ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বেশ তো চলছিল জীবন। দৈনিক পড়াশোনা, বিকেলের খেলাধুলো, বন্ধুদের আড্ডা, ইস্কুলের ঘণ্টাধ্বনি, রাস্তাঘাট বাজারের কর্মব্যস্ততা— পৃথিবী জুড়েই ছিল কলতান, মুখরতা। করোনার সদর্প হুঁশিয়ারিতে মুহূর্তে তালভঙ্গ হল পৃথিবীর। মানুষ হল গৃহবন্দি। করোনার আক্রমণ অতর্কিতেই জীবনে নিয়ে এল আতঙ্ক, অসহায়তা, মৃত্যুর আমন্ত্রণপত্র। এভাবেই কেটে গেল প্রায় দু’বছর। অনলাইনে ক্লাস করেছি বটে, কিন্তু সরাসরি ইস্কুলে গিয়ে ক্লাস করা, বন্ধুদের সঙ্গে গল্প আর খেলাধুলোর মজা তো সেখানে নেই! অবশেষে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত খুলে গেল। জীবনে ফিরে এল আনন্দের জোয়ার। আমার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীই আবার নতুন ছন্দ ফিরে পেল জীবনে। আশা করি, করোনার প্রতিকূলতা কাটিয়ে শিক্ষার জগতে আসবে নতুন গতি।
সালটা ২০২০, মার্চ মাস। করোনারূপী এক অশুভ শক্তি বাড়িয়ে দিল বিদ্যালয় আর আমাদের মধ্যে দূরত্ব। আমার দশম শ্রেণি, স্কুল জীবনের একটা ধাপের প্রায় অন্তিম পর্যায়ে চলে এসেছি। তাই অবশেষে আবার যখন স্কুল খুলল মন আনন্দে ভরে গেল। আমার জীবনের অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে যে স্কুলকে ঘিরে প্রায় দু’বছর পর সেই স্কুলে পা রাখলাম। আমরা আমাদের প্রিয় শিক্ষিকাদিদিদের সান্নিধ্য পেলাম। বন্ধুদের সঙ্গে আবার মিষ্টিমধুর সময় কাটাচ্ছি। এখন বুঝতে পারছি, স্কুলের মাঠের প্রতিটি ঘাস, বাগানের প্রত্যেকটি ফুল, তেঁতুলগাছের প্রতিটি ডাল, দক্ষিণের বারান্দার প্রতিটি থাম, ক্লাসরুমের প্রতিটি বেঞ্চের সঙ্গে আমার গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। যাদের ছাড়া এতদিন হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। আবার বন্ধুদের ফিরে পেলাম।
মঙ্গলবার থেকে স্কুল খুলে যাওয়ায় সত্যিই বেশ আনন্দ লাগছে! প্রায় দেড় বছর পর স্কুল যাচ্ছি ভেবে, জীবনে প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে। লকডাউনের সময় স্কুলের প্র্যাক্টিক্যাল, পরীক্ষা, ক্লাসরুম ছাড়াই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে অনলাইনে। পড়াশোনায় তেমন অসুবিধা না হলেও ক্লাসরুমে বন্ধুদের পাশে বসে ক্লাস করার অনুভুতিটাই আলাদা। বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করা অত্যন্ত জরুরি। অথচ, অনলাইনে যা করা কার্যত অসম্ভব। তাই স্কুলে ফিরতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট কোভিড বিধি মধ্যেই ধীরে ধীরে স্কুল জীবনের হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো খুঁজে পাব।
ফিরল রংবেরঙের মুহূর্তগুলি
দীর্ঘ ২০ মাস পর স্কুল খুলল। দেখা হল বন্ধুদের সঙ্গে। কোভিড বিধিনিষেধের কড়াকড়ি সত্ত্বেও খুবই ভালো লাগছে। একাদশ শ্রেণির রংবেরঙের মুহূর্তগুলো হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। হাতেকলমে শিক্ষার অভাব পড়াশোনার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গৃহবন্দি অবস্থায় অনলাইন ক্লাস শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে বিপর্যস্ত করেছে। এমতাবস্থায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা বেশ বিপদগ্রস্ত। স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষায় অফলাইন ক্লাস সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফের স্কুল খোলায় অনেক উপকার হল। তবে, বোর্ড পরীক্ষার আগে আমাদের পড়ুয়াদের খুবই সাবধানে থাকতে হবে।
এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের ছাত্রজীবন। যার মধ্যে থেকে ২০টা মাস কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। মাধ্যমিক পরীক্ষার বিকল্প মূল্যায়নে আমরা সবাই একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছি। বহুদিন পর স্কুলে পা রেখে মেতে উঠলাম প্রাণখোলা আনন্দে। ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে ভার্চুয়াল সংযোগে হারিয়ে গিয়েছিল শিক্ষার উদ্দীপনা ও আন্তরিকতা। আবার সেই উদ্দীপনা ও আন্তরিকতা ফিরে পাওয়ার পালা। মুক্তি পেলাম দীর্ঘ কয়েক মাসের একঘেয়েমি থেকে। তবে, মাস্কে মুখ ঢেকে ক্লাস করা আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়াটা যেন বড় অশান্তির! কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি তো সকলকে মানতেই হবে। তার অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। তবুও অবশেষে স্কুল চালু হওয়ায় মন-প্রাণ আনন্দে ভরে গিয়েছে।
মনটা খুশিতে ভরে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, ওই পাখিদের মতো আমি আমার আকাশ ফিরে পেলাম। প্রায় দু’বছর করোনা আমাদের স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে। হারিয়েছি কত প্রিয়জনকে। কিন্তু এত দুঃখের মধ্যেও ফের স্কুল খুলতে ফিরে পেলাম বন্ধুদের। স্কুল খোলার প্রথম দিনই মাঠে বসে আড্ডা দিয়েছি। অবশ্যই সেই আড্ডায় নতুন সঙ্গী হয়েছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার। আমার একটা কথা বারবার মনে হয়, এই করোনা মহামারী থেকে আমাদের সকলের একটা শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমাদের সকলকে পরিবেশ সচেতন হতে হবে। নইলে ভবিষ্যতে যে কত মহামারী অপেক্ষা করে আছে কে জানে! ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, আর যেন করোনা না বাড়ে এবং স্কুল বন্ধ না হয়।
সংঘমিত্র মুখোপাধ্যায়, নবম শ্রেণি, কল্যাণী বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল
ছবি: অতূণ বন্দ্যোপাধ্যায়