নারীর একক লড়াই
‘স্টেটাস সিঙ্গল’— একটা বই যা ক্রমশ একটা শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। এ সমাজের একক নারীর কথা বলে বইটি। লেখিকা শ্রীময়ী পিউ কুণ্ডু তাঁর জীবনের বহু অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তাঁর সঙ্গে কথায় কমলিনী চক্রবর্তী।
হঠাৎ সমাজের একক মহিলাদের উপর একটা বই লিখবেন ভাবলেন কেন?
সেটা ছিল ২০১৮ সাল। আমি তখন একটি সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখতাম। তাতে আমি একক জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখতাম। একা জীবন কাটাতে গিয়ে আমি অনুভব করেছি যে একলা মেয়ের জীবনে প্রচুর ঘটনা রয়েছে। তার কিছু ভালো, কিন্তু বেশিটাই মন্দ। সেই অভিজ্ঞতাগুলো আমি সমাজের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। কেমন করে আমাদের সমাজ একক নারীর গায়ে একটা লেবেল লাগিয়ে দেয়, তা সবাইকে বলতে চেয়েছিলাম। এবং সেই থেকেই এই বই লেখার কথা মনে হল।
কিন্তু সে তো আপনার জীবনের কথা...।
না, এটাই আমি বলতে চাই। বইটা লিখতে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই গল্প আমার একার নয়। আমাদের দেশের আরও অজস্র একক মহিলা রয়েছেন যাঁরা সবাই বিভিন্ন ওঠাপড়া নিয়ে, নানা সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। আমার মনে হয়েছিল সেই সব মহিলার প্রতিনিধি হয়ে উঠতে হবে আমাকে। তাঁদের জীবনটাকেও সমাজের সামনে আনতে হবে। শুধু তাই নয়, আমার কলামটা লিখতে লিখতেই আমি বুঝেছিলাম এটা কোথাও গিয়ে যেন সমগ্র একক নারীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। আমার কাছে মেয়েরা রীতিমতো অনুরোধ পাঠাতেন। কেউ বা অবাক হয়ে বলতেন, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে যেন তাঁরই জীবনের কথা। কেউ নিজের কিছু সমস্যার কথা জানাতেন। এইভাবেই আমার কলামটা যখন ব্যক্তিগত থেকে ক্রমশ সর্বজনীন হয়ে উঠল তখনই অনুভব করলাম সবার হয়ে আমাকেই প্রতিনিধিত্ব করতে হবে।
এটা একটা ভেতরের টান বলতে পারেন। এবং সেই টান থেকেই আমি গবেষণা করে সমাজের একক নারীদের কাছে পৌঁছই এবং বইটির প্রথম সংস্করণেই তিন হাজারেরও কিছু বেশি একক মহিলার জীবনের গল্প লিখি। তবে সেটা যে বেস্ট সেলার হয়ে উঠবে তা কিন্তু ভাবিনি।
সমাজের একক মহিলাদের কী কী স্তরে ভাগ করেছেন?
আমার বইতে একক নারীদের নানাভাবে খুঁজে পাবেন। কেউ অবিবাহিত, কেউ বিধবা, কেউ ডিভোর্সি কেউ বা বিবাহিত হয়েও স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। এমন নানা দিক থেকে আমি ‘একলা মেয়ে’-দের জীবনকথা তুলে ধরেছি। বইটা যখন লিখেছিলাম তখনই বিপুল সাড়া পেয়েছিলাম। কিন্তু ক্রমশ তা একটা সামাজিক দলিল হয়ে উঠেছে। একলা মেয়েদের মুখপাত্র বলতে পারেন। ফলে এখন আর এটা শুধুমাত্র একটা বই হয়েই আটকে নেই। বরং এটা একটা কমিউনিটিতে পরিবর্তিত হয়েছে। আমার বইতে যেসব মহিলার কথা রয়েছে, সারা ভারত থেকে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। একটা এমন জায়গা যা বিপন্ন একক মহিলাদের আশ্রয় হয়ে উঠেছে। আমরা মিটিংয়ের আয়োজন করি। নিজেদের বিভিন্ন ঘটনার কথা আলোচনা করি। একে অপরের বন্ধু হয়ে নিজেরাই নিজেদের ভরসা হয়ে উঠি। প্রয়োজনে কাউকে সাহায্য করি, আবার কারও যদি শুধুই একটা বিশ্বস্ত শ্রোতার প্রয়োজন হয় নিজেকে খুলে ধরার জন্য, তাহলে সেই নীরব শ্রোতা হয়ে তাঁর বা তাঁদের পাশেও থাকি।
এই মহামারী পরিস্থিতিতে আপনারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেন কীভাবে?
সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের একটা অ্যাক্টিভ কমিউনিটি রয়েছে। নাম, স্টেটাস সিঙ্গল। সেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। সেই মাধ্যমে শুরু হলেও যোগাযোগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। তখন আর তা কেবলমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার ওয়ালে আবদ্ধ থাকে না। তা ব্যক্তিগত হয়ে যায়। আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠি। ফোন মারফত নিজেরা নিজেদের খোঁজখবর নিই। এই বছর অক্টোবর মাসে এই প্ল্যাটফর্মেরই একজন মহিলা, সঞ্চারী সিংহ একটা আইডিয়া দিলেন আমাদের। তিনি বললেন, আমরা অনলাইনে এতদিন ধরে সম্পর্ক বজায় রেখেছি যখন, তখন এবার অফলাইনে সেই সম্পর্ক নিয়ে যাওয়া উচিত। তখনই আমরা ভাবলাম সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ফোন পর্যন্ত গড়িয়ে আনা যায় সম্পর্কটাকে। সেই থেকেই আমাদের ফোনালাপ শুরু হয়। প্রতি মাসে আমরা জুম কলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। ক্রমশ দেখলাম আমাদের পরিধি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
কীভাবে?
সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে এই প্যানডেমিকে এমন বহু মহিলা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন যাঁরা একক জীবনের ভালো মন্দ নিয়ে চলছিলেন, কিন্তু প্যানডেমিকে হঠাৎই বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাঁরাও সাহারা খুঁজতে খুঁজতে আমাদের দরজায় কড়া নাড়লেন। আর আমরা তো আছিই একে অপরের সাহায্য করার জন্য। ফলে আমরাও তাঁদের সাদর আমন্ত্রণ জানালাম। প্রয়োজনে টুকটাক সাহায্য করলাম এবং এইভাবেই আমাদের দল আরও ভারী হয়ে উঠল।
তারপর মুখোমুখি হলেন কীভাবে?
ভেঁপুটা বাজিয়েছিল সঞ্চারী। কিন্তু ওর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এল সমগ্র একক নারী সমাজ। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং লখনউয়ের মেয়েরা সঞ্চারীকে সমর্থন করে মুখোমুখি দেখা করার প্রস্তাব রাখল। এতদিনে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরিচিত হয়েছি। ফলে যোগাযোগটাও অনেক গভীরে পৌঁছেছে। এবং সেখান থেকে মুখোমুখি দেখা করাটা একেবারেই কঠিন হয়নি। প্যানডেমিক একটু হালকা হতেই আমরা মুখোমুখি পরিচিত হয়ে উঠলাম।
সমাজে একক নারীর অবস্থান কেমন বলে মনে করেন?
আমি নিজে একক জীবন যাপন করি, এবং কাজের সূত্রে বহু একক নারীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে বুঝেছি সমাজে আমাদের অবস্থান খুবই নড়বড়ে। আমাদের গায়ে একটা অলিখিত অচ্ছুৎ লেবেল সেঁটে রেখেছে সমাজ। একই সঙ্গে আমাদের অসম্ভব স্বেচ্ছাচারীও ভাবা হয়। যখন কলাম লিখতাম তখনই অনুভব করতাম যে, সমাজে নারীর অবস্থানই যথেষ্ট টলমল, তার ওপর আবার সে যদি একা হয় তাহলে তো কথাই নেই। অথচ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভণ্ডামিটা ভাবুন, নিজেদের সুবিধের জন্য তারা আবার আমাদের গায়ে স্বেচ্ছাচারী তকমাও লাগিয়ে রেখেছে। এই নিয়ে কাউকে বলতে গেলে দেখবেন আপনার পুরুষ বন্ধুটিই বলবে, ‘তোদের আবার কী সমস্যা? তোরা তো একা আছিস, সংসার নেই, দায় নেই, দিব্য কাটছে জীবন!’ আবার এই পুরুষতন্ত্রই কিন্তু সুযোগ বুঝে একা মেয়ের ওপর হামলা করে। তো এমন যখন অবস্থা, তখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ভীষণই জরুরি। আর সেই কাজটাই আমি আমার গ্রুপ বা ফোরামের মাধ্যমে করার চেষ্টা করেছি। এত বিপুল সাড়া পেয়ে অবশ্যই অভিভূতও হয়েছি।
সমাজে একক নারীর হাত শক্ত করতে কীভাবে সচেষ্ট থাকেন?
