উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
১৯৪৭-এ পুরনো ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। মুসলিম জাতিসত্তার জিগির তুলে পাকিস্তান তৈরি হলেও দেশটি বেশিদিন তার ভূগোল ধরে রাখতে পারেনি। মাত্র আড়াই দশকের ভিতরে দেশটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ (পূর্ববঙ্গ)। ধর্মীয় মৌলবাদের জিগির পরাস্ত হয় বাঙালিদের ভাষাগত পরিচয়ের কাছে। ভারতের পূর্ব দিকে আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র। সারা পৃথিবী জানে, গত সাত দশকে পাকিস্তানের মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ কী জিনিস তা একটি দিনের জন্যও পরখ করে দেখতে পারেননি। উগ্র মৌলবাদকে সামনে রেখে পাকিস্তানে গোড়া থেকেই ক্ষমতা ভোগ করে চলেছে সেনা বাহিনী আর সে-দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে পাকিস্তানে মাঝেসাঝে ভোট অবশ্য হয়। যেমন কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসানো হয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা ইমরান খানকে। কিন্তু, এইসব নির্বাচন যে প্রহসনেরই সর্বোচ্চ প্রদর্শন তা পাকিস্তানবাসীমাত্রই জানেন। শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও তিনি শহিদ হওয়ার পরই দেশটি পাকপন্থীদের খপ্পরে চলে যায়। পাকিস্তানের বরাবরের স্বপ্ন স্বাধীন বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তান বানিয়ে রাখে। তাদের সেই চেষ্টায় কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু, স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুব্ধ জাগ্রত সাহসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না পাকিস্তান। আধুনিক বাংলাদেশিদের বরাবরের চাহিদা গণতন্ত্র। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের বিপুল সমর্থনে শেখ হাসিনা সেদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। পাকপন্থীদের খপ্পর থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। বাংলাদেশে এখন সাফল্যের সঙ্গে চলছে নির্বাচিত সরকার। এই বাংলাদেশ ভারতের গণতন্ত্র দ্বারাই অনুপ্রাণিত। ক্রমশ পিছতে থাকা পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের ক্রমোন্নতির তুলনা করে দেখছেন বাংলাদেশের মানুষ—কোন পথ শ্রেয় আর কোন পথ বর্জনীয়। তুল্যমূল্য বিচারে ভারত সবসময়ই এগিয়ে। নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পিছনেও রয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রেরণা। ভারত গণতন্ত্র এবং সুস্থ সুন্দর প্রতিবেশীতে আস্থাশীল। তাই ভারত সবসময়ই বাংলাদেশ এবং নেপালের গণতন্ত্রের প্রতি শুভকামনা রাখে। পাকিস্তানেও যদি কোনও দিন প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসে, হলফ করে বলা যায়, সেই সাফল্য সবার আগে অভিনন্দিত হবে ভারতের দিক থেকে, সবচেয়ে খুশি ও সুখী অনুভব করবে ভারত। গণতন্ত্র ছাড়া এই উপমহাদেশে শান্তি সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। গণতন্ত্রই এই উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ বলে মনে ভারত।
উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের দরবারে ভারতের মাথা এতটা উঁচু হওয়ার নেপথ্যশক্তি তার মজবুত গণতান্ত্রিক ভিত্তি। গণতন্ত্রের এই ভিত আরও শক্ত করার প্রয়োজনে ভারত কত দূর যেতে পারে তা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে একটি ছোট্ট ঘটনাই যথেষ্ট। অরুণাচল প্রদেশে চীন সীমান্তের ছোট্ট গ্রাম মালোগাঁওয়ে একজনমাত্র ভোটার। তাঁর একার ভোট নেওয়ার জন্যই সেখানে বুথ তৈরি করা হয়। ৩,৬০০ ফুট উঁচুতে হাওয়াই শহর। সেখান থেকে ৪৮৩ কিমি দূরে মালোগাঁও। এই দুইয়ের মাঝে অতি দুর্গম পথ। তার কোথাও তীব্র খরস্রোতা নদী আর গহন অন্ধকার জঙ্গল। একজন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে ভোটকর্মীরা ইভিএম এবং ভোট প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত ৬৭টি সামগ্রী নিয়ে সেখানে পৌঁছান টানা চারদিনের চেষ্টায়। ছিল নিয়মমতো প্রহরাও। বস্তুত এক দুঃসাহসিক অভিযানই। সোকেলা তাওয়াং নামে সেই ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র দেখেই ১১ এপ্রিল যথানিয়মে ভোট নেওয়া হয়। ভোট দিতে পেরে বেজায় খুশি সোকেলা এরপর উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন। এই হল ভারতের গণতন্ত্রের চেহারা। দেশ গঠনে একজন নাগরিকের মতের মূল্য এখানে এতটাই। সারা পৃথিবী এই কারণেই তাকিয়ে আছে এই ভোটের দিকে। নির্বাচনে আরও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলিরও উচিত এই সত্যটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা।