বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
২০১৪-র লোকসভা ভোট হয়েছিল দুর্নীতির ইস্যুতে। দুর্নীতি-বিরোধিতার উজ্জ্বল মুখ হিসেবে আচমকাই উঠে এসেছিলেন জাতীয় রাজনীতিতে আনকোরা নরেন্দ্র মোদি। মোদি ম্যাজিক শুধু কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করে বিরাম নেয়নি, বিজেপিকে সাফল্য এনে দিয়েছে রাজ্যে রাজ্যে। হিন্দু ভাবাবেগ আর কুশলী জোট রাজনীতির সৌজন্যে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল ধাপে ধাপে, কাশ্মীর থেকে কামরূপ অবধি! হিন্দু ভাবাবেগে ভাগ বসাবার রাজনীতিতে সমানে পাল্লা দিয়ে চলেছেন রাহুল গান্ধীও। তিনি ওইসঙ্গে গলা চড়িয়েছেন জাতির সঙ্গে ‘চৌকিদার’-এর কথার খেলাপ নিয়ে। কংগ্রেস সরব হয়েছে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। রাহুল গান্ধীর আক্রমণের লক্ষ্য কেন্দ্রের এনডিএ সরকার ছাপিয়ে বিজেপি, বিজেপি ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তির মধ্যে যথেষ্ট বেনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে রাহুল অনেক দিন ধরেই গলা চড়িয়েছেন। মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্টে সরকার রেহাই পাওয়ার পরেও রাহুল খুশি নন। তাঁর অভিযোগ, অনেক সত্য আড়াল করেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে এই রায় আদায় করেছে সরকার। তাই সত্য উদ্ঘাটনের জন্য কংগ্রেস এখনও সংসদীয় তদন্তের দাবিতে অনড়।
রাফাল ইস্যুতে ২ জানুয়ারি রাহুল গান্ধী সংসদে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে তীব্র বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। রাফাল চুক্তিতে বেনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে জেটলি বোঝাবার চেষ্টা করেন—প্রতিটি যুদ্ধবিমানের দাম আপাতভাবে বেশি মনে হলেও তার কারণ কী। তিনি ব্যাখ্যা করেন অফসেট অবলিগেশন এবং বেসরকারি অফসেট পার্টনার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার মধ্যেও কতটা অজ্ঞতা রয়ে যাচ্ছে। রাফাল নিয়ে যে অডিও টেপ বাইরে প্রকাশ করা হয়েছেন, জেটলি সেই ব্যাপারেও রাহুলকে চ্যালেঞ্জ করেন। রাফাল ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসও রাহুলের পাশে রয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় রাজনীতির আলো এখন রাহুলের মুখে। তিনি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য রাফাল বিতর্কে সরাসরি নরেন্দ্র মোদিকেই চ্যালঞ্জে করেছেন। রাফালের জবাব তিনি অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নয় শুধু প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনতে চান। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো ভয়ে সংসদ এড়িয়ে যাচ্ছেন। সাহস থাকলে আমার সঙ্গে মিনিট কুড়ির জন্য যে-কোনও জায়গায় আলোচনায় বসুন।’’ রাহুল গান্ধীর এই আগ্রাসী মূর্তি নজিরবিহীন। তিনি যে আর ‘পাপ্পু’টি নন, সেটা সারা দেশ জেনে গিয়েছে হিন্দি বলয়ে বিধানসভা ভোটের রেজাল্ট থেকে। এবার তিনি বুঝিয়ে দিতে মরিয়া যে আসন্ন লোকসভার ভোটে মোদির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী গান্ধী—একেবারে অন্য মেজাজের রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধীর এই অচেনা চেহারা বিজেপিকে, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহকে নিশ্চয় ভাবাচ্ছে। রাহুলের এই ছবি মোদি-বিরোধী জোট রাজনীতির উপরেও যে ছায়া ফেলছে তাও অনুমেয়।