ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
ল্যাকমে ফ্যাশন উইক এবার অনেকটাই স্বমেজাজে ফিরেছিল। ল্যাকমের ‘ফিজিক্যাল’ আর ‘ডিজিটাল’ প্রাঙ্গন জমজমাট ছিল নামী, অনামী, নবীন, প্রবীণ ডিজাইনারদের নতুন নতুন সৃষ্টিকথায়। আর তার সঙ্গে এই ফ্যাশন উৎসব আরও বর্ণময় হয়ে উঠেছিল বলিউড তারকাদের দ্যুতিতে। পাঁচ দিন ব্যাপী এই উৎসবের ফিজিক্যাল শো-গুলির আসর বসেছিল মুম্বইয়ের জিও কনভেনশন সেন্টারে। সেই আসর থেকে তুলে ধরা হল কিছু ব্যতিক্রমী এবং নজরকাড়া আয়োজনের কথা।
নবীনের জয়গান
ফ্যাশন উৎসবের শুভ সূচনা হয়েছিল নবীনের জয়গান গেয়ে। ‘আইএনআইএফডি’ তার ‘জেননেক্সট’ শীর্ষক আয়োজনে প্রতিবারের মতো এবারও নিয়ে এসেছিল দুই নবাগত ডিজাইনারকে। ডিজাইনার দীপিত ছুঘ তাঁর ‘লাইন আউটলাইন’ লেবেলের হাত ধরে নিয়ে এসেছিলেন পুরুষদের পোশাকের আগামী ফ্যাশন ট্রেন্ড। কটন, কটন ব্লেন্ড, বেমবার্গ সিল্ক, টুইল ফেব্রিকের উপর মেলে ধরেছিলেন কর্ডিং, পিটা ওয়ার্ক, আর হালকা জারদৌসি কাজ। এদিকে আর এক নবাগত ডিজাইনার টুইঙ্কল হংসপাল বেশি জোর দিয়েছেন ফেব্রিক কর্ডিং, লাইন স্টিচ, আর ডাবকা এমব্রয়ডারিতে।
‘রুমেলি’ রূপে মৃণাল
ফ্যাশন দুনিয়ার অভিজ্ঞ এবং খ্যাতনামা ডিজাইনার জেজে ভালায়া ল্যাকমের প্রথম রাতকে বর্ণময় করে তুলেছিলেন তাঁর চোখ জুড়ানো এক প্রদর্শনে। ‘রুমেলি’ শীর্ষক এই আয়োজনে তিনি তুরস্কের প্রাচীন শিল্পকলাকে নিজের রঙে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। বিয়ের রাতে এবার ভারতীয় কনে যাতে তুর্কি সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে পারেন, তারই পথ দেখালেন ভালায়া। পুরুষদের পোশাকে শেরওয়ানি, কুর্তার বাহার এনেছিলেন এই প্রবীণ ডিজাইনার। জেজে ভালায়ার ডিজাইন করা লেহেঙ্গা-চোলি পরে ডিজিটাল র্যাম্প আলোকিত করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী মৃণাল ঠাকুর।
বধূ বেশে ডায়ানা
কনের পোশাকের নতুন সংজ্ঞা তুলে ধরেছিলেন ডিজাইনার আয়েশা রাও। তিনি ‘পেপার ডল’ শীর্ষক আয়োজনে কনের পোশাকের অভিনবত্ব মেলে ধরেছিলেন। পোশাকের পাশাপাশি রং নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন আয়েশা। তিনি তাঁর কালেকশনে ইবোনি, ল্যাভেন্ডার গোল্ড, আর পিঙ্কের হালকা শেড নিয়ে এসেছেন।
ডিস্কো লুক
এই শো-এর হাত ধরে ফ্যাশন দুনিয়ায় এবার পা রাখলেন অমিতাভ বচ্চনের কন্যা শ্বেতা বচ্চন নন্দা। তিনি মনীষা জয়সিংয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ল্যাকমের নতুন ব্র্যান্ড ‘দ্য এমএক্সএস’ লেবেল। শ্বেতা আর মনীষা ল্যাকমের আঙিনায় জীবন্ত করেছিলেন আটের দশকের ডিস্কো এবং স্ট্রিট ওয়্যার লুক। এই জুটি র্যাম্পে নিয়ে এসেছিলেন স্লিট মিডি, জ্যাকেট, শর্ট ওয়ান পিস, অফ শোল্ডার ফ্রক, লং পালাজো উইথ জ্যাকেট, ম্যাক্সি গাউন, টিউব উইথ প্যান্ট সহ আরও নানা টেন্ড্রি পোশাক। তাঁরা এই আয়োজনে পার্পল রেন, মায়ামি পিঙ্ক, নিওন ইয়েলো, ইউএফও গ্রিন সহ আরও নানা রং নিয়ে খেলা করেছিলেন। এছাড়া শ্বেতা আর মনীষা এই মঞ্চে মেলে ধরেছিলেন স্পোর্টি লুকের নানা বাহার।
