বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
তৃণমূল জমানায় এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বাস করেন, প্রতিবাদ আন্দোলন হিসেবে বন্ধের ধার অনেক আগেই ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। ধর্মঘট, বন্ধ, হরতাল প্রভৃতি আন্দোলন কর্মসূচি কর্মনাশা ছাড়া কিছু নয়। তাই বাংলার দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বামপন্থীদের ‘চলছে না চলবে না’ ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে ছাড়বেন। এই নেতিবাচক রাজনীতি বামপন্থীরা বিরোধী হিসেবেও যেমন করেছে, তেমনি করেছে সরকারি ক্ষমতায় থেকেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসক দল এই ভুল একটি বারের জন্যও করেনি। তার ফলে তাঁর সাড়ে সাত বছরের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গে কর্মদিবস ও শ্রমদিবস নষ্ট হয়েছে সবচেয়ে কম। কেন্দ্রে কোন দল বা জোটের সরকার ক্ষমতাসীন আছে তার ভিত্তিতে তাঁর এই নীতির কোনও হেরফের হয়নি। কর্মসংস্কৃতি ফেরানোর প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দৃঢ়তা প্রশংসার দাবি রাখে।
রাজ্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও অবশ্য মঙ্গলবার ধর্মঘটীরা রাজ্যের কিছু স্থানে মানুষের উপর জোরজুলুম করার মরিয়া চেষ্টা করেছে। যেমন কলকাতার শোভাবাজারে বাসে আগুন ধরাবার চেষ্টা হয়েছে। রায়গঞ্জ, জামুড়িয়া, হিন্দমোটর, কাটোয়াসহ কয়েকটি জায়গায় বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। স্কুলগাড়িও হামলার লক্ষ্য ছিল এক জায়গায়। জিটি রোড-সহ কিছু সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধ করে কিংবা ওভারহেড তারে কলার পাতা ফেলে রেল পরিবহণ ব্যাহত করার নষ্টামি চলেছে কিছু স্থানে। বনগাঁ, নামখানা, রানাঘাট এবং ব্যান্ডেল শাখার কথা উল্লেখযোগ্য। পুরুলিয়ায় বন্ধ সমর্থকরা লাটিসোঁটা হাতে দাপিয়েছে। মুর্শিদাবাদের একটি স্থানে তৃণমূলের পার্টি অফিসে হামলা করে। বারুইপুরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষ হয়। সব মিলিয়ে বন্ধ সমর্থকদের প্রাপ্তির ভাঁড়ারে কতটা কী পড়েছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে, যেটা নিয়ে কোনও সংশয় নেই তা হল একটি ভোগান্তির দিন কাটাল বাংলা। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কেরলে এবং ওড়িশায়। কিছুটা হলেও ব্যাহত হল উন্নয়ন প্রয়াস। আংশিকভাবে হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হল রাষ্ট্রের অর্থনীতি। এই প্রসঙ্গে গত মাসে অনুষ্ঠিত সারা ভারত ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের কথাও উল্লেখ করা যায়। ব্যাঙ্ক ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল ২১ এবং ২৬ ডিসেম্বর! মাঝে ২২ ও ২৩ তারিখ ছিল যথাক্রমে চতুর্থ শনিবার ও রবিবার। আবার ২৫ তারিখ বড়দিন। অর্থাৎ মাঝে ২৪ তারিখটা শুধু ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই ব্যাঙ্ককর্মীদের টানা ছয়দিন ছুটি ভোগের মওকা ছিল। এর ফলে গ্রাহকদের যে নিদারুণ ভোগান্তি আর আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল তা সম্ভবত মনে রাখেননি ধর্মঘটীরা। তাঁরা আরও মনে রাখেননি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বসঙ্কটের আশঙ্কাটি। অথচ তাঁদের সামনে বড় দৃষ্টান্ত রয়েছে কর্মীদের একাংশের গ্রাহক-বিরোধী ভূমিকার কারণে একসময়ের সোনার প্রতিষ্ঠান বিএসএনএলের অকাল রুগ্নতা। মানুষকে কষ্ট দিয়ে তৃপ্তিলাভের এই যে কর্মনাশা রাজনীতি, এর অবসান হওয়া জরুরি। দাবি ন্যায্য হলে তা আদায়ের জন্য অবশ্যই আন্দোলন হোক—খেয়াল রাখতে হবে তার জন্য স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না-হয়। বাম, ডান সব দল এই সত্য যত তাড়াতাড়ি বোঝে দেশের মঙ্গল। ক্ষতি অনেকখানিই হয়েছে মঙ্গলবার; আজ বুধবারের কর্মসূচিটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।