আমরা একে অপরের সমস্যাগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করি। যেমন একজন রয়েছেন যাঁর ডিভোর্সের মামলা দেড় বছর ধরে আটকে রয়েছে। তিনি হন্যে হয়ে একজন ভালো ডিভোর্স লইয়ার খুঁজছেন। আমাদের গ্রুপে নিজের সমস্যার কথা বলতেই সেখান থেকে একজন সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন। তিনি ডিভোর্স লইয়ারের খোঁজ দেওয়া থেকে তাঁর সঙ্গে প্রাথমিক কথা বলা ইত্যাদি সবরকম সাহায্য করলেন। একইভাবে একজন হয়তো তাঁর বয়স্ক বাবা মায়ের জন্য আয়া চাইছেন তখন সেই অঞ্চল থেকে ভালো আয়ার সন্ধান দেওয়া হয় আমাদেরই গ্রুপের মধ্য থেকে। বেঙ্গালুরুর একটা কেস বলি, তাহলে ব্যাপারটা বোঝাতে পারব সহজেই। একজন একক মহিলা লক্ষ্মী, সম্পত্তিঘটিত বিপুল সমস্যায় পড়েছিলেন। তাঁর ভাই এবং ভাইয়ের বউ তাঁকে একা পেয়ে তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছিল। এমন অবস্থায় তিনি গ্রুপে আবেদন করেন। নিজের সমস্যার কথা জানান। সঙ্গে সঙ্গে বেঙ্গালুরু গ্রুপের হেড সুজান তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন। দেখা গেল বেঙ্গালুরু গ্রুপেই তিন তিনজন প্রপার্টি লইয়ার রয়েছে। সুজানের মাধ্যমে তাঁদেরই একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখন লক্ষ্মীর সম্পত্তিঘটিত সমস্যা অনেকটাই সমাধানের পথে। আমার গ্রুপটা যেহেতু খুবই বড়, সেহেতু তার সদস্য সংখ্যাও প্রচুর। ফলে ভারতের যে কোনও জায়গায় আমরা সহজেই পৌঁছতে পারি। এবং সেইভাবেই একে অপরের ডাকে সাড়া দিই। আমরা নিজেরাই নিজেদের ভরসা হয়ে উঠেছি।
মুখোমুখি আলাপ প্রসঙ্গে আবারও ফেরা যাক। প্রথম মিটিংটা কোথায় হয়েছিল?
১৫ অক্টোবর আমাদের প্রথম মিটিংটা হয়েছিল। তিনটে শহরের মেয়েরা একত্র হয়ে মিট করেছিলাম কলকাতার সল্ট হাউজ রেস্তরাঁয়। সেখানে কলকাতার মেয়েরাই প্রস্তাব দেয় বিজয়ার ‘সিঁদুর খেলা’ অনুষ্ঠানটাকে হাইলাইট করা হবে এই মিটিংয়ে। সামাজিক এই পুরুষতান্ত্রিক রীতিটা ভেঙে দেওয়ার সময় এসেছে। এবং একমাত্র মেয়েরাই পারে তা ভেঙে বেরিয়ে আসতে। এয়ো স্ত্রী হলে সে দেবীকে বরণ করতে পারবে আর অবিবাহিত বা বিধবারা পারবে না, এ আবার কেমন রীতি? মা দুর্গা কি শুধুই বিবাহিত মহিলাদের সম্পত্তি? এই রীতিটা ভাঙার জন্যই আমরা একক মহিলারা বিজয়ায় রীতিমতো এক মাথা সিঁদুর পরে, আলতায় পা রাঙিয়ে ঘোমটা টেনে সিঁদুর খেললাম। এবং তারপর আড্ডা ও খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত গড়িয়েছিল অনুষ্ঠান। এই তিনটি শহর মিলিয়ে মোট তিরিশজন মহিলা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা জুম কল ও ভিডিও কলে যোগদান করেছিলেন। এরপর ২৩ অক্টোবর চেন্নাই মিট করল, তারপর ২৪ অক্টোবর মুম্বই মিটিং হল। সেদিনও আর একটা পুরুষতান্ত্রিক অনুষ্ঠান ছিল, করওয়া চৌথ। যেখানে আবারও সেই বিবাহিত মহিলারাই স্বামীর কল্যাণে উপোস করেন। তারপর স্বামীর হাত থেকে জল খেয়ে উপোস ভাঙেন। আমরা সেই নিয়মটাই ভাঙতে চেয়েছিলাম। আর সেই নিয়ম ভাঙার জন্য আমরা সেদিন বিবাহিত মহিলাদের মতোই মেহেন্দি পরে, হাত ভর্তি চুড়ি পরে সেজেছিলাম। আপেক্ষিকভাবে দেখলে এগুলো হয়তো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নয়। তবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এগুলোই আমাদের প্রতিবাদ। এর ফলে যে রাতারাতি সমাজটা বদলে যাবে তা নয়, তবু একটু একটু করে এই প্রতিবাদগুলো জমতে জমতে একদিন বদল আসবেই। এটা আমাদের বিশ্বাস। নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা বা তাঁদের অধিকারের লড়াই কোনওটাই তো একদিনে আসেনি। কিন্তু ক্রমশ সমাজ তো একটু একটু করে হলেও বদলাচ্ছে। সেই বদলের পথ চেয়ে বসে আছি আমরা মেয়েরা। তার জন্য নিজেদের তরফে যেটুকু করার করেই চলেছি প্রতিনিয়ত।
নারীরা কি সত্যিই মানসিকভাবে স্বাধীন?
