বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
ব্রিটিশরা ভারতীয় রেল ব্যবস্থাটাকে আমাদের হাতে ছেড়ে গিয়েছে সাত দশকের বেশি হল। এই সুদীর্ঘ সময়ে রেল ব্যবস্থায় যে উন্নতি প্রত্যাশিত ছিল তার ধারেকাছেও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। সবচেয়ে লজ্জা লাগে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের রেল পরিবহণের সামগ্রিক অগ্রগতির সঙ্গে তুলনা টানলে। রাশিয়া, ইউরোপ, চীন, জাপান প্রভৃতির সঙ্গে আমাদের ফারাকটা প্রকট হয় পরিষেবার মান, নিয়মানুবর্তিতা আর নিরাপত্তার প্রশ্নে। ভারতীয় রেলে নিরাপত্তার দৈন্য রীতিমতো উদ্বেগজনক। কখনও ট্রেন লাইনচ্যুত হচ্ছে তো কখনও দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটছে। ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরণ-নাশকতার বিপদও ঘটেছে বহুবার। আর আছে ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, চুরি, গুন্ডামি, যাত্রীকে মাদক খাইয়ে হাতসাফাই, সংরক্ষিত কামরায় সাধারণ যাত্রী এমনকী বিনা টিকিটের যাত্রীদের দৌরাত্ম্য প্রভৃতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সারা দেশে মাঝে মধ্যেই বহু ট্রেন বেশ বিলম্বে চলে। শীতে কুয়াশার কোপে পড়ে ভয়ানক বিলম্বিত হয় উত্তর ভারতের ট্রেন। যেসব ট্রেন খুব দেরিতে চলে অপরাধ সংঘটনের জন্য দুষ্কৃতীরা সেই গাড়িগুলিকেই বেছে নেয়। সত্যি কথা বলতে কী মূলত নিরাপত্তার অভাব বোধ থেকে বহু মানুষই ট্রেনে দীর্ঘযাত্রায় ভয় পান। যাঁদের আর্থিক সংগতি আছে তাঁদের একাংশ রেলভ্রমণ এড়িয়েই চলেন—বিমানে কিংবা সড়ক পথে যাতায়াত করেন। ভারতীয় রেলের গর্বে এই আঘাত বেশ বড়।
দেরিতে হলেও এটা উপলব্ধি করেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। দূরপাল্লার ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে রেল। ঠিক হয়েছে—রেলের আন্তঃজোনাল অঞ্চলগুলিতে স্পেশাল স্কোয়াড তৈরি করা হবে। যার ফলে এবার থেকে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গেই মিশে থাকবেন সাদা পোশাকের রেল পুলিসকর্মীরা, যাতে চটজলদি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। আরপিএফ সূত্রের খবর, গত ৯ জানুয়ারি রাতে মালদহ ডিভিশনের কিউল-জামালপুর সেকশনের মাঝে একটি দূরপাল্লার ট্রেনে ভয়াবহ ডাকাতি হয়। নিউ দিল্লি-ভাগলপুর এক্সপ্রেসের ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই রেল মন্ত্রক এইভাবে নড়েচড়ে বসেছে। তাদের আরও সিদ্ধান্ত, আরপিএফের নজরদারি ব্যবস্থাটিকেও দ্বিগুণ করা হবে। পাশাপাশি জেগে থাকবে ট্রেনে ট্রেনে যাত্রী সেজে নিরাপত্তারক্ষীদের শ্যেনদৃষ্টি। রেল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে, পরিকল্পনাটি যেন অবিলম্বে বাস্তবায়িত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদেও চালু থাকে। কারণ, এদেশের অনেক কিছুর শুভারম্ভ হয় বটে কিন্তু কোনও কারণ ছাড়াই এবং মাঝপথে অনেক ফলদায়ক পরিকল্পনা পরিত্যক্ত হয়। সংরক্ষিত কামরায় অবাঞ্ছিত লোকজনের দৌরাত্ম্য কঠোর হাতে দমন করতে পারা না-পারা উপরেই কিন্তু এই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। কারণ, ওই অবাঞ্ছিত লোকজনের মধ্যেই গাঢাকা দিয়ে থাকে দুষ্কৃতীরা। যাত্রী নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য নিরন্তর ভাবনাচিন্তা করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।