বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
সব দেখেশুনে ভয় পেয়ে গেল প্যান্ডোরা। সে ঝটপট বাক্সের ঢাকনাটা বন্ধ করে দিল।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাণ্ডকারখানা দেখে অনেকেরই প্যান্ডোরার গল্পটা মনে পড়ে যেতে পারে। প্রমেথিউসকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্যান্ডোরাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতের মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে বিপুল সমর্থন দিয়ে দিল্লির সিংহাসনে পাঠিয়েছিলেন নিজেদের কল্যাণের তীব্র আকাঙ্ক্ষায়। গুজরাত-নন্দনের ওপর বিপুল আস্থা অর্পণ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু গত সাড়ে চার বছরে দেশবাসীর বড় অংশেরই প্রত্যাশার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়নি। বরং উল্টোই ঘটেছে। ২০১৪ সালে ভোটের মুখে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। পেট্রল-ডিজেল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের নজিরবিহীন হারে মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের পরিকাঠামো বাড়েনি বললেই চলে। তার উপর, আচমকা নোট বাতিল আর অপরিণত জিএসটি’র ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ সাধারণ ভারতবাসীর রুজি-রোজগারে টান পড়েছে। তাঁদের অবস্থা আগের চেয়েও করুণ হয়েছে। অন্যদিকে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশভ্রমণের নয়া নজির সৃষ্টি করেছেন। গত পঞ্চান্ন মাসে তাঁর পঁচাশি দফা বিদেশভ্রমণ বাবদ দেশবাসীর দু’হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। এত চড়া মূল্য দিয়েও কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আনতে পারেননি। উল্টে, আমাদের মিত্র-দেশের সংখ্যা কমেছে। ছাপান্ন ইঞ্চি ছাতির প্রধানমন্ত্রী কথাতেই বড় হয়েছেন, কাজে নয়। সাড়ে চার বছর আগে আপামর ভারতবাসীর মনে মোদিজির যে-ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছিল, আজ তার অনেকটাই ধসে পড়েছে।
কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না। ভারত সজীব গণতন্ত্রের দেশ। এখানে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর পরই শাসকদের ফের পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। সেই হিসেবেই আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর সহযোগীদের ভোটের ময়দানে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে হবে। তাতে পাশ করতে না-পারলেই মসনদ থেকে বিদায়। এদিকে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীরা দ্রুত শক্তি অর্জন করছে। নানা কায়দা-কৌশল করেও তাদের ঠেকানো কঠিন হয়ে উঠছে। এর প্রমাণ, একের পর এক রাজ্যে মোদির দলের বিপর্যয়। লোকসভা ভোটের মুখে পদ্মশিবিরের জন্য ভারতের রাজনৈতিক আকাশে সিঁদুরে মেঘ ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু দিল্লির সিংহাসন দখলে রাখতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সতীর্থরা। তাই, সাধারণ ভারতবাসীর সমর্থন আদায় করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের প্রভাবিত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। নানা চমকপ্রদ পদক্ষেপ করছেন। এই তালিকায় আপাতত সর্বশেষ সংযোজন উচ্চবর্ণের তথাকথিত দরিদ্র অংশের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে নির্দিষ্ট শতাংশে সংরক্ষণ। মোদির এই ‘মাস্টার স্ট্রোক’ যে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেওয়ার মতোই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তার প্রমাণ মিলেছে বুধবারের রাজ্যসভায়। তিরিশ বছর আগে মণ্ডল কমিশন ইস্যু দেশকে উথাল পাথাল করে দিয়েছিল। এবার সংরক্ষণকে কেন্দ্র করে জল কতদূর গড়াবে তা এখনই বলা কঠিন।
প্যান্ডোরার বাক্সের শেষতম বিষয় ছিল আশা। কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা-ই মানুষকে বাঁচার রসদ জোগায়। আমরাও সব জটিলতা কেটে যাওয়ার পথ চেয়ে থাকব। তবে কে জানে পথের শেষ কোথায়!