বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
সমগ্র পৃথিবী যখন প্রলয় জলে মগ্ন তখন ব্রহ্মপুরুষ ভগবান বিষ্ণু অনন্ত শয়নে যোগনিদ্রায় অভিভূত। তাঁর নাভিকমলে প্রজাপতি ব্রহ্মা সমাসীন। প্রলয়োত্তর পৃথিবীর নতুন সৃষ্টির ব্যাকুল প্রতীক্ষায় তিনি জাগরিত। হঠাৎ নিদ্রামগ্ন হরির কর্ণমল থেকে উদ্ভূত দুই দানব মধু ও কৈটভ উদ্যত হল ব্রহ্মার সংহারে। নিরুপায় ব্রহ্মা বিষ্ণুর জাগরণের জন্য যোগনিদ্রারূপিণী মহাকালিকার স্তবে নিমগ্ন হলেন। ভগবান বিষ্ণুর নিদ্রাভঙ্গ হল। যুদ্ধ আরম্ভ হল। সেই বলদর্পিত অসুরদ্বয় মহামায়া বিশ্বেশ্বরী ভগবতীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিষ্ণুকে আহ্বান করে বর প্রার্থনার জন্য।
মধ্যম চরিত্রে দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর রাজসী মূর্তি মহালক্ষ্মী রূপে প্রসিদ্ধা। বলা হয়েছে, দৈত্যরাজ মহিষাসুরের অত্যাচারে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেবগণ পদ্মযোনি ব্রহ্মার নেতৃত্বে একত্র হয়ে বিষ্ণু ও শিবের শরণাপন্ন হলেন। দেবতাদের কাছ থেকে এই বিপত্তির কথা শুনে মধুসূদন ও মহাদেব অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলে তাঁদের মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হতে লাগল। অন্যান্য দেবতার শরীর থেকেও বিপুল তেজরাশি বেরিয়ে এল। এই সম্মিলিত তেজঃপুঞ্জ থেকে আবির্ভূতা হলেন এক ভুবনমোহিনী দিব্য মাতৃমূর্তি। ক্রমে সমস্ত দেবতার পুঞ্জীভূত তেজ থেকে এই মহাদেবীর দেহের অন্যান্য অবয়ব গঠিত হল। তেজরাশিসমুদ্ভবা সেই সংঘশক্তিরূপিণী জ্যোতির্ময়ী মাতৃমূর্তিকে দর্শন করে অমরগণ অত্যন্ত আহ্লাদিত হলেন। তখন প্রত্যেকেই তাঁদের নিজ নিজ অস্ত্র, ভূষণ ও বাহনের দ্বারা সেই মহাবিদ্যা মহামায়াকে সুসজ্জিত করলেন। জগন্মাতার হুঙ্কারে ত্রিজগৎ কম্পমান। সেই ভীষণ যুদ্ধে দেবীর হস্তে সসৈন্যে মহিষাসুর বধ নিধনের পর স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাগণকে এই মহাদেবী মহালক্ষ্মী দান করলেন ঐশ্বর্য, বিজয় ও প্রতিষ্ঠা।
উত্তর চরিত্রে দেবী জ্ঞানশক্তি রূপে প্রকাশিতা। এই মহাদেবীর আবির্ভাব মহাসরস্বতী রূপে। ত্রিভুবনের আধাররূপিণী এই মহাশক্তি ধুম্রলোচন, চণ্ড, মুণ্ড, রক্তবীজ সহ শুম্ভ-নিশুম্ভ নামক প্রবল পরাক্রান্ত ভ্রাতৃযুগলকে বিনাশ করেন। পার্বতীর দেহকোষ থেকে এই দেবী সম্ভূতা বলে কৌশিকী নামে তিনি পরিচিতা।
মহিষাসুরের ন্যায় মহাবলশালী শুম্ভ-নিশুম্ভ ও ইন্দ্রাদি দেবগণকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাঁদের অধিকার কেড়ে নিলে দেবতারা তখন হিমালয়ে গিয়ে দেবী মহামায়ার স্তব করতে লাগলেন। এমন সময় দেবী পার্বতী উপস্থিত জাহ্নবীর জলে স্নান করার জন্য। দেবগণের সমবেত স্তবে দেবী চতুর্দিক আলোকিত করে জ্যোতির্ময়ীরূপে প্রকাশিতা হলেন। দেবীর ত্রিশূলাঘাতে নিশুম্ভ চলে গেল যমের সদনে। প্রাণপ্রিয় সহোদর নিশুম্ভ ও অপরাপর সৈন্যগণকে বিনষ্ট হতে দেখে শুম্ভ ক্রুদ্ধ হলেন। দেবীর অহংকারকে অযৌক্তিক বললেন। দেবী তখন মাতৃকাগণের শক্তি তিনি নিজ শরীরে অবলুপ্ত করে নিলেন। আবার শুরু হল ঘোরতর যুদ্ধ। দেবী চণ্ডিকা কর্তৃক শূলে বিদ্ধ হয়ে শুম্ভ নিহত হল। দেবতারা আবার হৃত রাজ্যে স্ব স্ব অধিকার গ্রহণপূর্বক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেন। গন্ধর্বেরা গান, অপ্সরারা নাচে মেতে গেলেন।