ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
গাছের পাতা নাকি গাছের ‘রান্নাঘর’। সেখানেই সালোকসংশ্লেষ চলে। বাড়িরও একটা ‘শক্তিঘর’ আছে। গাছেদের মতোই সেখানে রান্নাবান্না চলে। তবে এই শক্তিঘরের কদর মধ্যবিত্ত পুরুষতান্ত্রিক ভাবনার অন্দরে আদৌ কতটা ছিল তা নিয়ে সন্দেহ আছে। একটা সময় ছিল, যখন রান্নাঘর মানে সোঁদা দেওয়াল, সিমেন্ট চটা মেঝে, স্যাঁতসেতে ঘর। সারাক্ষণ ধোঁয়ার পোড়া গন্ধ। সেখানেই বউ নড়েচড়ে। রাঁধেবাড়ে। আঁচলের খুঁট দিয়ে ঘাম মুছে রান্নাঘরের দোর থেকে উঁকি দিয়ে কচি মেয়ে দেখে নেয় ‘ওর’ ভালো লেগেছে কি না! ভালো লাগলে সোহাগ আর একটু বেশি। ভালো না লাগলে সেদিন দিনভর অশান্তি। কর্তার মুখভার।
‘করো কী সারাদিন? ওই তো রান্না! তাও পারো না?’
বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে, তবু মেয়েমনের দাম তখনও বাড়েনি। তবে এই দিনকালের গায়েও একদিন আলো এসে পড়ল। সেই আলোর হাত ধরেই এল নারী অধিকার, স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ। এগিয়ে এল ছেলেরাও। বুঝল, রান্নাঘর মলিন হলে সংসারেও দাগ লাগে। তাই ফ্ল্যাট বাছার আগে ছেলেটি জেনে নিল রান্নাঘর কত স্কোয়্যারফিট। বউয়ের পরামর্শে তা হল মডিউলার। না হলে অন্তত খোলামেলা। বসল চিমনি।
শ্রীময়ীর সংসারে তাই শ্রীহীন রান্নাঘরের দিন শেষ। রেস্ত বুঝে সেই ঘরকে সাজিয়ে তোলাও আজকাল সহজ। সাধের রান্নাঘরকে আর একটু সাজিয়ে তুলতে গেলে শুধু মাথায় রাখতে হবে কিছু নিয়ম, দরকার কিছু হিসেবনিকেশ। কেমন সেসব? জানালেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার সুদীপ ভট্টাচার্য।
মনখারাপের নটেগাছ: যে কোনও ঘরের চেহারা বদলে দিতে পারে টবে রাখা গাছ। রান্নাঘরের একটা দিক জুড়ে তাই তৈরি করে ফেলুন কিচেন গার্ডেন। বাজারে ছোট ছোট টব মেলে। সেখানেও রাখতে পারেন গাছ। আবার জল খাওয়ার বাড়তি বোতল, শেষ হয়ে যাওয়া স্যসের শিশি, শ্যাম্পুর কৌটো ইত্যাদি ফেলে না দিয়ে ব্যবহার করুন কিচেন গার্ডেনের টব হিসেবে। হাত বাড়ালেই দরকারের ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, টম্যাটো, স্প্রিং অনিয়ন বা লেবু-লঙ্কার জোগান দেবে সেই বাগান। আভেন, ধোঁয়া, আগুনের মাঝে ওইটুকু সবুজ চোখের আরাম, মনের স্বস্তি। মনখারাপের নটেগাছও মুড়োবে।
মেদ ঝরান: রান্নাঘর সাজিয়ে তোলার আর এক শর্ত পরিমিতিবোধ। অপ্রয়োজনীয় জিনিস আগেই বাদ দিন। পুরনো হয়ে যাওয়া বয়াম পাল্টে নতুন বয়াম আনুন। সম্ভব হলে পুরনো বয়াম ভালো করে পরিষ্কার করে তার গায়ে রং করে নিন। এবার তার গায়ে নতুন কোনও নকশা এঁকে নিন। এতে পুরনো জিনিস রিসাইকেল করাও হবে আবার রান্নাঘরের চেহারাও ফিরবে।