‘চাঁদ’ রূপী তাপসী
খ্যাতনামা ডিজাইনার গৌরাঙ্গ শাহ জাদু-আবহ সৃষ্টি করেছিলেন র্যাম্পে। তাঁর এই আয়োজনের নাম ছিল ‘চাঁদ’। অনুপ জলোটার গজলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গৌরাঙ্গর সৃষ্টি গায়ে মেখে মঞ্চ আলো করেছিলেন এক ঝাঁক মডেল। তিনি এই আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী জামদানি সিল্ককে আধুনিক রঙে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। জামদানিকে আধুনিক রূপ দেওয়ার জন্য গৌরাঙ্গ প্যাস্টেল শেডে হালকা গোলাপি আর হালকা সবুজের মতো আকর্ষণীয় রং ছাড়া এমব্রয়ডারির সাহায্যও নিয়েছেন। প্রখ্যাত এই ডিজাইনারের ডিজাইন করা হালকা সবুজ ফুলেল চওড়া পাড়ের হাতে বোনা গোলাপি রঙের জমকালো জামদানি শাড়ি গায়ে মঞ্চে স্নিগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী তাপসী পান্নু।
‘দ্য মাস্টার্স ওয়ার্ডস’
খ্যাতনামা ডিজাইনার রাজেশ প্রতাপ সিং সাত-আটের দশকের ফ্যাশন ধারাকে আবার র্যাম্পে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। কিংবদন্তী ডিজাইনার সত্য পালের ছাতার তলায় তিনি ‘দ্য মাস্টার্স ওয়ার্ডস’ শীর্ষক বর্ণাঢ্য পরিবেশন করেছিলেন। রাজেশ এই আসরে নিয়ে আসেন যুগান্তকারী কার্বন জিরো টেনসেল ফাইবার। এই পোশাকগুলোয় কেবল টেকসই তন্তু (ফাইবার) ব্যবহার করা হয়েছে। আর পোশাকগুলো তৈরির সমগ্র প্রক্রিয়াতে কার্বন একেবারেই উৎপাদিত হয়নি বলে রাজেশ জানিয়েছেন। তাঁর এই আয়োজনে মেয়েদের জন্য ছিল সামার স্যুট, মিনি জ্যাকেট উইথ প্যান্ট, ড্রেস, ড্রেপড স্কার্ট, টিউনিক, হুডি এবং জগার, কাফতান, হাঁটু অবধি ঝোলা কোট, পিনাফোর, টোগাস, হল্টার, জাম্পস্যুট, এবং বাইকার জ্যাকেট সহ আরও নানা পোশাক। আর পুরুষদের জন্য ছিল স্যুট, টি-স, শার্ট এবং ট্রাউজার। রাজেশ তাঁর ক্যানভাসে সাদা, লাল, গোলাপি, গেরুয়া, নীল, সবুজ সহ নানা রঙের আঁচর কেটেছেন। এই ডিজাইনারের ডিজাইন করা কালো রঙের লেস বডিস্যুট, প্যান্ট, আর টাক্সেডো জ্যাকেটের সঙ্গে স্যাটিন লেপেল পরেছিলেন বলিউড নায়িকা তৃপ্তি ডিমরি। আর বলিউড অভিনেতা রাহুল বোসের পরনে ছিল কালো রঙের স্যুট।
ইজি টু ওয়্যার
সহজে পরা যায় এমনই আরামদায়ক পোশাকের বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির ছিলেন আর এক নামজাদা ডিজাইনার ডেভিড আব্রাহাম আর রাকেশ ঠাকুর। তাঁদের এই আয়োজনে নজর কেড়েছে প্যাচওয়ার্ক, হ্যান্ড স্টিচিং আর অ্যাপ্লিকের বৈচিত্র্য। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের গ্র্যাফিক প্যাটার্নের সঙ্গে তাঁরা পরিচয় করিয়েছিলেন। ‘ইজি টু ওয়্যার’ পোশাকের ট্রেন্ডে আব্রাহাম আর ঠাকুর নিয়ে এসেছিলেন কিমোনো ইন্সপায়ার্ড জ্যাকেট, টিউনিক, প্যান্ট, র্যাপ স্কার্ট, লং স্কার্ট সহ আরও বাহারি পোশাক।
