বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
আমাদের দেশ ঋষিসেবিত। বহু ত্রিকালজ্ঞ ঋষি আবির্ভূত হয়ে এই ভূমিকে পবিত্র করেছেন, মহাভারত সহ সনাতন ধর্মের বহু শাস্ত্র রচনা করেছেন এবং ব্রহ্মজ্ঞানের বন্যা বইয়ে দিয়ে গেছেন। তাঁরা কখনও মানুষের বর্ত্তমান জন্মটাকে নিয়ে বিচার করেন নি, অতীতের বহু জন্ম, বর্ত্তমান জন্ম এবং আগামী বহু জন্ম, এইভাবে বহু জন্মের দিকে লক্ষ্য রেখে মানুষের কল্যাণ করার চেষ্টা করেছেন। পাশ্চাত্য দেশের মনীষীগণ মানুষের কেবল বর্ত্তমান জন্মের উন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখেই সবকিছু ব্যবস্থা করেছেন। ফলে পার্থিব জীবনের সুখের আলো এবং ঐশ্বর্য্যের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করেছেন। তাই আজ পাশ্চাত্য দেশগুলি অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী। কিন্তু ভারতীয় ঋষিগণ কখনই মানুষকে অতুল ঐশ্বর্য্যের দিকে আকৃষ্ট করেননি। তাঁরা জানতেন যতদিন মানুষ জন্মমৃত্যুর আবর্ত্তে থাকবে ততদিন সুখদুঃখ ইত্যাদি অবশ্যই থাকবে। তাই কি উপায়ে মানুষকে জন্মমৃত্যুর অতীতে নিয়ে যাওয়া যায় তাঁরা তার ব্যবস্থা করেছেন। ঋষিরা অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন; তাঁরা জানতেন মানুষকে যদি অতুল ঐশ্বর্য্যের দিকে ঠেলে দেওয়া যায় তাহলে কখনই মানুষ সুখ দুঃখ হাসি কান্নার অতীতে যেতে পারবে না। তাই তাঁরা সকল শাস্ত্রের মধ্য দিয়ে কি উপায়ে আত্মজ্ঞান লাভ করা যায় তার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা সবসময়ই বলেছেন আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় ঋষিদের চেষ্টা বিফল হয়নি। তাই ভারতের আকাশ বাতাস জল এবং ধূলিকণা সবই আত্মজ্ঞানের চেতনায় ভরপুর। মানুষের রক্ত এবং ধমনীর মধ্যে তাঁরা এই আত্মজ্ঞানের চেতনাকে প্রসারিত করেছেন। তাই ভারতের মানুষ স্থূল ঐশ্বর্য্যে দরিদ্র হলেও আত্মসাধনায় তন্ময়, প্রতিটি ঘরে ঘরে নিত্যপূজা থেকে শুরু করে সমাধিস্থ হবার অপেক্ষায়। ঋষিরা অনন্ত জ্ঞানের অধিকারী হওয়ায় ভাষা সম্বন্ধে ও তাঁদের অনন্ত জ্ঞান ছিল। শাস্ত্রের মধ্য দিয়ে তাঁরা যেসব বাক্য বা শব্দ ব্যবহার করেছেন সেগুলিও অত্যন্ত গূঢ় অর্থবহ এবং অধ্যাত্মচেতনায় ভরপুর। এই আত্মচেতনার দিক থেকে যদি আমরা ভারত শব্দটির প্রকৃত অর্থ অনুসন্ধান করি তবেই এর সঠিক অর্থ জানা যাবে। ঐতিহাসিকেরা বলেন ভরত রাজার নামানুসারে এই দেশের নাম ভারত হয়েছে। এই ধরনের অর্থ কল্পনাপ্রসূত এবং আত্মচেতনাহীন।
ডঃ অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘যোগ প্রবন্ধে ভারতাত্মা’ থেকে