সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
বাউলমতে পরমার্থ তত্ত্বের নাম ‘সহজ। এঁকে ‘সহজ মানুষ বা ‘নিত্যের মানুষ’ বলেও অভিহিত করা হয় এবং তিনি হলেন অপ্রাকৃত নরাকার।
বাউলমতে এক অদ্বৈত পরমতত্ত্বই নিত্যযুগলরূপে স্ব-স্বরূপে স্বধাম নিত্য-বৃন্দাবনে বিরাজমান। ঐ একই তত্ত্ব নিত্যকৃষ্ণ এবং নিত্যধারা যা নিত্যবৃন্দাবনে যুগলভাব ধারণ করে বিরাজিত আছেন।
এই পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ চিরকিশোর এবং পরমাপ্রকৃতি শ্রীধারা চিরকিশোরী। বাহ্যতঃ শ্রীকৃষ্ণ পুরুষ এবং শ্রীধারা প্রকৃতি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত ভাবটি অন্যরূপ। সেখানে একই অদ্বৈত-মহাচৈতন্য লীলারস মাধুর্য আস্বাদন করবার নিমিত্তে লীলাবশে বাহ্যতঃ দুটি রূপ ধারণ করেছেন মাত্র। অর্থাৎ একই আত্মায় দুটি দেহ নিত্য মিলিত-যুগপৎ ভেদ ও অভেদরূপে। নিত্যস্বরূপে অভেদ এবং লীলারূপে ভেদ। আর এই লীলা অনাদি-অনন্ত।সুতরাং লীলাও সত্য,নিত্যও সত্য।
দৃষ্টান্ত স্বরূপঃ—
‘ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে।
পূর্ণস্য পূর্নমাদায় পূর্নমেবাবশিষ্যতে।।’
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।।
বাউলগণ বলেন-ব্রহ্মতত্ত্ব বা ঈশ্বরতত্ত্ব যদিও দুর্গম তথাপি তা ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু মানুষতত্ত্ব অতি অদ্ভুত এবং ইহা বোধ করাও অতি দুরূহ। অধিকারী ভিন্ন অন্য কেহ এই তত্ত্ব বুঝতে সক্ষম হয় না।
নিত্যধাম বা সহজপুরে চিরকিশোর-কিশোরী শ্রীরাধাকৃষ্ণ রত্ন সিংহাসনে বিরাজমান। আর ঐ নিত্যধাম হল নিত্যবৃন্দাবন, যা বিরজার পরপারে অবস্থিত।
বাউলমতে মানুষ তত্ত্বের তিনপ্রকার ভেদ,যথা—(১)সহজ মানুষ, (২) অযোনিজ মানুষ এবং (৩)সামান্য মানুষ বা যোনিজ মানুষ।
সহজ মানুষ বিরাজ করেন নিত্যবৃন্দাবনে যা অপ্রাকৃত চিন্ময় এবং বাউলমতে সহজপুর।
এখানে তিনি আপন স্বরূপশক্তি হ্লাদিনী অর্থাৎ শ্রীরাধা সহকারে অবস্থান করেন এবং নিত্য নব নব লীলারস মাধুর্য আস্বাদন করেন।
অযোনিজ মানুষ বিরাজ করেন বৈকুন্ঠেতে। এটা ভাব জগৎ বা অধ্যাত্মজগৎ। এখানে তিনি লীলাময় নারায়ণ ও শ্রীলক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে বিরাজ করছেন। চতুর্ভুজ নারায়ণ এবং শ্রীলক্ষ্মীদেবী বৈকুণ্ঠে অনন্তশয্যায় শায়িত রয়েছেন। তাঁরা নারদাদি ভক্তগণ এবং অসংখ্য মোক্ষপ্রাপ্ত মুক্তগণ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন।
আর সামান্য মানুষ অর্থাৎ যোনিজ মানুষ বিরাজ করেন ক্ষীরোদসাগরে—এটা হল জন্ম-মৃত্যুর অধীন স্থূল জড়জগৎ। ইনি জীবন ও মৃত্যুতে গমনাগমন করেন অর্থাৎ স্থূল বিশ্বে যাতায়াত করেন। এই সামান্য মানুষই স্থূল বিশ্বে সর্বত্র বর্তমান।
বাউলগণ বলেন—এই বর্তমান মানুষের মধ্যেই ‘সহজ মানুষ’ আছেন। অর্থাৎ বর্তমান রূপের মধ্যে অবর্তমান বা নিত্য বর্তমান স্বরূপের স্থিতি আছে। এটা অতি গূঢ় এবং সহজে অনুধাবনযোগ্য নহে। ঐ সহজ মানুষ অযোনিজ মানুষও নন এবং মানুষও নন। তিনি কেবল নিত্যবৃন্দাবন সহজপুরে বিরাজিত।
এই সহজপুরে বা নিত্যবৃন্দাবন সৃষ্টির অন্তর্গত নয়। তার উন্মেষ হয় রাগে অর্থাৎ রাগানুগা ভজনে।
বাউলমতে শব বা মৃততনু হতে না পারলে প্রেমের বাতাস লাগে না আর প্রেমের বাতাস না লাগলে সহজ মানুষ আবির্ভূত হন না। সেইজন্য এই সহজ মানুষকে বিধাতার সৃষ্টিতে পাওয়া যাবে না। সহজ ভজনেই কেবলমাত্র এটা বোধেবোধ হয়।