বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
যখন এই মউ স্বাক্ষরিত হয়, ততদিনে রাজ্য স্বাস্থ্যসাথীর মতো গণবিমা প্রকল্প রূপায়ণে রেকর্ড করে ফেলেছে। লক্ষ লক্ষ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত উপভোক্তার পরিবারের জন্য ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড তুলে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্য দপ্তর। তাঁদের একটা বড় অংশ প্রকল্পের সমস্ত সুযোগসুবিধাও নিয়মিত পাচ্ছেন। ফলে বৃহস্পতিবারের রাজ্য ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে না থাকার ঘোষণার সঙ্গে এইসব ‘স্বাস্থ্যসাথী’ উপভোক্তার কোনও সম্পর্কই নেই। যেমনভাবে তাঁরা এতদিন রাজ্যের দেওয়া খরচে এই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তেমন ভাবেই পেতে থাকবেন। বর্তমানে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র সুবিধাভোগী রাজ্যের ৫২ লক্ষ পরিবার বা প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।
দপ্তর সূত্রের খবর, সমস্যাটা হবে অন্যত্র। মাসকয়েক আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক আগের বিমাপ্রকল্প রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা বা আরএসবিওয়াই। এখানেও কেন্দ্র-রাজ্য যৌথভাবে স্বাস্থ্যবিমার খরচ মেটাত। রাজ্যে এই উপভোক্তার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ পরিবার বা পৌনে তিন কোটি মানুষ।
ঠিক হয়েছিল, আয়ুষ্মান ভারত-স্বাস্থ্যসাথী বা বৃহত্তর অর্থে স্বাস্থ্যসাথী যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সেই বিমা প্রকল্প রাজ্যে লাগু হলে তাতেই যুক্ত হবেন এই পৌনে তিন কোটি উপভোক্তাও। আয়ুষ্মান ভারতে মিলেমিশে যাবে আরএসবিওয়াই। শুধু বাংলা নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও তাই হবে। আর এর খরচ যৌথভাবে রাজ্য-কেন্দ্র বহন করবে। উপভোক্তারাও স্বাস্থ্যসাথীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাবেন। মাত্র ৩০ হাজার টাকা বার্ষিক স্বাস্থ্যবিমা থেকে তাঁদের বার্ষিক স্বাস্থ্যখাতে খরচ করার এক্তিয়ার বেড়ে দাঁড়াবে পাঁচ লক্ষ।
এই পৌনে তিন কোটি মানুষের খরচ এখন কে বহন করবে, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ল। সামনে ভোট। কেন্দ্রের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে কার্যত ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সারা দেশে বিরোধী শক্তির জনপ্রিয়তম মুখগুলির অন্যতম। নিজের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং বড় মনের পরিচয় দিয়ে রাজ্যেরই নিজস্ব আর্থিক জোরের ভিত্তিতে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থাকা এইসব মানুষগুলিরও হাত কি তিনি ধরবেন? আর তা করলে সরকারকে কত টাকা বাড়তি গুনতে হবে? বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই খরচ বহন করার মতো অবস্থা কতটা আছে রাজ্যের কোষাগারের? সেইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি। আর একটি প্রশ্ন হল, মউ হওয়ার পর কেন্দ্র রাজ্যকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প রূপায়ণ খাতে যে অর্থ ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করেছে, সেই টাকার কী হবে? সরকার কি তা কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দেবে?
দপ্তরের শীষকর্তাদের একটাই কথা, এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ হবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে। ওঁর পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা। তবে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, স্বাস্থ্যসাথীতে আমরা বরাবরই স্বয়ম্ভর এবং ভবিষ্যতেও তাই হবে।