বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
এবার আশা যাক সাম্প্রতিক ঘটনায়। এই বইটি নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে। নতুন বছরে জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে তা বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। এর মধ্যেই তার ট্রেইলার অন্তর্জালে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ছবির পরিচালক বিজয় রত্নাকর গুট্টে। কিন্তু বিষয়টির প্রচার এমনভাবে হচ্ছে যে পরিচালকের নাম সম্ভবত কেউই জানেন না। লেখক সঞ্জয় বারু এই সুযোগে আবার কিছুটা প্রচারের আলোয়, কিন্তু চিত্রনাট্যকারের নাম যে মায়াঙ্ক তেওয়ারি সেটাও অল্পসংখ্যক চলচ্চিত্রপ্রেমী ছাড়া বাকিদের অজানা। তবে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন অভিনেতা অনুপম খের। তিনি একাধারে মনমোহন সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, ছবিটির প্রচার করছেন শক্তহাতে এবং সর্বোপরি তিনি আজকের দিনে বিজেপির এক বড় নেতা। ছবির স্বল্পাংশ দেখে বোঝা গেল প্রত্যেকের অভিনয় অসাধারণ। বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁদের প্রায় সকলকেই বাস্তবের মানুষগুলির মতো দেখতে লাগছে। কথাবার্তাও একই রকম। ব্যতিক্রম শুধু রাহুল গান্ধী। তাঁর চরিত্রটির চেহারা একেবারেই তাঁর মত দেখতে নয়। অবশ্যই এর রাজনৈতিক কারণ আছে, সে কথায় আমরা একটু পরেই আসছি। প্রচারধর্মী এই ছবিটি থেকে যে ফসল ঘরে তুলতে চায় বিজেপি, তা হল মনমোহন সিং ভালো মানুষ। তাঁর আড়ালে কলকাঠি নাড়া গান্ধী পরিবার (পড়ুন সোনিয়া গান্ধী) ক্ষমতা দখলের জন্যে লালায়িত। অর্থাৎ এই ছায়াছবি গান্ধী পরিবার বিরোধী একটি প্রচার।
কিন্তু বিজ্ঞাপনের জগতে একটা কথা খুব চলে, তা হল যে-কোনও বিজ্ঞাপনই ভালো বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ যেখানে প্রচারটাই মুখ্য বিষয় সেখানে আসল প্রশ্ন হল জনমানসে উপস্থিতি প্রকট কি না। চরিত্রটিকে ভালো কিংবা খারাপ ভাবে দেখানোর ব্যাপারটা গৌণ। সেই হিসেবে এই ছবিতে গান্ধী পরিবার যথেষ্ট প্রচার পাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে প্রচারধর্মী ছবির মাধ্যমে বিজেপির মূল উদ্দেশ্য যদি সফল না হয় তাহলে কিন্তু সম্পূর্ণ প্রয়াসটাই আত্মঘাতী। সে ব্যাপারে বিজেপি অবশ্যই সচেতন। তারা ভালোই জানে যে এই ছবিতে সোনিয়া গান্ধীকে খলনায়িকা হিসেবে দেখানো গেলেও রাহুলকে ততটা বড় খলনায়ক হিসেবে দেখানো শক্ত। সন্তানের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চাইছে কুচক্রী মা, এটাই সারমর্ম। ফলে মায়ের চরিত্র অবশ্যই নেতিবাচক। কিন্তু তার ছেলের চরিত্রকে একইরকম নেতিবাচক দেখাতে হলে ছবিতে সেই চরিত্রের ধার থাকত অনেক বেশি। বিজেপি জানে যে এই মুহূর্তে সোনিয়া গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু রাহুলের আছে। তাই এই ছবিতে রাহুলের গুরুত্ব একটু কম রাখা হয়েছে, চেহারাও তার মত নয়। সব মিলিয়ে রাহুল বিরোধিতা কিংবা রাহুলের অস্তিত্বের মাত্রা এখানে কম থাকারই কথা। অর্থাৎ অভিনেতার চেহারা রাহুলের মত হলে প্রচারের তীব্রতায় পুরোটাই ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে সে কথা বুঝেছেন এই ছবির কর্মকর্তারা। তাই ‘আকস্মিক প্রধানমন্ত্রী’ ছবিতে রাহুলের ভোলবদল যুক্তিগ্রাহ্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টিভঙ্গিতে মোটেই তা সমাপতন নয়। ছবিটির পিছনে স্পষ্ট চিন্তন দলের অনিবার্য উপস্থিতি।
একশো তিরিশ কোটির দেশে যে-কোনও কিছুতেই এক হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম। ফলে যে-কেউ প্রধানমন্ত্রী হলেই তা ‘‘আকস্মিক’। সেটা মনমোহনই হোন কিংবা নরেন্দ্র মোদি। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কিন্তু ক্ষমতা প্রায় অসীম। ভারতের মতো বিশাল দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর একজন প্রধানমন্ত্রীর দেশকে দিশা দেখানোর সুযোগ থাকে অগাধ। মনমোহন সিং সৎ, গুণী এবং বিদ্বান মানুষ। ধরে নেওয়া যাক তাঁর আমলে ভালো কাজ কিছু হয়নি। প্রচারধর্মী ছবিতে তো বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছেই যে তার কারণ সোনিয়া গান্ধী। অর্থাৎ মনমোহন ভুল করে ক্ষমতা হারালেও সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আগে ‘আত্মঘাতী’ পদবি যোগ করা যাবে না। মোদির ক্ষেত্রে দায় কিন্তু পুরো নিজের। সেখানে দলের মধ্যে অমিত শাহকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর অধিকার একশো শতাংশ। পিছন থেকে পুতুল নাচানোর মতো কোনও শক্তি সেখানে নেই। আদানি, আম্বানিরা যেটুকু আছেন সেটুকু সব রাজত্বেই থেকে থাকে, তাদেরকে এর বেশি গুরুত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। সেই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠবেই যে দেশের প্রধানমন্ত্রী এত বেশি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কেন? আধার তো কংগ্রেস আমলের। তাকে জনগণের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টায় ব্রতী তাঁর সরকার। জিএসটি-র অনেকটা কাজও কংগ্রেসের আমলে হয়েছে। চটজলদি সেটা লাগু করে দেশের মাঝের সারির ব্যবসায়ীদের বিপুল ঝামেলায় ফেলেছেন এই প্রধানমন্ত্রী। রাফেল কেনাকাটার শুরুও কংগ্রেস আমলে। তার দাম নিয়ে গন্ডগোল করে এখন পিছনের পায়ে ছাপান্ন ইঞ্চির ছাতিওলা দেশনেতা। কালোটাকা ফিরিয়ে প্রত্যেক দেশবাসীকে পনেরো লক্ষ দেওয়ার গল্প নোটবাতিলের ধাক্কায় চুটকির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রী একটু ভাবলেই দেখবেন যে কমনওয়েলথ গেমস বা থ্রি-জি’র কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর তাঁর সামনে অন্তত দুটো পাঁচ বছরের রাজত্ব রেকাবিতে সাজিয়ে রাখা ছিল। কিন্তু প্রথমটাতেই যতটা ঘেঁটে গেল, তাতে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়টার সম্ভাবনা কমছে অনেকটা। আকস্মিক প্রধানমন্ত্রীর পিছনে সোনিয়া গান্ধীর কলকাঠি নাড়ার প্রচারধর্মী ছবি একগাদা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে কতটা বাঁচাতে পারে সেটাই এখন দেখার।