সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
‘‘অভিমানং সুরাপানং গৌরবং রৌরবং ধ্রুবম্।
প্রতিষ্ঠা শূকরীবিষ্ঠা ত্রয়ং ত্যক্ত্বা হরিং ভজেৎ।।’’
নেশা করলে মানুষ বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়। নেশা তাই সবচেয়ে খারাপ। সুরাপানকে এজন্যে সবচেয়ে খারাপ মনে করা হয়। তেমনি সম্মান লাভের পিপাসা বা নেশাও খারাপ। সেই ভদ্রলোক (Gentleman) যে প্রতি-নমস্কারের প্রত্যাশা না করেই সকলকে নমস্কার করে। এর জন্যে তোমরা মনে রাখবে—
‘‘তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।
অমানিনং মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ।।’’
বিনয় প্রদর্শন করলে মানুষ ছোট হয় না—বড়ই হয়। মা ছেলের পায়ের নীচে থাকলেও মায়ের অসম্মান হয় না। ধরিত্রী মাতা তো সবার নীচে, কিন্তু তাতে তার ইজ্জত কমেনি। নিজেকে তৃণবৎ জ্ঞান কর। তাদের মত সহিষ্ণু হও। সহিষ্ণুতা বৈয়ষ্টিক জীবনের বড় সম্পদ। ক্ষমা করতে শেখো। তবে এই ক্ষমা ব্যষ্টিগত জীবনে করতে পার, কিন্তু সামূহিক জীবনে কাউকে ক্ষমা করার অধিকার তোমার নাই। ভারতকে কেউ আক্রমণ করলে প্রতি-আক্রমণ করতে হবে। বৈয়ষ্টিক জীবনে ক্ষমা বিরাট গুণ, সামূহিক জীবনে বিরাট দোষ।
যাকে কেউ নমস্কার করে না তুমি তাকে নমস্কার করবে। এতে মন শান্ত ও নির্মল হবে। নির্মল মনেই বৈকুণ্ঠের প্রতিষ্ঠা হয়।
যখন কাজ থাকে না, তখনই লোকে অকাজ-কুকাজ করে। মনকে যখন অন্য খাদ্য দিতে পারছ না তখন পাঁচজনে মিলে হরিকীর্তন শুরু কর। ‘‘কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ’’।
কীর্তনে মন নির্মল হয়, সাধনায় স্পিড বেড়ে যায়। তাই সুযোগ পেলেই দশ-বিশ জন মিলে নাম কীর্তন করে নেবে।
পরম পুরুষের অজস্র নাম, কিন্তু সাধকের কাছে একটিই নাম। ভগবানের এক নাম হরি। এই হরির সঙ্গে সাধকের সম্পর্ক হ’ল বৈয়ষ্টিক, একেবারে পারিবারিক। তিনি আদালতের বিচারক নন, বিচার-ব্যবস্থা সমাজের জন্যে। সাধকজীবনে ঘাবড়াবার কিছু নেই। সমাজের কাছে যে হীন, পরম পুরুষের কাছে সে পবিত্র পুষ্প।
পরম পুরুষের এক নাম হরি এ জন্য যে তিনি জীবের পাপ হরণ করেন। আমরা তাকেই চোর বলি যে জিজ্ঞাসা না করে অপরের জিনিস গ্রহণ করে। পরম পুরুষ না বলে জীবের পাপ হরণ করেন। এ জন্যই তিনি হরি।
তোমরা জান যে কলকাতায় অল্প কিছুদিন আগে বলা হয়েছিল ‘সংগ্রামে বেপরীতৎং’—সংগ্রামে বিপরীত ভাবধারা থেকে সহায়তা নেওয়া উচিত। ঠিক ওই রকমই মানব মনে যে দোষ আছে, কল্মষ-কলুষ আছে, সে সব থেকে বাঁচতে হলে বিপরীত ভাবধারা নেওয়া প্রয়োজন, বিপরীত ভাবধারার অধ্যারোপ করা প্রয়োজন। যেমন ধরো কারোর উন্নতি হচ্ছে দেখে মনে ঈর্ষার জ্বালা শুরু হয়ে গেল, হিংসার উৎপত্তি হ’ল। তা থেকে বাঁচতে গেলে মনে কী ভাবনা নিতে হবে? —না, ‘‘ও তো আমার বন্ধু, ওর উন্নতি হচ্ছে, সে তো আনন্দের কথা’’ অর্থাৎ বিপরীত ভাবধারা।
কেউ সৎকর্ম করছে দেখে মনে জ্বলন হওয়া উচিত নয়; যদি হ’ল তা ঠিক করার জন্যে ওই সৎকাজে রত মানুষটিকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। বলা উচিত, ‘‘হ্যাঁ ভাই, তুমি তো খুব ভাল কাজ করছ।’’ এটাই নিয়ম।
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘ভক্তিরস ও কীর্তনমহিমা’ থেকে