রঙের ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করেছেন সাদা, কালো, বার্গেন্ডি, লাল, ওয়াইন, কফি, অলিভ সহ নানা ক্লাসিক রঙ। আব্রাহাম আর ঠাকুরের চোখ জুড়ানো এই আয়োজনকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী দিয়া মির্জা। তাঁর অঙ্গে ছিল কালো বিমূর্ত প্যাচওয়ার্ক কাফতান।
কালার্স অব ইন্ডিয়া
‘কালার্স অব ইন্ডিয়া’-র ছাতার তলায় চার ডিজাইনার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন। ভারতের পূর্ব থেকে পশ্চিম, আর উত্তর থেকে দক্ষিণের সব শিল্পকলা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল এই মঞ্চে। ডিজাইনার সংযুক্তা দত্ত উন্মোচন করেছিলেন ‘চিকিমিকি’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী সম্ভার। তিনি অসমের ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছিলেন এদিনের আসরে। অসম সিল্কের শাড়ি, আর মেখলা ছাড়া রংবাহারি পাশ্চাত্য পোশাকের সন্ধান দিয়েছেন সংযুক্তা। ব্লাউজ উইথ পেনসিল স্কার্ট, ড্রেপড জ্যাকেট, টিউনিক, স্ট্র্যাপি গাউন উইথ থ্রিডি অ্যাপ্লিক, মিনি টেন্ট ড্রেস, পোলকা ডটেড অ্যাসিমেট্রিক স্কার্ট, র্যাপ আরাউন্ড ব্লাউজ সঙ্গে লুঙ্গি স্কার্ট, ফ্লোরাল ব্লাউজ বেল্টেড উইথ লম্বা ঝুলের স্লিম স্কার্ট, অফ শোল্ডার গাউন সহ আরও নানা বাহারি হাল ফ্যাশনের পোশাক তিনি প্রদর্শিত করেছিলেন। সংযুক্তার ডিজাইন করা কালো মেখলা চাদর বেল্টেড শাড়ি আর স্ট্র্যাপি ব্লাউজ পরে মঞ্চ আলোময় করেছিলেন অভিনেত্রী দিব্যা খোসলা কুমার। এছাড়া অপর তিন ডিজাইনার শিখা-সৃষ্টি, অন্নু’স ক্রিয়েশন, আর মেঘা জৈন মদনের আয়োজনও ছিল নান্দনিক। তাঁদের শো-স্টপার হয়ে র্যাম্পে ঝড় তুলেছিলেন তিন অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা সিং, মালাইকা অরোরা আর সোহা আলি খান।
পাশ্চাত্যের বাহার
খ্যাতনামা ডিজাইনার অনামিকা খান্না তাঁর পরিবেশনার মাধ্যমে এক ঐন্দ্রজালিক আবহের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি পাশ্চাত্য পোশাকের এক নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। অনামিকার ডিজাইন করা কালো রঙের অ্যাসিম্মেট্রিকাল ড্রেস পরে ল্যাকমের এই রাতকে মায়াবী করে তুলেছিলেন অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কাপুর।
জলপরী
ল্যাকমে ফ্যাশন উইক-এর সমাপনী রাত পোশাকের চমকে আর তারকার দ্যুতিতে ঝলমলিয়ে উঠেছিল। জনপ্রিয় ডিজাইনার গৌরব গুপ্তা সমুদ্রে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল এবং অন্যান্য প্লাস্টিক উপকরণ দিয়ে নতুন এক সৃষ্টিকথার জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পরিবেশনার মাধ্যমে সমুদ্রের নানা রং, রূপ, আর মেজাজকে মেলে ধরেছিলেন। এই ডিজাইনার নারী-পুরুষের পাশ্চাত্য পোশাকের অভিনবত্ব নিয়ে এসেছিলেন ল্যাকমের শেষ রাতে। গৌরবের ডিজাইন করা আইভরি ও হালকা সোনালি রঙের ভারী গাউন পরে এই রাতের উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী করিনা কাপুর খান। তিনি যেন ‘জলপরী’ হয়ে উঠেছিলেন ল্যাকমের শেষ রজনীতে।