সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
হিন্দুরা মানব-ব্যক্তিত্বকে সংহত দেহ-চিত্তাত্মকরূপে দেখেন না। তৎপরিবর্তে, তারা দেহকে চৈতন্যস্বরূপ আত্মার আধার বা যন্ত্র বলে মনে করেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে, যেমন চক্ষু দর্শনের, নাসিকা ঘ্রাণের ও কর্ণ শ্রবণের যন্ত্রবিশেষ। উপনিষদে আছে, ‘আত্মাই বিজ্ঞাতা’, “চিত্ত ভাগবত চক্ষু”—জ্ঞানের যন্ত্রস্বরূপ। মানুষের ব্যক্তিত্ব জিনিসটি বস্তুতঃ বড়ই জটিল। মানুষ যথার্থ-স্বরূপে আত্ম-চেতন আধ্যাত্মিক সত্তা,পরম পুরুষের শাশ্বত অংশবিশেষ। এই ব্যষ্টি-আত্মা বা জীবাত্মা মন-ও ইন্দ্রিয়বিশিষ্ট সূক্ষা-শরীরে অবস্থিত এবং স্থূল দেহে আবৃত ; কিন্তু বিশ্ব-আত্মা বা পরমাত্মা এতদুভয় হতে স্বতন্ত্র। মন স্পন্দনাত্মক সূক্ষা পদার্থ। ভগবদ্গীতায় অর্জুন বলেছেন যে, মন চঞ্চল, প্রমাথী, বলবান ও দৃঢ়। এই মনের নিগ্রহ বায়ুর নিগ্রহের মতোই দুষ্কর। শ্রীকৃষ্ণ এর উত্তরে বলেছেন, মন চঞ্চল এবং একে সংযত করা কঠিন, সন্দেহ নেই; কিন্তু একে নিয়মিত অভ্যাসের দ্বারা আয়ত্তে আনা যেতে পারে, আর এর মূল উপায় বৈরাগ্য বা অনাসক্তি।
দেহকে জলাবর্ত ও মনকে ঘূর্ণিবায়ুর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অথবা, পতঞ্জলির ভাষায়, একটি স্থিরবক্ষ সরোবরে ঢেউ উঠলে যেরূপ হয় চিত্তেরও তাই রূপ। বাইরের দ্রব্য বা ভাব বহিরিন্দ্রিয়গণকে উদ্রিক্ত করে, এই ইন্দ্রিয়গুলি আবার অন্তরিন্দ্রিয়সমূহ ও জীবাত্মাকে প্রভাবিত করে। তারপর তরঙ্গাকারে প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে। চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছাকে পরস্পর পৃথক করা যায় না। প্রত্যেক চিত্ততরঙ্গে এই তিনটি অংশের সব কয়েকটিই কম-বেশি বর্তমান থাকে। মোট তরঙ্গটির স্বরূপ তার প্রধান অংশের দ্বারা নির্ধারিত হয়। তরঙ্গগুলি প্রবলতরভাবে মস্তিষ্ককে আঘাত করলে চিন্তা এবং হৃদয়কে আঘাত করলে অনুভূতি উদ্ভূত হয়। ইচ্ছার বেলায় প্রতিক্রিয়াটি এই দুইয়ের মাঝামাঝি সীমাবস্থায় থাকে। চিত্তগুহাশায়ী আত্মা প্রতিনিয়তই এই চিন্তা, অনুভূতি ও ইচ্ছার তরঙ্গ-পরম্পরার পশ্চাতে প্রচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন। কতিপয় আধুনিক মনোবিজ্ঞানী আবিষ্কার করেছেন যে, তাঁদের রোগীদের গোলযোগের কারণ সাধারণতঃ এই সকল চিত্ততরঙ্গের সঙ্গে একাত্মতাবোধ। কিন্তু এখনো অধিকাংশই মনকেই মূল বলে ধরে আছেন এবং মনকে অবচেতন সত্তা বলে মনে করেন।
পক্ষান্তরে, হিন্দু-মনীষীরা আত্মিক চৈতন্যকেই মূলরূপে গ্রহণ করেছেন। তাদের মতে, মনও একটি ‘কোষ’ মাত্র এবং এটি আত্মাকে আবৃত করে। অথবা, মনকে আত্মার পরিধেয় বস্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। অপ্রবুদ্ধ অবস্থায়, আত্মা নানাপ্রকারের গোচরীভূত ও অনির্জ্ঞাত সংস্কারের সঙ্গে ঐক্যবোধ করে থাকে, আর এই সংস্কারগুলি চিত্তসরোবরকে কলুষিত ও আলোড়িত করে। আত্মাকে সব সময়ই অশান্ত তরঙ্গমালার সঙ্গে অভিন্ন বলে ধরা হয়। আমাদের জাগ্রদাবস্থায় এই তরঙ্গগুলি সর্বক্ষণই উঠতে থাকে।