ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
বিভাস মজুমদার: আমরা অনেক সময় মজা করে বলি, জানিস, একটা মশা একটা হাতিকে খেয়ে ফেলেছে। এটা বাস্তবে হয় না তা কে না জানে। আবার যদি বলি একটা মাকড়সা আস্ত সাপকে খেয়ে ফেলেছে। এটাকেও সবাই ঠাট্টা বলেই ভাববে। কেউ কেউ হয়তো সিনেমার মতো কল্পনা করবে একটা বিশালাকার আটপেয়ে মাকড়সা সাপ গিলে খাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কল্পনা অনেক সময়ে বাস্তবেও দেখা যায়। তবে, বিরাট নয়, খুদে মাকড়সাই কিন্তু কার্যত একটা সাপকে খেয়ে ফেলতে পারে। ব্যাপারটা জেনে আশ্চর্য লাগছে তাই না? ছোটখাট বা অনেক সময় একটু বড় মাকড়সার জাল বুনে শিকার ধরার ক্ষমতা কারও অজানা নয়। সাধারণত মাকড়সা ছোট পোকামাকড়কে জালে জড়িয়ে ফেলে তাকে মেরে ফেলে। ওই প্রাণীর দেহে থাকা নির্যাস চুষে খেয়ে নেয়। কিন্তু সাপের মতো বিষাক্ত সরীসৃপও কি মাকড়সার শিকার হতে পারে? একটা ক্ষুদ্র মাকড়সার পক্ষে কি সাপ খেয়ে ফেলা সম্ভব? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা মাকড়সার ক্ষমতা দেখে অবাকই হয়েছেন। আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল কোনও এক বিশেষ প্রজাতির মাকড়সারই এই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে একমাত্র আন্টার্কটিকা বাদে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাপখেকো মাকড়সার দেখা মেলে। জার্নাল অব অ্যারাকনোলজিতে সম্প্রতি এই সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সুইজারল্যান্ডের বাসেল ইউনিভার্সিটির মাকড়সা বিশেষজ্ঞ মার্টিন নিফেলারের নেতৃত্বে একদল গবেষক সাপখেকো মাকড়সার জীবনযাত্রা নিয়ে সমীক্ষা চালান। তাতে দেখা গিয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণকারী মাকড়সাও অনেক সময় সাপ শিকার করে থাকে। সাপখেকো মাকড়সার সন্ধানে নিফেলারের সহকারী ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার মাকড়সা বিশেষজ্ঞ হুইটফিল্ড গিবন্স দীর্ঘদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। আর তাতে সাপশিকারি ৪০ ধরনের মাকড়সার হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। এই ৪০টি প্রজাতির মাকড়সার তালিকায় ট্যারান্টুলার মতো বড় আকারের মাকড়সাও আছে। তবে এগুলির মধ্যে থেরিডিস নামে এক বিশেষ প্রজাতির মাকড়সা সাপ শিকার করতে বিশেষ পারদর্শী।
আবার বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত মাকড়সা ব্ল্যাক উইডোও সাপ শিকার করে থাকে। মাকড়সার শিকার ধরার পদ্ধতিও আলাদা রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত জাল বুনে তাতে শিকার ধরার ফাঁদ পেতে রাখে মাকড়সা। কিন্তু কোনও কোনও মাকড়সা জাল না বুনে সুযোগ বুঝে শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কামড় দিয়ে শিকারের শরীরে বিষ ছড়িয়ে দেয়। আবার কিছু মাকড়সা রয়েছে যারা ছোট পাখিও শিকার করতে পারে। তবে সাপ শিকার করার পদ্ধতিটি বেশ চমকপ্রদ। থেরিডিস প্রজাতির মাকড়সার আকার ১০ সেমির বেশি হয় না। অথচ এই ছোট শরীর নিয়ে সাপ শিকার করার পদ্ধতি বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে। এই মাকড়সার বিশেষত্ব হল এরা মাটির উপরে বেশ শক্তপোক্ত জাল বুনতে পারে। সেই জালে সাপে আটকে গেলেই কেল্লা ফতে। জালে জড়িয়ে যাওয়ামাত্রই সাপের শরীরে কামড় দিয়ে ভয়ঙ্কর বিষ ছড়িয়ে দেয় এই মাকড়সা। বিষের প্রভাবে সাপটি ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যায়। আর কোনওভাবে নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না। সেই সুযোগে সাপটির শরীর জাল দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলে মাকড়সাটি। বিষের প্রভাবে সাপের শরীরে পচন ধরতে শুরু করে। এরপর সাপটি মরে যায়। তখন মাকড়সাটি সাপের শরীরের সব রস চুষে খেয়ে নিতে শুরু করে। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে এই রস মাকড়সাটি খেয়ে থাকে। তোমরা হয়তো ভাবছ, মাকড়সাকে সাপ কামড়ে দিলেই তো আর এভাবে তাকে মরতে হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয় না কেন? আসলে এই সাপখেকো মাকড়সা আকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে। আগেই বলেছি, এই ধরনের মাকড়সার আকার ১০ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না। এত ছোট একটা জীবকে কামড়ানো তাই সাপের পক্ষে সম্ভব হয় না। নিফেলার এবং গিবন্স জানিয়েছেন, সাপখেকো মাকড়সার বেশি দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। তবে অস্ট্রেলিয়াতেও এইরকম মাকড়সার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেখানে রেডব্যাক মাকড়সা দেখা যায়। এই মাকড়সার বিষ শুধু সাপই নয়, মানুষের ক্ষেত্রেও প্রাণঘাতী। জর্জিয়ায় একটা ব্ল্যাক উইডো মাকড়সাকে সাপ শিকার করতে দেখেছেন নিফেলার। এই মাকড়সার শরীরে যে বিষ রয়েছে তা ল্যাট্রোটক্সিন বলে পরিচিত, তিনি জানিয়েছেন। এই বিষ প্রাণীর শরীরের স্নায়ুতন্ত্রকে বিকল করে দেয়। ফলে এই মাকড়সার শিকার হওয়া প্রাণী ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ট্যারান্টুলা প্রজাতির মাকড়সা কোনও জাল বোনে না। এরা গাছের পাতায় বা ডালে লুকিয়ে থাকে। সাপের মতো কোনও শিকার পেলে সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর সাপের দেহে জোরালো কামড় দেয়। ভেনেজুয়েলায় ‘ফার দি ল্যান্স’ নামে এক ধরনের মাকড়সা দেখা যায়।
এই মাকড়সার বিষ মানুষের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী। বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়সার মধ্যে কী ধরনের বিষ থাকে তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে এখন বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন। সেই গবেষণায় একদিন হয়তো মাকড়সার প্রাণঘাতী বিষ থেকে মানুষকে রক্ষা করার প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।