ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
দুর্গাপুজো পেরিয়ে বাতাসে এখন আলগা ঠান্ডা আমেজ। অল্প হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে কালীপুজো-দীপাবলি এল বলে। তার হাত ধরেই এসে পড়বে ভাইফোঁটাও। আজকাল শুধু ভাইফোঁটা নয়, সময়ের দাবি মেনে চল হয়েছে বোনফোঁটারও। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে যেমন বোন তার কপালে চন্দনের ফোঁটা দিতে পারে, তেমনই বোনের দীর্ঘায়ু ও কল্যাণার্থে ভাই কেন ফোঁটা এঁকে দেবে না বোনের কপালে? এ প্রশ্ন উঠেছে অনেকদিন ধরেই। তাই বউমাষ্টমীর মতোই আমাদের সমাজে এখন বোন-ফোঁটাও দস্তুর। এর সঙ্গে দাদুর কপালে প্রিয় নাতনির বা ছোট্ট নাতির কপালে দিদা বা ঠাকুরমার স্নেহের পরশ তো লেগেই থাকে। ভাইফোঁটা তাই আমাদের বড় আনন্দের, বড় কাছের উৎসব।
সঙ্গে সঙ্গে কালীপুজোও। এখন অবশ্য বাজারের নিয়মে তা অনেকটাই দীপাবলির জাঁকজমকে ঢেকেছে। নিয়ম মেনে বাঙালির কালীপুজো যেমন হয়, শক্তির আরাধনায় যেমন চিড় ধরেনি, তেমনই একটু একটু করে আমাদের মনে আলোর উৎসবের সঙ্গে মিশে গিয়েছে দেওয়ালির ঝলমলানি, ধনতেরসে গয়না কেনার ধুম— এ সবই। তাই দুর্গাপুজোর চারটে দিন, বিজয়ার প্রণাম আর মিষ্টিমুখের পর শরৎ-হেমন্তে যেটুকু উৎসবের মরশুম বেঁচেবর্তে থাকে, তার ষোলো আনা উশুল করে নিতে উন্মুখ থাকি আমরা সকলেই। সেই উশুল করে নেওয়ার মধ্যেই থাকে জবরদস্ত উপহারের লিস্টি আর চুটিয়ে খাওয়াদাওয়া। কালীপুজো এবং দীপাবলিতে ঘরদোর আলোকময় করে তোলার পাশাপাশি নিজের সাজগোজ পর্বটাও তো তোলা থাকে। সাজগোজের কথা যখন উঠলই তখন আপনাদের বেশ কিছু নতুন ধরনের শাড়ি পাঞ্জাবির খোঁজখবর দিই।
দীপাবলি বা কালীপুজোকে থিম করে আজকাল অনেকেই পোশাকে তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। ‘অঙ্কোনা’ ব্র্যান্ডের সঙ্গীতা মাজী তাঁর কালেকশনে এনেছেন সেই রকমই কিছু শাড়ি। কোনওটায় ভাইফোঁটার ছবি ফুটে উঠেছে কাঁথার সূক্ষ্ণ কাজে। বোন ভাইকে ফোঁটা দিচ্ছে, সঙ্গে সুতোর কাজে লেখা মন্ত্র, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা...।’ কোনওটায় আছে ফানুস ওড়ানোর প্রতিচ্ছবি। শাড়িতে প্রদীপের মোটিফ। দেড়শো কাউন্টের খাদি শাড়িটির রং উজ্জ্বল বেগুনি। যার আঁচলে উৎসবের মুহূর্ত। সরু পাড় জুড়ে সুতোর ঘন কাজ। মা কালীর বন্দনায় চিরকালীন লাল-সাদার জমিতে সঙ্গীতা এনেছেন মায়ের মুখ। আঁচলে মায়ের নীলরঙা অর্ধেক প্রতিরূপ। তার গলার জবার মালাও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সূক্ষ্ণ ঘন কাজে।
