বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
প্রশ্নটা হল, এত সময় কেন নিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট? শুধু এই মুহূর্তে নয়, দশকের পর দশক ধরে এটি ভারতের অন্যতম স্পর্শকাতর মামলার ভূমিকা পালন করছে। উত্তরপ্রদেশ এবং কেন্দ্রে যে সরকারই এসেছে, তার উপর প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষে এ নিয়ে চাপ এসেছে। ইস্যু একটাই জমি কার? রামমন্দির না বাবরি সৌধ? গেরুয়া শিবিরের দাবি, ওই জমিতে রামমন্দির নির্মাণ করতে হবে। আর এটাই তাদের রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার। বছরের পর বছর ধরে এই অস্ত্রকে কাজে লাগিয়েই বিজেপি রাজনীতি করে গিয়েছে। এবং এখনও তাকে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি এবং উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতা দখলের পর একটা জিগির উঠে গিয়েছিল, এবার রামমন্দির নির্মাণ সময়ের অপেক্ষা। সম্প্রতি ধর্ম মহাসভাতেও দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স এনে রামমন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত করুক কেন্দ্র। মোদি নিজে অবশ্য এই রাস্তায় হাঁটার মানুষ নন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচনাধীন। তারাই ঠিক করবে কী হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্ট যা করতে বলবে, সেটা হয়ে যাবে। এর বাড়তি কোনও প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস মোদির মুখে শোনা যায়নি। যদি তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে এবং তড়িঘড়ি রামমন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেয়, তাহলে সেটা কার্যত সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার মতো সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী ভারত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যুক্তির সাহায্য না নিয়ে কোনও একটি ধর্ম বা সম্প্রদায়ের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলা। আর বিচারাধীন বিষয়ে আদালতকে সময় না দেওয়া মানে গণতন্ত্রকে খুন করার শামিল।
সময় নিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রতিটা নথি খতিয়ে দেখা, প্রত্যেক আবেদনকারীর বক্তব্য বা বয়ান পর্যালোচনা করে আদালত আসরে নামতে চাইছে। তাই কোনও তাড়াহুড়ো করার ভাবনাতেই নেই শীর্ষ আদালত। এমনকী, আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে কোন বেঞ্চ এই মামলা শুনবে, তাও পরিষ্কার করে জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, যথোপযুক্ত বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে। এখানেও প্রস্তুতির যথেষ্ট কারণ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট খুব ভালো করে জানে, এই সংক্রান্ত রায়ে যদি এতটুকু ভারসাম্যের অভাব হয়, তাহলে তার প্রভাব গোটা দেশে পড়তে বাধ্য। এই মামলার রায়ের জন্য যদি ভারতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার দায় কার হবে? পাশাপাশি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিরও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রীতিমতো ছেড়ে দে মা দশা হবে। কাজেই সময় নিয়ে সঠিক পথ নির্বাচন করে এগনোটাই দূরদর্শিতা হবে। সুপ্রিম কোর্ট সেটাই করছে।
গত কয়েক দশক ধরে দু’টি জায়গাকে সামনে রেখেই দেশের রাজনীতির হাওয়া ঘুরপাক খায়। একটি কাশ্মীর এবং অন্যটি অযোধ্যা। রাজনীতিবিদরা খুব ভালোভাবে জানেন, এই দু’টি সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়া মানে রাজনীতির একটি অস্ত্র পাকাপাকিভাবে ভোঁতা হয়ে যাওয়া। বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির তা কি হতে দেবে? কোনও না কোনওভাবে জিইয়েই রাখবে ইস্যু। আর সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় শুনিয়ে দেওয়া মানেই কিন্তু সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়! সেটিকে কার্যকর করাটা আরও বিষম সমস্যা। সেই চ্যালেঞ্জেরও মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। কাজেই অযোধ্যা ইস্যু যদি লোকসভার প্রচারে গতি আনা পর্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়, তাতেই মঙ্গল গেরুয়া শিবিরের। কারণ, রায় ঘোষণা হয়ে গেলে কী হবে? রাম জানেন।