বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
তুমিই বিশ্বের মূল কারণ; অনন্তশক্তিময়ী পরমা বৈষ্ণবীশক্তিরূপিণী মায়াও তুমি; হে দেবি, তোমা কর্তৃক এই সমস্তই সম্মোহিত; তুমিই প্রসন্না হইয়া সংসারে মুক্তির কারণ হও। হে দেবি, নিখিল জগতে সমস্ত বিদ্যা ও পাতিব্রত্যাদি চতুঃষষ্টি-কলামণ্ডিতা সকল নারী তোমারই বিবিধ রূপ; মাতৃরূপিণী একমাত্র তোমাকর্তৃক এই বিশ্ব পরিপূর্ণ; স্তুতিতে প্রযোজ্য গৌণ ও মুখ্য বাক্যাবলীও তুমিই; সুতরাং তোমার স্তুতি কি প্রকারে হইবে?
তোমাকেই যখন সর্বরূপিণী এবং স্বর্গ ও মুক্তি-প্রদায়িনী দেবী-রূপে স্তব করা হইল, তখন তোমার স্তুতির উপযুক্ত আর কি অধিক বাক্য থাকিতে পারে? তুমি বুদ্ধিরূপে সকলের হৃদয়ে অবস্থিতা; তুমি ভোগ ও মুক্তি-প্রদায়িনী; হে দেবি, হে নারায়ণি, তোমায় নমস্কার।
তুমি কলা ও কাষ্ঠাদি রূপে পরিণামের কারণ হইয়া থাক; তুমি জগতের বিনাশসাধনে নিপুণা; হে নারায়ণি, তোমায় নমস্কার। তুমি সকল মঙ্গলবিধাতার মঙ্গলবিধায়িত্রী (বা মঙ্গলের মঙ্গল-স্বরূপিণী), তুমি কল্যাণী, তুমি সর্বাসিদ্ধি-বিধায়িনী, তুমি আশ্রয়দায়িনী, তুমি ত্রিনয়না, তুমি গৌরী; হে নারায়ণি, তোমায় নমস্কার। তুমি সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের শক্তিস্বরূপা; তুমি নিত্যা, তুমি ত্রিগুণের আধার, তুমি গুণস্বরূপা; হে নারায়ণি, তোমায় নমস্কার। তুমি শরণাপন্ন, দরিদ্র ও রোগগ্রস্তের রক্ষায় তৎপর; তুমি সকলের দুঃখবিনাশিনী; হে দেবি নারায়ণি, তোমায় নমস্কার।
সেই অতি বলশালী দুর্বৃত্ত (মহিষাসুর) এবং অসুরসেনা দেবীকর্তৃক নিহত হইলে, ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ প্রণতিভরে গ্রীবা ও স্কন্ধ নম্র করিয়া এবং হর্ষপুলকে সুদর্শনদেহ হইয়া বাক্যোচ্চারণ সহকারে নিম্নোক্তরূপে তাঁহাকে স্তব করিলেন। নিখিল দেবতার শক্তিসমষ্টিরূপ মূর্তিধারিণী যে দেবী নিজ শক্তিপ্রভাবে এই জগতে ব্যাপ্ত রহিয়াছেন, এবং যিনি অশেষ দেবতা ও মহর্ষিগণের পূজিতা, সেই অম্বিকাকে ভক্তিসহকারে আমরা প্রণাম করিতেছি; তিনি আমাদের মঙ্গল বিধান করুন।
যাঁহার অনুপম মহত্ত্ব এবং শক্তির বিষয় বর্ণনা করিতে ভগবান্ বিষ্ণু ব্রহ্মা এবং শিবও অসমর্থ, সেই চণ্ডিকা নিখিল বিশ্ব প্রতিপালনের জন্য এবং অমঙ্গলোত্থ ভয়নাশের জন্য অভিলাষ করুন। যিনি নিজেই পুণ্যবান্দিগের আলয়ে সৌভাগ্যস্বরূপিণী, দুর্বৃত্তগণের গৃহে অলক্ষ্মীরূপিণী, নির্মলচিত্ত ব্যক্তিদিগের হৃদয়ে সুপ্রবৃত্তিরূপা, সাধুদিগের আস্তিক্যবুদ্ধি, এবং সদ্বংশীয়দিগের লজ্জাস্বরূপিণী, সেই তোমাকে প্রণাম করিতেছি; হে দেবি, জগৎ পরিপালন কর। হে দেবি, তোমার এই অচিন্ত্য রূপ কি প্রকারে বর্ণনা করি, তোমার অসুরবিনাশী প্রভূত অনুপম শক্তি কিরূপে বর্ণনা করি, এবং যুদ্ধসমূহে অসুর ও সুরসৈন্য মধ্যে তোমার অলৌকিক কৌশলসমূহই বা কিরূপে বর্ণনা করি? নিখিল বিশ্বের মূল কারণ এবং সত্ত্ব রজঃ ও তমঃ-গুণময়ী হইয়াও দুষ্ট-লোকের দ্বারা তুমি জ্ঞাত (বা দোষ দ্বারা তুমি দুষ্ট) হও না; তুমি বিষ্ণু ও শিব প্রভৃতিরও অজ্ঞেয়া, কেন না তুমি সকলেরই আশ্রয়; এই নিখিল বিশ্ব তোমারই অংশমাত্র; তুমি স্বয়ং নাম ও রূপের দ্বারা অনভিব্যক্তা মূলা শাশ্বতী প্রকৃতি।