অঙ্কোনার পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। সঙ্গীতা জানালেন, সাধারণ বুটিক হিসেবেই কাজ শুরু করেছিলেন। বছর চারেক পর ফুলিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং কাটোয়ায় নিজের হ্যান্ডলুম উইভিং সেক্টর শুরু করেন তিনি। তার দু’বছর পরে শুরু হয় টেলারিং ইউনিটও। রঙের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ডাইয়ে ভরসা রাখেন। বললেন, ভাবনাটা তিনি স্কেচে ফুটিয়ে তোলার পর তা সুতোর সূক্ষ্ম নকশায় ভরিয়ে তোলেন হাতের কাজ জানা বাংলার অগুনতি প্রতিভাশালী মহিলা।
বোনেরা যেমন সাজবেন, ভাইরা কি পিছিয়ে থাকবেন? কখনওই না। দাদা কিংবা ভাই যেই হোন, তাঁদের পোশাক নিয়ে এখন বিস্তর ভাবনাচিন্তা করা হয়। এমনই একজন ডিজাইনার রাজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্র্যান্ডনেম, ‘রাজ ব্যানার্জী’। পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের পোশাকও বানান। এবার ভাইফোঁটার মরশুমে ভাইদের জন্য আমরা বেছে নিলাম পুরুষদের জন্য তাঁর করা নতুন কালেকশন।
রাজ দীপাবলি ও ভাইফোঁটার কথা মাথায় রেখে এনেছেন বেশ কিছু সুন্দর ধুতি পাঞ্জাবি। যেমন একটি আছে চান্দেরিতে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কম্বিনেশনে করা। কালো পাঞ্জাবির উপরে সুতো দিয়ে এমব্রয়ডারি করে ছোট ছোট ফুল। রাজ বলেন, ছেলেরা সাধারণত হালকা পোশাকের দিকেই ঝোঁকে। সে কথা মাথায় রেখেই কালেকশন এনেছেন তিনি। এগুলো যে কোনও সময়ে পরা যায়। এছাড়া রয়েছে কফি কালারের মোরাল স্যাটিনের (কটনেরই ফ্যাব্রিক) একটি পাঞ্জাবি যার গলার কাছে তসরের সুতো দিয়ে এমব্রয়ডারি করা। সঙ্গে অফ হোয়াইট ধুতিতে চকোলেট কালারের পাড়, যাঁরা একই সঙ্গে ট্র্যাডিশনাল এবং নরম রঙের পোশাক চান, সেই রাশভারি দাদা-বড়দার জন্য আদর্শ এটি। ট্র্যাডিশনালের পাশাপাশি একটু ওয়েস্টার্ন ছোঁয়া আনতে আর একটি পাঞ্জাবি এনেছেন রাজ, যার দুটো পার্ট। ভিতরে অলিভ গ্রিন মোরাল স্যাটিন কুর্তার সঙ্গে ওপরে অফ হোয়াইট প্রিন্টেড হাফ শেরওয়ানি। সঙ্গে অলিভ গ্রিন প্যান্ট। কমবয়সি যুবকদের চোখ টানবে এটা। রাজের কথায়, ‘একেক জনের পছন্দ একেকরকম। তাই সবরকম স্টাইল নিয়েই ভাবি।’
পিঙ্ক এখন পুরুষেরও রং। মেয়েদের শুধু পিঙ্ক মানায়, এই ধারণা এখন অতীত। কটনের মধ্যে দারুণ আরামদায়ক পিঙ্ক মোটিফের কাজ করা একটি সাদা পাঞ্জাবি করেছেন তিনি। যার গলার কাছে পিঙ্ক এমব্রয়ডারির ঘন কাজ। দেখতে কুরুশের কাজের মতো। গত ১২ বছর ধরে রাজ কাজ করছেন। মেয়েদের ব্লাউজ শাড়ি লেহঙ্গার পাশাপাশি ছেলেদের কুর্তা, শেরওয়ানিও বানান। তাঁর সিগনেচার কালেকশনে থাকে জরির কাজ এবং হ্যান্ড এমব্রয়ডারি। নতুন ধরনের কালার কম্বিনেশনে বিশ্বাসী তিনি।
রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় (পাঞ্জাবির জন্য): ৯৮৭৪৩৫৮৬৪২