীকৃতি আদায় করে নিচ্ছে, এই কৃতিত্ব এককভাবে মমতা সরকারের প্রাপ্য। আসলে গোটা বিশ্বেই যখন পর্যটনকে এক সম্ভাবনাময় শিল্প হিসাবে দেখা হচ্ছে, এদেশের একাধিক রাজ্য যখন পর্যটনকেই তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম হাতিয়ার করেছে, তখন রাজ্যের বাম সরকার পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্বই দেয়নি। অথচ বাংলার প্রায় প্রতিটি জেলাই পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারত। ফলে অনেক দেরিতে শুরু করেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাওয়াদাওয়ার উপযুক্ত জায়গা, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে যুক্ত করে বাংলার পর্যটনকে অন্যমাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করেছে মমতার সরকার। সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে এখন ঘাটতি অনেকটাই মিটেছে। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র পর্যটনের নতুন নতুন গন্তব্য তৈরি হয়েছে। সরকারের নতুন পর্যটন নীতি মেনে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে এখন বাংলার ঐতিহ্যশালী লোকসংস্কৃতির টাটকা সুবাস মিলছে গরম ভাতের সঙ্গে।
এখানেই থেমে না থেকে গত বছর বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলনে পর্যটন শিল্পের জাতীয় সংগঠন ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েশনস ইন ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি, সংক্ষেপে ফেথ-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে রাজ্য। ঠিক হয়েছে, দু’পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে একটি নীতি তৈরি করা হবে। বিশেষ ধরনের পর্যটনক্ষেত্রের উপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে গড়া হবে সাবগ্রুপ। বিশেষত রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পর্যটনকে আরও নিবিড়ভাবে যুক্ত করতে রূপরেখা তৈরি করা হবে। যেমন হেরিটেজ ট্যুরিজম, রুরাল ট্যুরিজম, ফিল্ম ট্যুরিজম, ইকো বা রিভার ট্যুরিজম। দু’পক্ষের দাবি, এই কাজ করতে পেশাদার দক্ষতার উপর জোর দেওয়া হবে। কর্মসংস্থানের নতুন নতুন জায়গা তৈরি হবে। বাংলার পর্যটন বিকাশের হাতিয়ার করা হয়েছে ডিজিটাল মিডিয়াকে। দেশ বিদেশের পর্যটক টানতে পোর্টালে ব্যাপক প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি তথ্যচিত্র বানিয়ে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারে ধারাবাহিক প্রচার চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। খুব সম্প্রতি কলকাতার বাবুঘাটে গঙ্গা আরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বারাণসীর ধাঁচে এই সন্ধ্যা আরতি নিঃসন্দেহে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন বিবিধ উদ্যোগ দেখে বলাই যায়, রাজ্যের পর্যটন আর দুয়োরানি নেই।
17Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পারিবারিক অশান্তির অবসানে গৃহ সুখ ও শান্তি বাড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মে উন্নতি। উপার্জন বৃদ্ধি।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.২৬ টাকা৮৪.৩৫ টাকা
পাউন্ড১০৬.৪৬ টাকা১০৯.১২ টাকা
ইউরো৮৯.৭৬ টাকা৯২.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা