জল এবং তার মধ্যে প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখার ক্ষমতা আমাদের এই পৃথিবী  নামক গ্রহটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কোরাল (প্রবাল) রিফের ক্রমাগত ক্ষয় মৎস শিল্প এবং জলের ক্ষেত্রে একটা বড় চিন্তার বিষয়। তাই সোনি বিবিসি আর্থ তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছে একটি নতুন শো ‘ওয়াটার ব্রাদার্স’,  যেখানে এই সময়ের জল সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি তোমাদের সামনে তুলে ধরা হবে। নীল গ্রহের প্রকৃত অবস্থার উপরে আলোকপাত করার মাধ্যমে কীভাবে আমরা আমাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উৎস জলকে রক্ষা করতে পারি, এই শো    তোমাদের তা বুঝতে সাহায্য করবে। এই প্রতিবেদনে চলো আমরা জলের নীচের বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম অংশ হিসেব এই কোরাল রিফকে একটু বোঝার চেষ্টা করি। জানা যাক কেন ওরা ক্রমশ অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে এবং কীভাবে ওদের রক্ষা করা যেতে পারে।      

কোরাল রিফ কী?
কোরাল রিফ বা প্রবাল প্রাচীরগুলো ‘সমুদ্রের বৃষ্টিবন’ নামে পরিচিত। কারণ প্রবালের মধ্যে বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ অসংখ্য জীবনের উৎসকে     খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যালশিয়াম কার্বোনেটের সাহায্যে অসংখ্য প্রবালের ঢিপি একসঙ্গে যুক্ত হয়ে এই প্রাচীরগুলো তৈরি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে উষ্ণ জলের মধ্যে বা কোথাও অন্ধকার কনকনে ঠান্ডা সমুদ্রের জলের নীচে প্রবালের হাজার হাজার প্রজাতি বাসবাস করে।      

 কোরাল ব্লিচিং কী এবং কীভাবে ঘটে?
প্রবালের বাহারি রং নষ্ট হয়ে গেলে তাকে বলা হয় ‘কোরাল ব্লিচিং’। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। যেমন— সমুদ্রের উষ্ণতা যখন বাড়তে শুরু করে, প্রবালরা তখন ক্লান্ত হয়ে শৈবালগুলিকে গা থেকে ছেড়ে দেয়। শৈবালগুলো মারা গেলে তখন প্রবালরা বিবর্ণ হয়ে যায়। আর তখন ওদের ঠিক দেখে মনে হয় যেন ‘ব্লিচ’ করা হয়েছে। তাপমাত্রা না কমা পর্যন্ত প্রবাল আর ওই শৈবালদের ফিরে আসতে দেয় না। ফলে ওরা মারা যায়। এছাড়াও সমুদ্রে প্রচণ্ড ভাটা, দূষণ এবং তীব্র সূর্যালোক অনেক সময় ‘কোরাল ব্লিচিং’ ঘটায়।

প্রাণী এবং মানুষের উপর কোরাল ব্লিচিংয়ের কী কী প্রভাব?
কচ্ছপ, মাছ, কাঁকড়া, ছোট চিংড়ি, জেলি ফিশ, সামুদ্রিক পাখি, তারা মাছ থেকে শুরু করে আরও হাজার হাজার জলজ প্রাণীরা বেঁচে থাকার জন্য প্রবাল প্রাচীরের উপর নির্ভর করে। আমাদের উপরেও কোরাল ব্লিচিংয়ের খারাপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কারণ এই প্রাকৃতিক প্রাচীরগুলো শক্তিশালী ঢেউ প্রতিরোধ করে উপকূলবর্তী জনপদগুলোকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। প্রবাল প্রাচীর না থাকলে আমাদের নিজেদের তৈরি কৃত্রিম বাঁধের উপরে নির্ভর করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। উল্টে সেগুলো আবার ব্যয়বহুল, কম কার্যকরী এবং অবশ্যই বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক।  

 প্রবাল প্রাচীরকে কীভাবে রক্ষা করা সম্ভব?
আমরা প্রবালকে ব্লিচিংয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার স্বার্থে আমাদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। ছোট ছোট কিছু জিনিস যেমন— সার, কীটনাশকের কম ব্যবহার প্রবাল প্রাচীরকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও সত্যি সত্যিই কোরাল ব্লিচিং বন্ধ করতে চাইলে আমাদের এই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মুখ খুলতে হবে। সেক্ষত্রে  সবার আগে বিশ্বের বিভিন্ন কোণে দূষণকে ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।