সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
যতই অবধারিত সুনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় ততই দূরত্বটা বৃহত্তর হতে থাকে—কেননা, এসব এমন এক জগতের অতীন্দ্রিয় দর্শন যা মূল উৎসের কাছাকাছি এবং যে সত্য ঘটতে চলেছে আর তার উপলব্ধির মাঝে সুদীর্ঘকাল সময় লাগতে পারে। কিন্তু সত্যের প্রকাশ সুনিশ্চিত—কেননা তা যে মূল উৎসের নিকটবর্তী। এমন একটা স্থান আছে—যখন কেউ পরমের সাথে এক হয়ে যায় তখন সে অতীতের, বর্তমানের এবং ভবিষ্যতের ও সর্বত্রের সমস্ত কিছুই সম্পূর্ণভাবে জানতে পারে। কিন্তু সচরাচর যে সব মানুষ সেখানে পৌঁছায় ও সেখান থেকে ফিরে আসে, তারা যা দেখেছে তা বিস্মৃত হয়ে যায়। স্মৃতির জন্য রীতিমত কঠিন আত্মসংযম একান্ত প্রয়োজন। আর এ হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখানে কেউ কোনও ভুল করতে পারে না।
প্রশ্ন: সূক্ষ্ম শারীর স্তরে যখন কোন ঘটনা ইতিমধেই সংঘটিত হয়েছে ও তা তুমি দর্শন করেছ—তখন কি তাকে পরিবর্তনে খুব বিলম্ব হয়ে গেছে? তা সত্ত্বেও তখন কি তার উপর কোন কাজ করা যেতে পারে?
এ সম্বন্ধে আমি একটা খুব চিত্তাকর্ষক উদাহরণ জানি। তখনকার দিনের দৈনিক সংবাদপত্র— ‘‘ল্য ম্যঁতা’’ (সে অনেকদিন আগের কথা, তখন তোমরা শিশু) ছিল, সেই পত্রিকায় প্রতিদিন একটা ছোট্ট ছেলের স্কেচ থাকত—ছেলেটি তার আঙ্গুল দিয়ে (কোনও রাজ পরিবারের চাকর বা হোটেল বয়ের মতন পোষাক পরা) কোনও কিছু যেন দেখাচ্ছে। এই ধরনের একটা ছোট্ট স্কেচ। যে ভদ্রলোকটিকে নিয়ে আমার গল্প তিনি ভ্রমণে বেরিয়েছেন—থাকেন একটা খুব বড় হোটেলে। এখন আর আমার মনে নেই কোন্ শহরে এই ঘটনা ঘটেছে আর তখন রাত্রি না খুব ভোর জানি না। তিনি একটি স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নে তিনি দেখলেন যে হোটেলের বালক তাকে এক শবযানের (ইউরোপে যে গাড়ী করে মৃত দেহ নিয়ে যাওয়া হয়) মধ্যে যেতে বলছে। এই স্বপ্নটি দেখার পর সকালবেলা তিনি যখন ঘর থেকে বাইরে পেরিয়ে আসছেন তখন এসে দেখেন সেই স্বপ্নে-দেখা হোটেল বয়টিকে...সেই একই রকমের দেখতে, একই রকম পোষাক পরা...বয় ভদ্রলোকটিকে লিফ্টের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে নীচে নামতে বলছে। লোকটির কামরা ছিল খুব উপরতলায়। এই রকম দৃশ্য দেখে লোকটি মনে মনে বেশ আঘাত পান। তিনি লিফ্টে নামতে রাজী হলেন না আর ছেলেটিকে জানান, ‘‘না, ধন্যবাদ।’’ ঠিক পরেই সেই লিফ্ট পড়ে গিয়ে ভেঙে একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। তার ভিতরে যে সব আরোহী ছিল কেউ আর বাঁচেনি। সেই ভদ্রোলোকটি স্বয়ং আমাকে জানিয়েছিলেন যে এই দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি স্বপ্ন খুব বিশ্বাস করতেন।
এটি ছিল সূক্ষ্ম দর্শন। তিনি ছেলেটিকে দেখেছিলেন আর লিফ্টের পরিবর্তে দেখেছিলেন শব বহনের গাড়ি—যা ছেলেটি ভদ্রলোকটিকে দেখিয়েছিল। তারপর যা যা ঘটেছে তা হুবহু স্বপ্নের মত। সেই কারণেই হোটেল বয়কে তিনি বলেছিলেন—‘‘না—ধন্যবাদ! আমি হেঁটেই নিচে নামছি।’’ তারপরই মেসিনটি (এটি ছিল হাইড্রোলিক লিফ্ট) হঠাৎ পড়ে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গেল। সব ঘটনাই ঘটেছিল উপরতলায়—কাজেই সমস্তকিছুই তালগোল পাকিয়ে গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল।
এই স্বপ্ন সম্বন্ধে আমার ব্যাখ্যা হচ্ছে—কোনও একটি সত্তা ভদ্রলোকটিকে আগে থেকেই সতর্ক করে দিয়েছিল। আর শব বহনের গাড়িটির ছবি যেন কিছুটা ভাবিয়ে তোলে—তাই বুদ্ধিমত্তা বা ভদ্রলোকটির চেতনা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। লোকটির অবচেতনার মনে হয় না কিছু করেছে।
শ্রীঅরবিন্দ ও শ্রীমায়ের বাণী সংকলিত ‘নিদ্রা ও স্বপ্ন’ থেকে