ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
ইউরোপের বৃহত্তম নদী দানিয়ুব অস্ট্রিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, রিপাবলিক অফ মলদোভা ও ইউক্রেন— এই ন’টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রোমানিয়াতে এসে কৃষ্ণ সাগরের কাছে ব-দ্বীপ গঠন করেছে। এটি ইউরোপের বৃহত্তম জলাভূমি এলাকা এবং ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এটি রোমানিয়ার সবচেয়ে শুষ্ক ও রৌদ্রপ্রধান অঞ্চল। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইউক্রেনের পিপিয়াট রিভার নদীর জল আশপাশের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এই কারণেই ইউক্রেনের এই অঞ্চলকে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহৎ জলের রাজ্য বলা হয়।
বিজ্ঞানীরা এই স্থানটিকে ‘বায়োডাইভার্সিটি লিভিং মিউজিয়াম’ বলে থাকেন। এখানে প্রকৃতির উপাদানগুলো ঠিক যেন জাদুঘরের মতো সাজানো। মূল নদীটি থেকে মাত্র ৬.৫ মিটার দূরে একটি ছোট খাল রয়েছে, যা সবসময় জলে পূর্ণ থাকে। এখানকার বাস্তুতন্ত্রকে ৩০ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইকোসিস্টেমের উপর নির্ভর করে এই অঞ্চলে বেঁচে আছে ৩ হাজার ৫০০ প্রজাতির নানা ধরনের প্রাণী। এদের মধ্যে চল্লিশের বেশি রয়েছে স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং তিন হাজারেরও বেশি পাখির প্রজাতি। রয়েছে প্রায় ২ হাজার প্রজাতির নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ। এখানকার জলের উৎপাদনশীলতার কারণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মাছের প্রজাতির আশ্রয়স্থল এই ব-দ্বীপ।
প্রায় ৩০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দানিয়ুব ডেল্টাকে নিজেদের বাড়ি বানিয়েছে— এদের মধ্যে রয়েছে করমোরান্ট, সাদা লেজযুক্ত ঈগল ও চকচকে আইবিস। লিয়ানাসের খাঁজ, উইলো এবং ওকের সীমানা যুক্ত খালের গোলকধাঁধা অসংখ্য প্রজাতির পাখির জন্য উপযুক্ত প্রজননস্থল। প্রতিবছর বসন্তে লক্ষ লক্ষ মিশরীয় পেলিকান তাদের সন্তানদের লালন-পালন করতে আসে এই অঞ্চলে আর উত্তর ইউরোপের কঠোর শীত থেকে বাঁচতে এখানে আসে অসংখ্য আর্কটিক গিজ। বসন্তের শুরু থেকে এখানে পাখি দেখার মরশুম আরম্ভ হয়। যা চলে গ্রীষ্মের শেষ পর্যন্ত। শুধুমাত্র পাখিরাই এই ব-দ্বীপ-এর বাসিন্দা নয়। নানা রকম মাছ, বিভিন্ন ধরনের পশু, বনবিড়াল, শিয়াল, নেকড়ে এমনকী মাঝে মাঝে বন্যশূকর ও হরিণ এখানে দেখা যায়। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৪৫০ প্রজাতির প্রাণীর দেখা মেলে এখানে। সেই সঙ্গে রয়েছে ১ হাজার ৭০০ রকমের উদ্ভিদ প্রজাতি।
এই অঞ্চলের তুখোড় শিকারি প্রাণী গোল্ডেন জ্যাকেল। এরা আকৃতিতে ইউরোপিয়ান জ্যাকেলদের থেকে কিছুটা বড় হয়। ডেল্টার জলে কার্প জাতীয় মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের সময় যখন জল অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তখন এই কার্প জাতীয় মাছেরা জলের তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। তারফলে প্রচুর মাছের মৃত্যু হয়। এই মৃত মাছেরাই পরিণত হয় পাখিদের সহজ আহারে। জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই ব-দ্বীপের ফরচুনা লেক, সোন্টিয়া চ্যানেল, চ্যানেল ফাইভ, লেক সিনোয়ে, সাফান্টু ঘিওরগে গ্রাম এলাকা, দুনারিয়া ভেচে, চিলিয়া শাখা, সুলিনা শাখা প্রভৃতি জায়গায় মাছ ধরার মরশুম চলে। কার্প ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় পাইক, পাইকপার্চ প্রভৃতি মাছ।
মাত্র ৪৩ মিলিমিটার বার্ষিক বৃষ্টিপাত সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং অগণিত অভ্যন্তরীণ হ্রদ এবং ছোট জলপথ থেকে বেড়ে যাওয়া আর্দ্রতা দ্বারা এখানকার মহাদেশীয় জলবায়ু প্রভাবিত হয়। জলাভূমির গাছপালা রিডস ফ্র্যাগমিটস অস্ট্রালিস দ্বারা প্রভাবিত হয়। নিমফিয়া অ্যালবা, নুফার লুটেয়াস, স্যালিক্স, পপুলার, অ্যালনাস, কোয়ার্কাস ও পালক ঘাস স্টিপা এসপি প্রভৃতি গাছপালা এখানে দেখা যায়।
প্যালিয়ার্কটিক এবং ভূমধ্যসাগরীয় জৈব ভৌগোলিক অঞ্চলের মিলনস্থল এই দানিযুব ব-দ্বীপ একটি অনন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। ২ হাজার ২০০ বর্গমাইলের দানিয়ুব ব-দ্বীপ জলাভূমিটি আন্তর্জাতিকভাবে পাখিদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। বহুদূর বিস্তৃত জলরাশি আর সবুজের সমারোহ, সব নিয়ে কোলাহলমুখর এই পৃথিবীর মাঝে এ যেন এক অন্য জগৎ। প্রকৃতি নিজের হাতে অতি যত্নে সাজিয়ে রেখেছে এই জাদুঘরের প্রতিটি উপাদান। স্নিগ্ধ, শান্ত জাদুঘরের নীরবতা ভঙ্গ হয় পাখিদের কলকাকলি দিয়ে। অতি যত্নে প্রকৃতির কোলে আজ এখানে লালিত হয় প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রাণী। তাই পৃথিবীর এই জাদুঘর শুধু প্রকৃতির তৈরি এক মিউজিয়ামই নয়, এ হল এক আশ্রয়স্থল।