ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
নানা প্রদেশের শাড়ি সংগ্রহ করতে বরাবরই ভালোবাসেন এ শহরের টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞ জয়িতা সেনগুপ্ত। শাড়ির যত্নআত্তি করা নিয়ে এর আগেও তিনি আমাদের নানা পরামর্শ দিয়েছেন। এবার তাঁর সংগ্রহ থেকেই কিছু ব্যতিক্রমী অভিজাত এবং নয়ন ভুলানো শাড়ি সাজিয়ে দিলাম। সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে জেনে নিলাম এক একটি শাড়ি তৈরির পিছনের ইতিহাস আর পরিশ্রমের কথা।
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার একটি গ্রামের নাম পোন্ডুরু। এই গ্রাম থেকে তৈরি হয় একটি বিশেষ সুতির শাড়ি, যার নাম এই গ্রামের নামেই। হাতে বোনা পোন্ডুরু কটন শাড়িতে ব্যবহার হয় প্রাকৃতিক ডাই। এর ফ্যাব্রিকের বিশেষত্ব হচ্ছে এর সুতোয়। যেসব তুলো থেকে এই সুতো বার করা হয়, সেই তুলো একমাত্র এই এলাকায় তৈরি হয়। এই সুতো বোনার মধ্যেও একটা বিশেষত্ব আছে। বীজ থেকে তুলো বের করার সময় ব্যবহার করা হয় ভাগুলা মাছের দাঁত। এই মাছও এই এলাকারই বিশেষত্ব। তারপর সে তুলো থেকে সুতো বের করা হয় বেশ কয়েকটি পর্যায়ে। সেটা ফুলিয়ে সরু লাঠি দিয়ে তা পিটিয়ে মসৃণ করা হয়। এতে ভিতরে থাকা সব ময়লাও বেরিয়ে যায়। এরপর তাকে প্রক্রিয়াকরণ করে কলা গাছের শুকনো কাণ্ডে রেখে দেওয়া হয়। এই কটন থেকে ১২০ কাউন্ট পর্যন্ত সুতো তৈরি করা যায়। সরু লাল পাড়ে স্নিগ্ধ নীল শাড়িটিই পোন্ডুরু কটন। মন কেমন শান্ত হয়ে যায় না এমন সাজে?
এবার দেখুন আর এক রাজ্যের অসাধারণ শাড়ি। মণিপুরে মইরাং ফি নামে একটি টেক্সটাইল ফ্যাব্রিক রয়েছে যার মধ্যে একটা নকশা থাকে, তার নাম ‘মইরাংফিজিন’। এই নামটিও মণিপুরের গ্রাম মইরাং থেকে এসেছে। কচি কলাপাতা রঙের কটন শাড়ির জমিতে লাল পাড়ের দাঁতের মতো যে নকশা দেখা যাচ্ছে, তাতেই এ শাড়ির বিশেষত্ব। মণিপুরি ফি শাড়ি কটন বা সিল্ক দু’টিতেই হয়। সিল্ক বা কটন সুতোয় পাড়ের এই নকশা লম্বালম্বিভাবে পরপর বোনা হয়। মইরাংফিজিন নকশাটিকে স্থানীয় ভাষায় বলে ইয়ারংফি (ইয়া-র অর্থ দাঁত, রং-এর অর্থ লম্বা)। অর্থাৎ সব মিলে দাঁড়াল লম্বা দাঁতের মতো নকশা যা মইরাং ফি ফ্যাব্রিকে বোনা হয়। মণিপুরি পুরাণে কথিত সাপের দেবতা হল পাখাংবা, তার পাতলা এবং ধারালো দাঁত তুলে ধরতেই এই নকশার জন্ম।
মণিপুর থেকে চলুন এবার অসমে। আমরা দেখব এখানকার ইরি সিল্ক। ইরি শব্দটা এসেছে অসমিয়া শব্দ ‘এরা’ থেকে। এর অর্থ ক্যাস্টর। ক্যাস্টর গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে সিল্ক ওয়ার্ম। ভারতের অন্যত্র ইরি সিল্ককে এন্ডি বা এরান্ডিও বলা হয়। ইরি সব ধরনের সিল্কের মধ্যে সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব বলে মনে করা হয়। এই সিল্ক এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে কোনও সিল্ক ওয়ার্ম মারা না পড়ে! তাই একে অহিংসা সিল্ক বা ‘শান্তির ফ্যাব্রিক’ও বলা হয়। এটি সব সিল্কের মধ্যে সেরা সিল্ক যা সবচেয়ে নরম এবং বহুদিন টেকে। সিল্ক শাড়ি যাদের প্রিয়, তারা এর কদর জানে। বস্তুত উত্তর-পূর্বের দু’টি গর্ব ইরি এবং মুগা সিল্ক। এমনিতে ইরি সিল্ক থেকে উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের মানুষজন চাদর তৈরি করেন। উত্তরপূর্বে অসম ও মেঘালয়ের পাশাপাশি বিহার, ওড়িশা এবং আমাদের রাজ্যেও এই সিল্ক পাওয়া যায়। কোনও কীটও এতে মারা পড়ে না বলে এই সিল্ক ভারত সহ ভুটান, নেপাল, চিন এবং জাপানের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। সিল্ক ওয়ার্ম ইরি সিল্কে একটা মেটে সোনালি হলুদ আভা তৈরি করে। এই সিল্ক অন্য সাধারণ সিল্কের তুলনায় একটু ভারী হয়, উল বা কটনের সঙ্গে ভালো মিশেও যায়। আর এর মজা হল, এটি গরমে ঠান্ডা বোধ করায় আর শীতে উষ্ণ। সিল্কের চকচকে জৌলুস এতে নেই, তাই যেখানে খুশি স্বচ্ছন্দে পরা যেতে পারে। এর আর একটি প্লাস পয়েন্ট, এ শাড়িতে ভাঁজ পড়ে না।
এবার একটু পশ্চিমের দিকে তাকানো যাক। গুজরাতের কচ্ছের হাতে বোনা ভুজোড়ি শাড়ি নিয়ে একটু বলি। ভুজ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের ছোট শহর ভুজোড়ি। এটিকে কচ্ছের টেক্সটাইলের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতে পারে। একসময় তাঁতিরা সুতির এই নকশা বুনতেন উলের চাদর, কম্বল অথবা পাগড়িতে। শালের সেই কাজই এ যুগে উঠে এসেছে ভুজোড়ি শাড়িতে। সে অর্থে এটি কিছুটা আধুনিক। তিন থেকে পাঁচ দিন লাগে এ শাড়ি বুনতে। এখন তাঁতিরা সিল্ক, লিনেন, সুতির নানা ভ্যারাইটিতে এই নকশা আনছেন।
পোন্ডুরু কটন, ইরি সিল্ক, মণিপুরি ফি কটন, ভুজোড়ি কটন
মডেল : অগ্নিশা বসাক ছবি : সায়ন দে
শাড়ি : জয়িতা সেনগুপ্ত
যোগাযোগ : ৯০৫১৫৮৭৩০৪