বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
তাহলে সমাধানসূত্র কী? এরকম একটা সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার এক অভিনব রাস্তা বের করেছে অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন (এআইসিটিই)। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির ক্যাম্পাসেই এবার পড়ানো যাবে বিএ এবং বিএসসি প্রভৃতি সাধারণ ডিগ্রি কোর্সে। সোজা কথায়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও এবার ভর্তি হতে পারবেন সেই সব ছাত্রছাত্রীরা, যাঁরা আর্টস এবং সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে আগ্রহী। বলা বাহুল্য, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে আসন সংখ্যা পূরণ না-হওয়ার যে বরাবরের সমস্যা, তা কাটাতেই এআইসিটিই’র এই নিদান। তাদের যুক্তি, সাধারণ ডিগ্রি কোর্স চালু করতে হলে অবশ্যই পরিকাঠামোগত নানা উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যেমন, ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি ইত্যাদির বন্দোবস্ত করতে হবে। তবেই মিলবে অনুমোদন। কিন্তু, এর ফলে অব্যবহৃত পরিকাঠামো কাজে লাগানো সম্ভব হবে।
আপাতভাবে এই সিদ্ধান্তের মধ্যে খারাপ কিছু নেই। কারণ, একটা বিষয় পরিষ্কার, ছাত্রছাত্রীদের সামনে আরও অনেক জায়গায় ভর্তির রাস্তা খুলে যাবে। এই যে কলেজে কলেজে ভর্তি নিয়ে নিত্য অশান্তি, অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ইউনিয়নের দাদাগিরি ইত্যাদি নানাবিধ সমস্যা হয়তো এই নয়া ব্যবস্থায় অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু এর পাশাপাশি এটাই উদ্বেগের যে, সরকারি এবং সরকার পোষিত কলেজগুলিতেও তো ভর্তির হাল খুব একটা ভালো নয়। উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের কাছে জমা পড়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে ওই দু’ধরনের কলেজেই ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির পর ৩০ শতাংশ আসন খালি রয়েছে। রাজ্যে কলেজের সংখ্যা ৫৫০টি। এর মধ্যে সরকার পোষিত কলেজে আসন রয়েছে প্রায় চার লক্ষ। আর সরকারি কলেজে সেই আসন সংখ্যা ৩১ হাজারের মতো। সব মিলিয়ে চার লক্ষের বেশি আসনে ভর্তির জন্য চলতি শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। কিন্তু ভর্তি হয়েছেন তিন লক্ষের কিছু মতো। কলকাতার বুকেও এমন বহু কলেজ রয়েছে, যেখানে খালি পড়ে থাকা আসনের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। ভর্তির হার এতটাই করুণ যে তিন তিনবার সুযোগ করে দিলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং গত বছরের চেয়ে ফাঁকা আসনের সংখ্যা প্রায় সাত শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
একদিকে, সরকারি এবং সরকার পোষিত কলেজগুলিতে এত আসন ফাঁকা থাকছে। অন্যদিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে সাধাররণ ডিগ্রি কোর্সে পড়ানোর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত। বোঝাই যায়, আগামী বছর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সরকারি এবং সরকার পোষিত কলেজগুলির হাল আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তাছাড়াও বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সব যে উন্নত মানের, তা নয়। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকী কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেখানে মোটা অর্থের বিনিময়ে ভর্তির অভিযোগও ওঠে। ফলে নিম্ন মেধার ছাত্রছাত্রীদের সেই অর্থের বিনিময়ে ভর্তির একটা রাস্তা কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে খুলে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে, যা আখেরে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষেই অশনিসংকেত।
তাই সামগ্রিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রের ওই স্বশাসিত সংস্থার নতুন করে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিকে অব্যবহৃত পরিকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে গিয়ে রাজ্যের সরকারি কলেজগুলি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, শিক্ষার মানের যাতে অধোগতি না হয়, সেদিকেও নজর দেওয়া খুবই জরুরি। না-হলে একটি সমস্যা মেটাতে গিয়ে আরও বড় সমস্যাকে ডেকে আনা হবে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়।