দারুণ বলেছেন। গলদটা আসলে গোড়ায়। আমাদের সমাজ সেই গলদে হাওয়া দিয়ে চলেছে। আর মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছে পুরুষতন্ত্র। মেয়েরা যুগ যুগ ধরে পুরুষের ওপর নির্ভর করতে করতে নিজেরাই পরনির্ভরশীল হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনচেতা মহিলার সংখ্যা সমাজে খুবই কম। আমরা সেখানেই বদল আনার চেষ্টা করছি। দুষ্টু গোরুর চেয়ে যে শূন্য গোয়াল ভালো সেটাই মেয়েদের মনে গেঁথে দিতে চাইছি। বিয়ে না টিকলে বেরিয়ে আসার সাহস তাদের দিতে চাইছি। নিজের জীবনটা নিজের মতো করে যাপন করার কথাই আমরা বলি। সেই নিয়েই আমাদের যাবতীয় মিটিং, আড্ডা ইত্যাদি। এতে আর কিছু না হোক, একলা যেসব মহিলা থাকেন তাঁরা একটা সাহস পান। অনেকটা বল ভরসার মতো কাজ করি আমরা একে অপরের। আগে যেমন ডিভোর্সি হলে লোকলজ্জার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত মেয়েরা এখন আর ততটা থাকে না। সমাজে নিজের অধিকার যদি মেয়েরা ছিনিয়ে নিতে না পারে তাহলে অবদমিত হতে হবে তাদের প্রতিপদে। আমরা একে অপরকে ভরসা দেওয়ার মাধ্যমে সেই মাথা উঁচু করে বাঁচার কথাই বলি। ডিভোর্সের দায় যে একলা স্ত্রীয়ের নয়, স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনেরই, সেই সত্যটাই সমাজের চোখে তুলে ধরতে চাই। তবে এর জন্য সমগ্র নারী জা.র মানসিক পরিবর্তন প্রয়োজন সেটা অস্বীকার করা যায় না। আমাদের ফোরামে যাঁরা আছেন তাঁদেরকে পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
আগামী দিনে আপনাদের ফোরামের পরিকল্পনা কী?
আমরা প্রতি মাসে একটা করে মিটআপ সেশন রাখব বলে ভেবেছি। এবং সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ থিম অনুযায়ী করা হবে। যেমন সিঁদুর খেলা বা করওয়া চৌথ-এর ব্রত রাখার মাধ্যমে সমাজের কাছে, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা বার্তা দিয়েছিলাম তেমনই প্রতিটি মিটিংয়েই একটা বার্তা থাকবে। নারী উন্নয়নের বার্তা। যেমন নভেম্বর মাসের শেষে গিয়ে আমাদের আগামী সম্মেলনটা হবে কলকাতায়, গঙ্গা বক্ষে। নভেম্বর মাসে ধনতেরস, দেওয়ালি ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে আমরা ব্যবসায়ী মহিলাদের সাফল্য কামনা করে আমাদের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করব। আমাদের নভেম্বর মাসের থিম তাই ‘উইমেন অ্যান্ড ওয়েলথ’। দেশের উল্লেখযোগ্য মহিলা ব্যবসায়ীদের কথা আলোচনা করব এই মিটিংয়ে। আমাদের গ্রুপের মধ্যে যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁদের কথাও বলা হবে। যত ছোট ব্যবসাই হোক না কেন সেটাও তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে আমাদের সমাজে সফল ডাক্তার ও আইভিএফ সেন্টার লিডার ডাঃ ইন্দ্রাণী লোধের যাত্রাটাও তুলে ধরা হবে। আমাদের সমাজে মেয়েরা অনেকেই অর্থনীতির বিষয়টা বোঝেন না। পরনির্ভরতা কিন্তু এখান থেকেই শুরু। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতাই নারী উন্নয়নের প্রধান ও প্রথম ধাপ। সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা করা হবে আমাদের আগামী সম্মেলনে। এইভাবেই আমরা নারী উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে চাই। নারী ক্ষমতায়ন শব্দবন্ধটা এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মেয়েদের কাছে। কিন্তু ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ যে স্বনির্ভরতা, সেটাই অধিকাংশ মেয়ে জানে না। আমরা সামগ্রিকভাবে নারী সমাজের উন্নয়ন এবং একক নারীর স্বাধীনতার কথা বলি। সেই দিনের পথ চেয়ে থাকি যেদিন সমাজের সব মহিলা একজোট হয়ে স্বাধীনতার মুকুট মাথায় পরবে। নারী হয়ে উঠবে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন।
20th November, 2021