উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
এ হল মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠও বেশ হতাশাজনকই। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েকে কারিগরি কিংবা সাধারণ ডিগ্রি কলেজে পড়ানোর পিছনে বাবা-মায়ের মূল লক্ষ্য থাকে ভদ্রস্থ একটা চাকরি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সেই জগতটাও অন্ধকারাচ্ছন্ন। খোদ অল ইন্ডিয়া কাউসিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন বা এআইসিটিই-র তথ্য বলছে, শুধু এ রাজ্য নয়, সারা দেশেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চাকরির বাজার খুবই মন্দা। যত পড়ুয়া ফি বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেরচ্ছেন, চাকরি পাচ্ছেন তার অর্ধেকেরও কম। রাজ্যের জন্য একটি তথ্য দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। ২০১৩-১৪ সালে মোট আসন ছিল ৩৫০২৩টি। কিন্তু ভর্তি হয়েছিলেন ২৪১৭৭ জন। এঁরাই ২০১৭-১৮ সালে পাশ করে বেরনোর পর চাকরি পেয়েছেন মাত্র ১১০৩১ জন, শতাংশের হিসেবে যা মাত্র ৪৬, অর্থাৎ অর্ধেকেরও কম। শুধু এ রাজ্যের পরিস্থিতি এমন হতাশাজনক, এমনটা নয়। কাউন্সিলেরই দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাকরি পাওয়ার হারে বাংলার থেকেও পিছিয়ে রয়েছে গুজরাত। সেখানে ৬৭৪৪২ আসনের মধ্যে ভর্তি হয়েছিলেন ৩২৭৫৪। কিন্তু চাকরি পেয়েছেন মাত্র ৯৩৭৯ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেশাদারি কোর্সের প্রতি আগ্রহ হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু একজন ছাত্রকে কোনও একটি চাকরির উপযোগী করে তোলার জন্য যে বিশেষ পাঠ, সেটা কি সর্বত্র সবাই পাচ্ছে? ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি টের পেয়ে একের পর এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গড়ে উঠছে, সেখানে বহু ছেলেমেয়ে ভর্তিরও সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আখেরে পরিণতি কী দাঁড়াচ্ছে, তা তো ওই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। তাহলে বোঝাই যায়, কোথাও একটা ঘাটতি আছেই। তা কী, সেটা বের করে মূল সমস্যার সমাধান করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই কারণেই বোধহয় সম্প্রতি এই সঙ্কটের ব্যাপারে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানিয়েছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সিলেবাস বদল করা হচ্ছে। অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফলে আগামীদিনে পরিস্থিতি ভালো হবে।
আসলে পেশাদারি যে কোনও পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি হল, চাকরির বাজারে নিজেকে উপযোগী করে তোলা। কারণ, চাকরিদাতা যেমন একজন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা সর্বাগ্রে দেখবেন, একইভাবে তিনি দেখবেন যাঁকে তিনি নিয়োগ করতে চলেছেন, তিনি সেই কাজের পক্ষে কতটা উপযুক্ত। বিশেষজ্ঞ মহল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনলাইন এবং স্বল্পমেয়াদি কোর্স রয়েছে। যেগুলি একজন ছাত্রকে চাকরির উপযোগী করে তোলে। অনেক ছাত্রছাত্রীই পড়াশোনার পাশাপাশি সেদিকে তেমন নজর দেন না। এই ধরনের কোর্সের গুরুত্বর কথা উপলব্ধি করেই বোধহয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন কোর্স চালু করতে বাধ্য হয়েছে। একইসঙ্গে মেডিক্যালের মতো এক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হল ইন্টার্নশিপ। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সেটিও সম্প্রতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অর্থাৎ, কোনও একজন পড়ুয়াকে চাকরির উপযোগী করে গড়ে তোলার দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে, যার ঘাটতিই চাকরির বাজারে অনেককে অনুপযুক্ত করে তুলছে। যেদিকে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ও যাতে সঠিক পরিকাঠামো নিয়েই ছাত্র ভর্তি করে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কোর্স করতে ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে।