সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
কালী দর্শনের পর থেকেই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ঘর, বাড়ি, ঘটি, বাটি, দরজা, জানলা চতুষ্পার্শ্বের সবকিছুই শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে চৈতন্যময় হয়ে উঠেছিলেন। এই দিব্য অবস্থায় বালরামচন্দ্রের এক অষ্টধাতুর মূর্তি জাগ্রত হয়ে গিয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে।
দক্ষিণেশ্বরে জটাধারী নামে এক শ্রীরামের উপাসক বৈষ্ণব সাধু এসেছিলেন। জটাধারীর সমগ্র মন প্রাণ শিশু রাম বা রামলালার ছোট্ট একটি অষ্টধাতুর মূর্তিতে নিবদ্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পূজার পর বাবাজী অনুভব করলেন রামলালার বিগ্রহমূর্তি জীবন্ত হয়ে তাঁর কাছে খেতে চাইছেন। আবার বেড়াতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছেন, অথবা কোন কিছু চেয়ে আব্দার করছেন প্রেমভক্তিতে জাগ্রত জীবন্ত মূর্তিটি। মূর্তির সঙ্গে বাবাজীর সদানন্দ দিব্য সম্পর্ক দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ আকৃষ্ট হলেন ঐ মূর্তির দিকে। দিনে দিনে শিশু রামলালার প্রতি শ্রীরামকৃষ্ণের এক গভীর অপত্য স্নেহ দেখা দিল–যেন শিশু রামের প্রতি কৌশল্যার স্বতঃপ্রণোদিত মাতৃস্নেহ। ধীরে ধীরে রামলালার এই মূর্তি পূজার জন্য শ্রীরামকৃষ্ণ জটাধারীর কাছে রাম মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন।
এবার রামলালাকে নিয়ে একের পর এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা শুরু হল শ্রীরামকৃষ্ণের বাৎসল্য ভাবের সাধনে। উত্তরকালে শিষ্যদের কাছে এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেবার সময় ঠাকুর বলেছিলেন, “যতক্ষণ আমি বাবাজীর কাছে থাকতাম, রামলালা আনন্দে খেলা করতো, কিন্তু যেই বাবাজীর ঘর ছেড়ে আমার ঘরে ফিরে আসতাম, আমি প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও রামলালা আমাকে অনুসরণ করে আমার ঘরে চলে আসতো। প্রথম প্রথম ভাবতাম এ আমার দেখার ভুল। ভাবতেই পারতাম না রামলালা
কি করে তাঁর চেয়ে বেশি ভালোবাসবে আমাকে? আমি সত্যি সত্যিই দেখলাম রামলালা ধীরে ধীরে বাবাজীকে ছেড়ে আমাকে ঘিরে আনন্দে নাচছে, কখনও আব্দার করে আমার কোলে উঠছে, পরক্ষণেই কোল থেকে নেমে লাফিয়ে এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে বা বাগানে গিয়ে ফুল তুলছে। কখনও গঙ্গায় নেমে জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটছে। কত বোঝাতাম, বাবা এরকম কোরো না, রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে পায়ে ফোস্কা পড়বে, এতক্ষণ জলে খেলা করলে সর্দি হবে, ঠাণ্ডা লাগবে। কে কার কথা শোনে! আমি যেন অন্য
কাউকে বলছি। কখনও কখনও তাঁর দুই পদ্ম পলাশ আঁখি মেলে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকবে বা ঠোঁট বেঁকিয়ে ভেংচি কাটবে। আমি তখন সত্যিই রেগে যেতাম, খুব বক্তাম। বলতাম, দুষ্টুমণি রোসো! এমন কিল মারব যে হাড়গুলো গুঁড়ো হয়ে যাবে। হাত ধরে টেনে হিড়হিড় করে রামলালাকে টেনে আনতাম কখনও জল থেকে, কখনও রোদ্দুর থেকে। হাতে কিছু ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘরের ভেতরে খেলতে বলতাম। মাঝে মাঝে যখন খুব দুষ্টুমি করতো আমি দু-এক ঘা চাপড়ও মেরে দিতাম। ছোট্ট রাঙা
ঠোঁট দুটি উল্টে তার কি কান্না, জলভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো, যতক্ষণ না তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়ে শিশুর অভিমান ভাঙাবো। সত্যি সত্যি রামলালার সঙ্গে আমি এইভাবে খেলেছি।”