বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
আক্রান্ত যুবতী দক্ষিণ কলকাতার একটি অভিজাত শপিং মলের ভিতর একটি শোরুমের কর্মী। রোজকার মতো শনিবার রাতেও তিনি ছুটির পর বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর বাড়ি ঠাকুরপুকুর অঞ্চলে। প্রিন্স আনোয়ার শাহ মোড় থেকে উঠেছিলেন একটি শাটল গাড়িতে। গাড়িতে পুরুষ মহিলা মিলিয়ে তখন আট-নয় জন যাত্রী ছিলেন। ওই যুবতীসহ দুই মহিলা যাত্রী বাদে বাকিরা কেওড়াপুকুর মোড়ের কাছে নেমে যান। গাড়িতে যে আরও একজন বসেছিলেন, চালক সম্ভবত সেটা খেয়াল করেনি। ওই যুবতী একাই আছেন ধরে নিয়ে চালক তার পিশাচমূর্তি খোলসা করে ফেলে। কেওড়াপুকুর মোড় ছাড়ানোর পরই সে অনাবশ্যক অশ্লীল মন্তব্য ছুড়ে দিতে থাকে। ওই যুবতী প্রথম দিকে সেই কথায় গুরুত্ব দেননি। কিন্তু তারপর চালকের অভব্যতা বাড়তেই থাকে। একটা সময় ওই যুবতী এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। চালক তখন তাঁকে ভয় দেখাতে থাকে। বলতে থাকে যে তিনি চালককে কিছুই করতে পারবেন না, কারণ গাড়িতে তৃতীয় কেউ নেই! কবরডাঙা মোড়ে পৌঁছনোর পর ওই যুবতী নির্দিষ্ট স্থানে নামতে চান। চালক সেই কথায় কর্ণপাত না-করে গাড়ি ঘুরিয়ে দ্রুত ছুটে যায় নির্জন এলাকার দিকে। জুলপিয়া রোডে গিয়ে চালক পিশাচ মূর্তি নিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করে। ওই যুবতী সাহায্যের আবেদন জানিয়ে মুহুর্মুহু আর্তনাদ করতে থাকেন। নারীকণ্ঠের আর্তচিৎকার শোনামাত্রই স্থানীয় লোকজনও গাড়িটির পিছু নেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছুটে গিয়েছিলেন মোটর বাইক এবং অটোরিকশ নিয়েও। অবস্থা বেগতিক বুঝে শাটল গাড়ির পিশাচ-চালকটি ওই যুবতীকে ধাক্কা মেরে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। সুযোগ বুঝে তাঁর সহযাত্রী মহিলাও ওই চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেন। চতুর্দিক থেকে অনেকে মিলে শাটল গাড়িটিকে ঘিরে ফেলার কারণে শয়তান-চালকের চালাকি জব্দ হয়ে যায়। সে ধরা পড়ে যায় গাড়িসমেত। ক্ষিপ্ত জনতা তাকে প্রহার করে এবং গাড়িটিতেও ভাঙচুর চালানো হয়। তার কিছু পর ঘটনাস্থলে যায় হরিদেবপুর থানার পুলিস। এই রোমহর্ষক কুনাট্যের খলনায়ককে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কানাই দাস নামে ওই কীর্তিমানকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পুলিসি হেপাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কীর্তিমান কানাইকে শ্রীঘরে নিক্ষেপের পুরো কৃতিত্ব স্থানীয় মানুষের। কনকনে শীত এবং ভয় উপেক্ষা করে যদি তাঁরা ওই দুর্গত নারীর কাতর আবেদনে সাড়া না-দিতেন তবে অভিযুক্ত গাড়ি চালক অধরাও থেকে যেতে পারত। যে-দেশে চোখের সামনে মারাত্মক অপরাধ সংঘটন দেখেও চোখ বুজে থাকাই রীতি—সেই মাটিতে এই ঘটনা অভূতপূর্ব! অভিযুক্তকে হাতেনাতে পাকড়াও করে পুলিসের হাতে তুলে দেওয়ার এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এবার পুলিসকে দেখতে হবে এই ঘটনার তদন্তে যেন সামান্যও গাফিলতি না-হয়। একমাত্র দোষীর দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হলেই স্থানীয় মানুষের এই ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগটি যথাযথরূপে সম্মানিত হবে। রাতের কলকাতাকে সকলের জন্য নিরাপদ করে তুলতে হবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে। মানুষ কোনও কালরাত্রির পুনরাবৃত্তি চায় না।