রং-তুলি-মন: বাজারচলতি কাচ মাটি বা তামার বোতলে জল রাখেন? তাহলে একটু রং-তুলি নিয়ে বসুন। বোতলের গায়ে অনায়াসেই ফুটিয়ে তুলতে পারেন নিজের কল্পনাশক্তি। আবার কাউন্টার টপ সাজানোর সময় প্রচলিত ফুলদানি ব্যবহার না করে টিনের কৌটো ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রেও এই টিনের কৌটোর ভোলবদল করুন রং ও আর্ট ওয়ার্ক দিয়ে। কাঠের হাতা-খুন্তিগুলোকেও চাইলে রং করে নিতে পারেন। দেখতে অন্যরকম হবে।
রংবাজি: তেল কালি ও ধোঁয়ায় রান্নাঘরের রং সবচেয়ে আগে নষ্ট হয়। তাহলে উপায়? গোটা রান্নাঘর রং না করে বরং বেছে নিন নির্দিষ্ট একটা কোণ বা কিছু আসবাব। সেই কোনার দেওয়ালটিতে কয়েক পোঁচ নতুন রং লাগান। সঙ্গে রং করে নিন ওই কোনা সংলগ্ন কিছু আসবাব। ক্যাবিনেটের পাল্লাগুলোতেও রং করতে পারেন। এতে রান্নাঘর উজ্জ্বল দেখাবে।
দেওয়াল-মেঝের টুকিটাকি: চিমনি থাকলেও তেল ধোঁয়া আগুনের তাপ এগুলো রান্নাঘরের দেওয়ালকে খুব দ্রুত নোংরা করে দেয়। দাগছোপ ফেলে। দেওয়ালের যে অংশে দাগছোপ বেশি হয় সেখানটা বরং ওয়ালপেপার দিয়ে ঢেকে দিন। ওয়ালপেপার পুরনো হয়ে গেলে বদলে দেবেন। এটি রং করার চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী। বাকি অংশে রান্না সংক্রান্ত মজার মজার পোস্টার বাঁধিয়ে রাখতে পারেন। বিখ্যাত শেফদের নানা কোটেশন, রান্না নিয়ে মজার ছড়া বা লোভনীয় রান্নার পদের ছবিও বাঁধিয়ে রাখা যায়।
রান্নাঘরের মেঝে ভালো রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল টাইলসের উপর আঠা দেওয়া কন্ট্যাক্ট পেপার লাগিয়ে নেওয়া। এতে মেঝে নষ্ট যেমন হয় না তেমন দেখতেও দারুণ লাগে।
আলো আমার আলো: রান্নাঘরের আলো নিয়ে মাথা না ঘামালে কিন্তু পুরো চেষ্টাই মাটি। রান্নাঘরের আলো হবে উজ্জ্বল। রাঁধুনি যেন রান্নার রং, মশলার রং সব ভালোভাবে দেখতে পান। আলো সেটও করতে হবে এমন জায়গায় যাতে আভেনের রান্না স্পষ্ট দেখা যায়। রান্নাঘরের আলো রাখুন ছিমছাম কিন্তু হাই পাওয়ারের। সাদা রং-ই এখানে সেরা।
তাকের যত্ন নিন: কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স যত্নে না রাখলে রান্নাঘর জবরজং দেখায়। প্রতিটি উপকরণ ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করুন। মিক্সার গ্রাইন্ডার, মাইক্রো আভেন এগুলো রাখতে ছোট ছোট পাথরের তাক বানিয়ে নিন রান্নাঘরের কোনা জুড়ে। নির্দিষ্ট তাকে অ্যাপ্লায়েন্স রাখলে রান্নাঘরকে আসবাবে ঠাসা মনে হবে না। বাড়তি জায়গাও পাবেন।
বেসিন ভাবনা: রান্নাঘরের সিঙ্ক কিন্তু স্টেনলেস স্টিলের হওয়াই ভালো। অনেক পাথরের গায়ে সহজেই জলের দাগ ধরে যায়। তাই এমন বেসিন রান্নাঘরে এড়িয়ে চলুন। আর একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন,অনেকসময় সবজি বা মাংস ধুতে গরম জল লাগে। তাই রান্নাঘরের কলটির সঙ্গে যেন গরম জলের লাইন যুক্ত থাকে।