বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
যে-কোনও দেশীয় রাজনীতির মতো আন্তর্জাতিক রাজনীতিও কয়েকটি দল-উপদলে বিভক্ত। এর প্রধান কারণও হল—আন্তর্জাতিক বাজারের অর্থনীতির নিয়ন্তাশক্তি হয়ে ওঠা। এই অবস্থায় এখন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক ভরকেন্দ্রও দুই থেকে তিন শক্তিতে বিভাজিত। যার একটির নেতৃত্বে রয়েছে আমেরিকা স্বয়ং। আর নতুন একটি শক্তি উঠছে, যার সামনে রয়েছে চীন। সন্দেহ নেই দুটি দেশই অর্থ, সামরিক শক্তি, লোকবল ও সমর্থক দেশের সংখ্যায় যথেষ্ট শক্তিশালী। সুতরাং, এই অবস্থায় বাণিজ্য অর্থনীতির মানদণ্ড কোন দিকে হেলে থাকবে, তা নিয়েই বিবাদ দু’পক্ষের। বছরের পর বছর ধরে ‘মেঘের আড়ালে’ শক্তিবৃদ্ধির পর অবশেষে চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং রীতিমতো আমেরিকার বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধের হুমকি দিলেন। যার এককথায় অর্থ হল—তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রহর গোনা।
চীনা প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধের জন্য তাঁরা পুরোপুরি প্রস্তুত। দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য, বাণিজ্য-যুদ্ধ ও তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্রমেই সঙ্ঘাত তুঙ্গে উঠছে বেজিংয়ের। চীনা সশস্ত্র বাহিনীকে তাঁর নির্দেশ, যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে রাখতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় যা কিছু করার, তার সবটাই করতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে তৈরি থাকতে হবে। যুদ্ধের প্রস্তুতির পাশাপাশি যুদ্ধাস্ত্রের ভাণ্ডারেও শক্তিবৃদ্ধি করছে চীন। আমেরিকাকে টেক্কা দিতে তৈরি করে ফেলেছে এক ‘দানব বোমা’। মার্কিন বাহিনীর হাতে থাকা ‘মাদার অব অল বম্বস’-এর পাল্টা হিসেবে এই বিশাল বোমা তৈরি করেছে তারা। সংবাদে প্রকাশ, যার শক্তি ও ধ্বংসলীলা চালানোর ক্ষমতা পরমাণু অস্ত্রের কাছাকাছি। এই ভয়াবহ বোমার আত্মপ্রকাশের মধ্যেই আমেরিকাকে সমঝে দিতে সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন জিনপিং।
আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রশ্নে ক’দিন আগেই মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল চীনের প্রেসিডেন্টকে। উত্তেজনার পারদ চড়ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এই অবস্থায় লাল ফৌজের সর্বাধিনায়ক জিনপিং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বললেন দেশকে। সব মিলিয়ে ফের একবার যুদ্ধের হাতছানির মুখোমুখি হতে চলেছে এই বিশ্ব। ইতিহাসে পড়া বিশ্বযুদ্ধের আত্মজীবনী, গল্প-উপন্যাস ও চলচ্চিত্র পড়া একবিংশ শতকের প্রজন্মের এর ভয়াবহতা আঁচ করা দুঃসাধ্য। ১৯১৪ থেকে ’১৮ ও দ্বিতীয়বার ১৯৩৯-’৪৫ সাল ধরে দু-দুটি মহাযুদ্ধে লোকক্ষয়, সম্পত্তিক্ষয়ের কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। শুধু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এক কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সেই সংখ্যাটা ছিল—৭ থেকে সাড়ে ৮ কোটি। যা তৎকালীন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ। অতএব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩ বছর পর যুদ্ধাস্ত্র-বিজ্ঞান কতখানি এগিয়েছে সে বিষয়ে কারণও সন্দেহ থাকার কথা নয়। ফলে সহজেই অনুমেয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো সন্ধিক্ষণ যদি আর একবার আমাদের সামনে আসে, তাহলে এই গ্রহে প্রাণ বলে আর কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। সুতরাং, এই মুহূর্তে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব, বাণিজ্য-যুদ্ধ, অস্ত্রশক্তি প্রদর্শন প্রতিযোগিতার ও সর্বোপরি উগ্র জাত্যভিমান এবং তথাকথিত ‘মিত্রশক্তি’র গোষ্ঠীবাজি বন্ধ করে মানব কল্যাণে সেই শক্তি উৎসর্গ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভয় দেখানোর জন্য একটি বোমা নিক্ষেপই হবে মানবজাতির ধ্বংসের কারণ।