ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
আজ থেকে প্রায় ২২২ বছর আগের কথা, সালটা ১৭৯৯। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে এক যুবক নিজের বাড়িতে বেশ কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে পার্টি দিয়েছেন। বন্ধুদের মধ্যে কেউ নাট্যকার, কেউ বা কবি, কেউ আবার প্রকাশক। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার যে, পার্টিতে কোন খাবার দাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেই। তাহলে কীসের টানে এসেছে সবাই সেই পার্টিতে। আসলে সেদিন পার্টিতে সবাইকেই একটা গ্যাস কিছুটা করে শোঁকানা হয়েছিল। গ্যাসটি শোঁকার পরে তাঁদের কী অবস্থা হয়েছিল সেটা আমরা অনুমান করব সেদিনের পার্টিতে উপস্থিত থাকা কয়েকজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
ঐতিহাসিক এবং লেখক মাইক জে তাঁর অভিজ্ঞতায় লিখে রেখে গিয়েছেন যে, পার্টিতে আসা প্রায় সবাই ওই গ্যাস আরেকটু শোঁকার জন্য উদগ্রীব হয়ে চাইছিল। পিটার মার্ক রজেট নামে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘আমি যেন আমার সমস্ত চিন্তা শক্তি হারিয়ে পৃথিবীর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি, এমন অনুভূতি হয়েছিল।’ কারও আবার গ্যাস শোঁকার পর মনে হয়েছে, যেন তাঁর কানের কাছে কেউ সুন্দর বাজনা বাজাচ্ছে। সেদিনের পার্টিতে বিখ্যাত কবি কোলরিজও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলছে.ন ‘মনে হল আমি যেন ঠান্ডা বরফের ওপর হেঁটে এসে একটা আরামদায়ক ঘরে ঢুকলাম।’
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রায় সকলের ওপরেই গ্যাসটা একটা বেশ সুখকর প্রভাব বিস্তার করেছিল। বলাবাহুল্য, সেই গ্যাসটা অন্য কিছু ছিল না, ছিল নাইট্রাস অক্সাইড। আর এই পার্টির যিনি উদ্যোক্তা তিনি আর কেউ নন, বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার হামফ্রে ডেভি।
আসলে জোসেফ প্রিস্টলে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে এই গ্যাস আবিষ্কার করলেও এর ধর্ম ছিল অজানা। স্যার হামফ্রে ডেভিই বলতে গেলে এই গ্যাসের বেশিরভাগ রহস্য উন্মোচন করেন। আমরা প্রথমেই যে গ্যাস পার্টির কথা উল্লেখ করেছি, সেখানে ডেভি চেয়েছিলেন, সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষ যাতে ওই গ্যাসের কার্যকারিতার কথা জানতে পারেন। আসলে ডেভি বিজ্ঞানকে বিজ্ঞানীদের মধ্যে শুধু আটকে রাখতে চাননি, তিনি তার ফলাফল সম্বন্ধে সকলকে অবগত করিয়ে বিজ্ঞানকে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন।
স্যার ডেডি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানী হতে চাননি। হতে চেয়েছিলেন কবি। তাঁর বন্ধুরা তাঁর কবিতা শুনে মুগ্ধ হয়ে যেত। নাইট্রাস অক্সাইড শোঁকার পর স্যার ডেভি তাঁর অবস্থা কবিতার মাধ্যমে লিখেছিলেন। কবিতাটা অনেকটা এইরকম —
বন্য বাসনার আদর্শ স্বপ্নে নয়
দেখেছি তৃপ্তি জাগ্রত হৃদয়ে,
জ্বালাহীন কোমল আগুন জ্বলছে আমার বুকে—
গালে দিচ্ছে গোলাপি আভা ছড়িয়ে।
চোখে আমার আনন্দ উদ্ভাসিত,
অব্যক্ত পুলক অধরে নিহিত,
অঙ্গ উদ্বেলিত মোর অন্তরের রোমাঞ্চে,
নবজাগ্রত শক্তি যেন জন্মান্তর ধরে স্থিত।
আসলে আমরা হামফ্রে ডেফিকে মনে রেখেছি বোধহয় তাঁর ‘নিরাপত্তা বাতি’ (শেফটি ল্যাম্প) আবিষ্কারের জন্যই। ছোট্ট অথচ কী যুগান্তকারী আবিষ্কার। সেই সময় খনিতে কাজ করতে নামা মানুষের জীবন বেঁচেছিল তাঁর এই আবিষ্কারের কল্যাণে। কিন্তু বলাবাহুল্য তাঁর আবিষ্কার যতটা প্রচার পেয়েছিল সেই তুলনায় তাঁর কবিসত্তা সকলের অজানাই থেকে গিয়েছে। বস্তুত তাঁর এই কবিতা তিনি কোনওদিন প্রকাশই করেননি, পাণ্ডুলিপি হিসাবেই রেখে গিয়েছেন।