সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
করুণাময়ী আনন্দময়ী মায়ের সাথে স্থূলতঃ আমার যোগাযোগ ১৯৫৮ সনের মে মাসে। শিশুকাল থেকে আমার মধ্যে সুন্দর সব স্বপ্ন, দেবদেবী সম্বন্ধে দেখা, ও পূজা করার একটা সংস্কার ছিল। আমার বাবা-মা’র ধর্মজীবন আমাকে অনুপ্রাণিত করত।
সাধু-মহাত্মা-দর্শন করার আগ্রহ শিশুকাল থেকেই আমার মধ্যে ছিল তাই নিতান্ত কৌতূহল বশবর্তী হয়ে আনন্দময়ী মায়ের নাম শুনে দর্শন লালসায় গিয়েছিলাম। তখন মা’র সম্বন্ধে আমি কোনো কিছুই জানতাম না। শুনলাম নির্মল চক্রবর্তী মহাশয়ের বাড়ীতে মা এসেছেন ভাগবত সপ্তাহ উপলক্ষে। আমি তখন সার্দান এভিন্যুতে ছিলাম। আমার বাবা মা ছোট বোনের সঙ্গে আমি মাতৃদর্শনের জন্য গিয়েছি। অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ জয়ধ্বনি-মা এসেছেন। গাড়ী থেকে শুভ্রবসনা এক নারীমূর্তি ক্ষিপ্রগতিতে গৃহস্বামীর সঙ্গে উপরে চলে গেলেন। আমার ধারণা ছিল গৈরিকবসনা কোন সাধু হবেন। শুনলাম শ্বেতবসনা উনিই মা আনন্দময়ী। সকলে ছুটছেন প্রণাম করতে, দেখাদেখি আমিও প্রণাম করতে গেলাম। মাঝপথেই বাধা, পা ছোঁবেন না। দূর থেকে সকলে নমস্কার করলাম। বাবা মাকে নিয়ে বোন চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছু অনুভব এলো না। শুধু মনে হল এ গতি কি মানুষের? কৌতূহল আরো তীব্র হল। দাঁড়িয়ে রইলাম সেই শুভ্রবসনা জননীকে দেখার আগ্রহে। কিছুক্ষণ পর দেখি তিনি আবার নেমে আসছেন, আমিও সিঁড়ির দিকে এগোলাম। তখন ভিড় অনেক কমে গিয়েছে। আমি প্রশ্ন করলাম, আপনার পা ছুঁতে দেয় না কেন? মিষ্টি হেসে উজ্জ্বল চোখে আমার দিকে অল্পক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। আমি দেখলাম মায়ের চোখ দিয়ে একটা নীল আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে, মা যেন আমার ভেতরটা দেখে নিলেন। মুহূর্তের মধ্যে সেই নীল আলো অন্তর্হিত হল। জানি না সে দৃষ্টিতে কি ছিল। মন প্রাণ একটা আনন্দের স্রোতে ভেসে গেল। আধো আধো ভাবে বললেন “ওরা দেয় না।”
ভিড় বেড়ে উঠল, মা এগিয়ে গেলেন। শ্রীচরণ ছুঁতে দেবে না শুনে মনে ভয়ানক আঘাত লেগেছিল, ভেবেছিলাম আমরা কি এতই পাপী যে মায়ের চরণ ছোঁবার যোগ্যতা নেই। কিন্তু সেই দীপ্তিভরা চোখের চাহনি ও মিষ্টি হাসির কাছে সবকিছু অভিমান ধুয়ে মুছে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার দর্শন হল সিঁড়িতে। ২/৪ জন নানারকম কথা, বাড়ী কেনার কথা বলছেন। ঠিক ক’দিন আগেই আমাদেরও একটা ছোট্ট জমির বায়না হয়েছে। ওদের দেখাদেখি আমিও বলে ফেললাম, “মা, আমরাও একটা ছোট জমি কিনেছি।” ঘরোয়া মায়ের মত মা বললেন, “কোথায়?” আমি বললাম বালিগঞ্জ গোলপার্কের কাছে। মা বললেন, “খুব ভাল।” পরে যে মা আমার এই দীন কুটিরে দু’বার আসবেন সেকথা তখন কল্পনাও করতে পারিনি। রাত্রে বাড়িতে ফিরে স্বামীকে সব ঘটনা বললাম। কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করলাম না। ঘরে আমার মন বসে না, সেই মণ্ডপ যেখানে মা বসেন, আমায় দুর্নিবার বেগে টানে। কোনরকমে সংসারের কাজ করে বাচ্চা ছেলেমেয়ের ব্যবস্থা করে ওদের কাজের মেয়েটির কাছে রেখে আমি পাগলের মত চলে যাই। খেতেও ভাল লাগে না মনে হয় সময় নষ্ট হচ্ছে। বিকেলে গিয়ে দেখলাম মাকে বহু লোক মালা দিচ্ছে, মা-ও হেসে হেসে অনেক মালা পরিয়ে দিচ্ছেন। প্রণামের দলে ভিড়ে গেলাম। আমি কিন্তু প্রথমে দিদিমাকে প্রণাম করলাম, কারণ তিনি তো মায়ের মা। মাকে প্রণাম করলাম কৃপাঘন দৃষ্টিতে তাকালেন কিন্তু মালা দিলেন না। পরদিন আবার গেলাম নিজে মালা দিলাম তাও দিলেন না। বাড়ীতে ফিরতে রাত হয়।
বাসন্তী মৈত্রের ‘মূর্ত্তিময়ী কৃপা মা আনন্দময়ী’ থেকে