বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচ রাজ্যের ভোটে সবক’টাতে পরাজয় সত্ত্বেও বিজেপি নেতৃত্ব এখনও সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপ্রবণ, উদ্ধত এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাচ্ছিল্যপূর্ণ। ১ জানুয়ারি ২০১৯ এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামে বিজেপিকে কেউ সুযোগ দেয়নি। ছত্তিশগড়ে মানুষের রায় স্পষ্ট—বিজেপি পরাজিত হয়েছে। কিন্তু দুটো রাজ্যে (রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ) ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হয়েছিল।”
নিষ্পত্তিমূলক রায়
ত্রিশঙ্কু বিধানসভা মানে একটা দলও সরকার গড়ার অবস্থায় নেই। তিন রাজ্যে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মাত্র দুটো। ফলাফল প্রকাশের পর সরকার তৈরির সুযোগ যে দলের একদম ছিল না সে হল বিজেপি; সুযোগটা ছিল কংগ্রেসের—এবং তারা সরকার গড়ে ফেলেছে কোনোরকম বাধাবিঘ্ন ছাড়াই। আমি বলব, এটা ‘নিষ্পত্তিমূলক রায়’ ‘ত্রিশঙ্কু বিধানসভা’ নয়।
ছত্তিশগড়ে বিজেপির ৩৪টা (৪৯ থেকে ১৫) আসন কমেছে, মধ্যপ্রদেশে কমেছে ৫৬টা (১৬৫ থেকে ১০৯) এবং রাজস্থানে কমেছে ৯০টা (১৬৩ থেকে ৭৩) আসন। এটা বিজেপিকে পরিষ্কার বর্জনই বলব।
নরেন্দ্র মোদির ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। উদাহরণ হিসেবে আরএসএস-এর ভেতরের মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করতে পারি, আরএসএস-এর বিচারে এটা একটা বিরাট পরাজয়; অতএব আরএসএস হিন্দুত্বের উপর জোর দিচ্ছে এবং অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের জন্য অর্ডিন্যান্স জারি করার দাবি জানাচ্ছে, এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঝুলে থাকা সত্ত্বেও।
মোদির সাক্ষাৎকারটা মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে এবং মানুষ দেখেছে—মেয়াদ-শেষের রিপোর্ট কার্ড হিসেবে। সাক্ষাৎকারটা দুই দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন আর কী বলেননি।
উল্লেখ ও অনুল্লেখ
প্রধানমন্ত্রী যেসব বিষয় বললেন সেগুলো দিয়ে শুরু করা যাক: বিমুদ্রাকরণ, জিএসটি, সার্জিকাল স্ট্রাইক, গণপ্রহারে হত্যা, ড. উর্জিত প্যাটেলের ইস্তফা, শবরীমালা, তিন তালাক বিল, রাফাল, কৃষিঋণ মকুব, মহাগাটবন্ধন (বিরোধী দলগুলোর জোট)। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল তিনি কিছু ফাঁস করেন না, কোনও ভুল স্বীকার করেন না, তিনি বুঝিয়ে থাকেন যে তাঁর সরকার সবই ঠিক কাজ করে, এবং “মোদি হলেন কেবল জনগণের ভালোবাসা আর আশীর্বাদের প্রকাশ।”
যেসব মানুষ ভুল স্বীকার করে না আমি তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকি। বিমুদ্রাকরণ ছিল একটা বিরাট ভুল, জিএসটি গভীর ত্রুটিপূর্ণ এবং রূপায়ণের ত্রুটির ফলে সেটা আরও খারাপ হয়েছে, সার্জিকাল স্ট্রাইক না অভিনব না এর দ্বারা জঙ্গি অনুপ্রবেশ ও জঙ্গি কার্যকলাপ খতম হবে, তিন তালাক বিল একটা বাড়াবাড়ি রকমের ও পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপ, রাফাল চুক্তির দ্বারা এয়ার ফোর্স এবং হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড উভয়ের সঙ্গেই অন্যায় করা হয়েছে, ভুল নীতিগুলোর প্রতি ধন্যবাদার্হ, কৃষিঋণ মকুবটা প্রয়োজনীয় হয়েছে। মানুষ এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত মনে হয়, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধ মত পোষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যেসব