নতুন বছরে নতুন ফরমান। এবার ফরমান এল পিএফের ক্ষেত্রে। গ্রাহকের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। নয়া এই ফরমানে বিপাকে পড়বেন রাজ্যের প্রায় ১৫ লক্ষ পিএফ গ্রাহক। পিএফ সংক্রান্ত টাকা গ্রাহককে দেওয়ার ক্ষেত্রে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (ইপিএফও)। তারা জানিয়েছে, এখন থেকে যে-কোনও পেমেন্ট হবে অন লাইন। সেক্ষেত্রে গ্রাহকের পিএফ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক। জানা গিয়েছে, এই রাজ্যে যত পিএফ গ্রাহক আছেন তার মধ্যে আধার সংযোগ রয়েছে ৪৯.৮১ শতাংশের, অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের, বাকি ৫০.১৯ শতাংশ গ্রাহকের ওই সংযোগ না-থাকায় নিঃসন্দেহে তাঁরা জরুরি প্রয়োজনে পিএফের টাকা তোলা, অগ্রিম নেওয়া বা আংশিক টাকা তোলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন। বিশেষত যাঁদের আধার কার্ড তৈরিই হয়নি তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা আরও বেশি। কারণ তাঁরা জানেন না আধার কার্ড তৈরি হয়ে সেই কার্ড কবে তাঁরা হাতে পাবেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কী হবে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। একথা ঠিক, দপ্তরে দুর্নীতি রুখতে বা কাজে স্বচ্ছতা আনতে বা গোটা প্রক্রিয়াকে গ্রাহকমুখী করে তুলতে যদি ইপিএফও উদ্যোগী হয় তাহলে তা নিয়ে কিছু বলার থাকে না। তবে, যাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে তাঁদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিচার করা দরকার। আধার সংযোগ প্রশ্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া নানা ফরমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি কিন্তু বাড়তেই থাকছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর আধার ইস্যুতে কেন্দ্র বেশ কিছুটা পিছু হটলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নানা কৌশলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার সংযোগ নিয়ে ফরমান জারি কিন্তু অব্যাহতই রাখছে। কিছুতেই মানুষ যেন নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁদের ঠিক কী করণীয়। বা এর পরে আবার কী নির্দেশ আসবে? এর আগে রেশনে আধার বাধ্যতামূলক করতে কেন্দ্র উদ্যোগী হয়েছে। নতুন করে আবার কোথায় আধার সংযোগ করতে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। আধারের সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি যুক্ত। তাই পিএফের সঙ্গে আধারের সংযোগে গ্রাহকরা যাতে কোনও রকম অসুবিধায় না-পড়েন তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পিএফ হল চাকরিজীবী মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয়। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখাটা জরুরি। সাধারণভাবে আধার নিয়ে মানুষের মনে কিছু প্রশ্ন ও দুশ্চিন্তা থেকেই গিয়েছে। তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা বা অভিযোগ যে উঠছে না তাও নয়। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
পিএফ পরিষেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দূর করতে ইএিফও এর আগেই ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (ইউএএন) চালু করেছে। গ্রাহকের প্রত্যেকের আলাদা নম্বর রয়েছে। এই ইউএএন-এর সঙ্গে আধার সংযোগ করতে হবে। প্রক্রিয়াটি জটিলও নয়। হয়তো পিএফের টাকা তোলায় অসুবিধার কথা ভেবে গ্রাহকরা নিজেদের স্বার্থে এই সংযোগ করিয়ে নেবেন। কিন্তু, প্রশ্নটা হল—যাঁদের এখনও আধার সংযোগের এই কাজটি করা হয়নি বা আধার কার্ড নেই, তাঁদের কী হবে? তাঁরা তো অসুবিধায় পড়বেন। এভাবে তাঁদের অসুবিধায় না-ফেলে গোটা প্রক্রিয়াটি করা কি সম্ভব ছিল না? বিষয়টি নিয়ে আগেই তো ভাবা যেত। আধার সংযোগের জন্য গ্রাহকদের আরও কিছুটা সময় দিয়ে কাজটি করা হলে এভাবে লক্ষ লক্ষ পিএফ গ্রাহক অসুবিধায় পড়তেন না। মোদি সরকার যেন সাধারণ মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। চটচজলদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা কার্যকর করা, পরবর্তীতে বেগতিক বুঝলে পিছু হটতেও এই সরকারের জুড়ি মেলা ভার। গ্রাহকদের সব পাওনা অন লাইন দেওয়ার সিদ্ধান্তটিও অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করা হয়েছে। আসলে গত বছরের শেষ থেকে সব ক্লেম অন লাইন দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে চাপ বাড়িয়েছিল পিএফ অফিস।
বলা যায়, ঘুরপথে বহু ক্ষেত্রেই মোদি সরকার আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক করছে, যদিও বলা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা বা মোবাইল সিম কার্ড নেওয়ার জন্য আধার বাধ্যতামূলক নয়। যদি কেউ এই দুটি ক্ষেত্রে নিজের পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আধার নম্বর দিতে চান তাঁদের জন্য আধার আইন, টেলিগ্রাম আইন, আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। আধারের অপব্যবহারের সুযোগ যে একেবারেই নেই, তা জোর দিয়ে বলতে পারেনি সরকার। সেই কারণেই সম্ভবত বেসরকারি সংস্থা আধার আইন ভাঙলে বা আধার নম্বর নিয়ে অপব্যবহার করলে এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার প্রস্তাব রেখেছে তারা। এবার পিএফের সঙ্গে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি এল। গ্রাহকরা যাতে অসুবিধায় না-পড়েন তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করুক। গ্রাহকস্বার্থ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিক। কারণ পিএফের টাকা কোনও সরকারেরই দয়ার দান নয়।