বিষয়ে কথা বলেননি এবার তার তালিকা দেওয়া যাক: পাহাড়সমান বেকারত্ব, কৃষকদের দুর্দশা ও আত্মহত্যা, মহিলাদের নিরাপত্তা, সম্প্রদায়গত স্বার্থরক্ষায় স্বনিয়োজিত নজরদারি দল (ভিজিল্যান্ট গ্রুপ), শাস্তিছুটের বৃদ্ধি, জম্মু ও কাশ্মীর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবনতি, বিভিন্ন প্রকল্পের অচলাবস্থা, পরিশোধে অক্ষম কোম্পানি, বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী রাজস্ব এবং ফিসকাল ঘাটতি পূরণে সম্ভাব্য ব্যর্থতা, এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সরকারের সংস্রব ত্যাগ করা।
আমার এটাই মনে হয় যে এই প্রধানমন্ত্রী হলেন সেই ড্রাইভার যিনি কেবল রিয়ার-ভিউ-মিররের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। তিনি কেবল অতীতের কথা আওড়ে গিয়েছেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা শব্দও খরচ করেননি। তিনি সামনের দিকে তাকাতে অক্ষম, এবং যেসব মানুষ সামনে এগতে চান, যাঁরা অর্থনীতির উত্তরণ ঘটাবেন তাঁদেরকে দেবার মতো কিছু প্রধানমন্ত্রীর নেই। রিপোর্ট কার্ডের প্রতি পাতায় ‘ফেল’ লেখা।
মরিয়া ব্যবস্থা?
নতুন বছরে কোনও পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। ২ জানুয়ারি লোকসভায় রাফাল নিয়ে তুমুল বিতর্ক হল, প্রধানমন্ত্রী অনুপস্থিত রইলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন দর্শক, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি (সব প্রয়োজনে যে মানুষটা) কোনও মূল প্রশ্নের জবাব দেননি (এই স্থানে ৮ অক্টোবর প্রকাশিত আমার লেখা—‘রাফাল তদন্ত কেন হওয়া উচিত? সামান্য দশটি কারণ জানাচ্ছি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে’ শিরোনামে বিশেষ নিবন্ধে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি)।
বসন্ত আগমনের আর দশ সপ্তাহ। ভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার আগে কী প্রত্যাশিত? আমি কিছু অনুমান করতে পারি।
যে আখ্যানটা মানুষের মধ্যে ঘুরছে তা হল, একটা পরিবর্তন ঘটার পথে। এই আখ্যানটা বদলাতে হলে এটা পরিষ্কার যে সরকারকে ‘কিছু’ একটা করতে হবে। শুক্রবার এই নিবন্ধ যখন লিখছি তখন গুঞ্জন কানে আসছে যে, যেসব ব্যবস্থা সরকারের গভীর ভাবনার মধ্যে আছে তার ভিতর রয়েছে সুদবিহীন শস্যঋণ (ক্রপ লোন) এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের কিছু নগদ প্রদান (ক্যাশ ট্রান্সফার)। এমনকী সরকার যদি কৃষকদের শস্যঋণ দেওয়ার টাকা জোগানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে নির্দেশ দেয়, তবে তারপর তাদের ক্যাশ ট্রান্সফারের টাকার সংস্থানটা কীভাবে হবে? নভেম্বর ২০১৮-র শেষে ফিসকাল ঘাটতির পরিমাণ ছিল লক্ষ্যমাত্রার ১১৫ শতাংশ। তবুও, একটা মরিয়া সরকার কিছু ‘ছাড়’ (রিলিফ) ঘোষণা করতে পারে, টাকা ধার করতে পারে, সুবিধামতো হিসেব বানানোয় মদত দিতে পারে, এবং বিপরীত রাজনৈতিক স্রোত আশা করতে পারে। এই সমস্ত উপায় কাজে না এলে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণের সুবিধা করে দিতে সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে। সেটা হবে সুপ্রিম কোর্টকে অবমাননা, পাশাপাশি অত্যন্ত উস্কানিমূলক ও বিভেদমূলক।
সাধারণভাবে, নির্বাচনের মুখোমুখি (এখানে পড়ুন দশ সপ্তাহ আগে) একটা সরকার যাই করে মানুষ সেটাকে সংশয় ও সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে। তাই বলব যে, রিপোর্ট কার্ড থেকে ‘ফেল’ শব্দটা মুছে ফেলা মোটেই সহজ হবে না।