পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমে পরিবেশ ও সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে জীববৈচিত্র্য, দূষণ, বাস্তুতন্ত্র থেকে নানারকম প্রশ্ন প্রতিবছর আসে। সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার্থী নিজে কী ভাবছে প্রশ্নে সেটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। যেমন ধরা যাক, মাধ্যমিক ২০১৯-এ সুন্দরবন বাস্তুতন্ত্রের ওপর একটি প্রশ্ন ছিল এরকম, ‘সুন্দরবনে একটি গবেষণা করতে গিয়ে তুমি নিম্নলিখিত তিনটি সমস্যা শনাক্ত করলে – খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত, নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধবংস, উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে দ্বীপভূমির নিমজ্জন। জীববৈচিত্র্যের উপর এদের প্রভাব কী কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করো’। খাদ্য-খাদক সম্পর্ক ভেঙে পড়া সুন্দরবনের প্রধান সমস্যা। এর মূলে আছে বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়া। এটা আমাদের জানা। কিন্তু বাঘ না থাকলে পরিবেশে কী কী ঘটতে পারে সেটাকে বিজ্ঞানের ধারণা কাজে লাগিয়ে লেখাটাই এই প্রশ্নের উত্তর হবে। একইভাবে শহরকেন্দ্রিক আধুনিক জীবন সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ক্ষতি করছে। এতে জীবজন্তুদের ক্ষতি হচ্ছে। কাদের কী ক্ষতি হচ্ছে সেটাই এখানে লিখতে হবে, কারণ জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাবটাই প্রশ্নের মূল বিষয়। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে ওঠার মানে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’। সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যের ওপর এর কী প্রভাব এখানে সেটা বলতে হবে। আর বলতে হবে নিজের মতো করে। কাজেই এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য পড়ার বইয়ের বাইরে একটু ভাবার অভ্যাস থাকা দরকার।
আর একটি প্রশ্ন, ‘বাঘ বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ হরিণ প্রচুর আছে। এমন একটি জঙ্গলে অন্য অভয়ারণ্য থেকে এনে কয়েকটি বাঘ ছাড়া হল। বেঁচে থাকতে গিয়ে ওই বাঘেদের যে যে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে তা ভেবে লেখ।’ বুঝতেই পারছ, এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর গতানুগতিকভাবে বইতে নিশ্চয় লেখা থাকে না। অনেকেই প্রশ্নে ‘জীবনসংগ্রাম’ শব্দটি পেয়েই তাকে ডারউইনের তত্ত্বে ‘স্ট্রাগল ফর এগজিস্টেন্স’ এর সমতুল ধরে নিয়ে লিখতে শুরু করতে পারে। তবে সেভাবে লেখার আগে ভাবা দরকার। যেকোনও জীবের কাছেই নতুন পরিবেশের মানে কী। তার সম্ভাব্য বিপদ কী, সুবিধা কী ইত্যাদি। কাজেই এখানেও ভেবে লিখতে হবে। ডারউইনের কথা যদি লিখতেও হয়, সেটাও প্রশ্নানুযায়ী প্রাসঙ্গিক করে নিতে হবে। মনে রাখা উচিত ডারউইনের তত্ত্ব দীর্ঘকালব্যাপী বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। এখানে কিন্তু প্রশ্নটা তাৎক্ষণিক মানিয়ে নেওয়ার।
প্রশ্নপত্রে এম সি কিউ ও অবজেকটিভের জন্য ৩৬ নম্বর থাকে। এর পুরোটাই পাওয়া সম্ভব। এখানে পরীক্ষার্থীর বিশেষ ভাবনারও কোনও অবকাশ নেই। বই খুঁটিয়ে পড়া থাকলে উত্তর করা যায়।
জীবনবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের প্রতিটি অধ্যায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। বারবার অভ্যাসের মধ্যে দিয়ে ও নানা ধরনের প্রশ্ন সমাধানের মাধ্যমে একই বিষয়ের ওপর নানারকম উত্তর লেখার ধারণা তৈরি হয়। যেমন ধরা যাক, নাইট্রোজেন চক্র। এর চক্রাকার পথটি যেমন জানতে হবে, তেমনই নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ, ব্যাকটিরিয়ার ভূমিকা, নাইট্রোজেন বাতাসে মুক্ত হওয়ার প্রতিটি ধাপ উদাহরণসহ আলাদাভাবেও প্রশ্নে আসতে পারে। ঠিক যেমন বংশগতি অধ্যায়ে সরাসরি মেন্ডেলের পরীক্ষার প্রশ্নের পাশাপাশি মেন্ডেলের সাফল্যের কারণ, ব্যাকক্রস, টেস্টক্রস, জিনোটাইপ ফিনোটাইপের পার্থক্য এইধরনের নানা প্রশ্নও আসতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপনায় সাড়া দেয় একটি নির্দিষ্ট পথে। গ্রাহক উদ্দীপনা নেয়। স্নায়ুপথে তা মস্তিস্কে যায়। মগজে সেই উদ্দীপনা ‘প্রসেসিং’ হয়। সেখান থেকে উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া আবার স্নায়ুপথে যায় কারকে। এভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়। মানুষ তো বটেই, অন্য অনেকেই এভাবে সাড়া দিয়ে থাকে। প্রশ্নে বলা হল, ‘দরজায় ঘণ্টা বাজার শব্দ শুনে তুমি যেভাবে দরজা খুলবে, সেই স্নায়বিক পথটি একটি শব্দছকের মাধ্যমে দেখাও।’ প্রশ্নের সঙ্গে জুড়ে গেল একটি অনুষঙ্গ। গল্পের মতো। মাধ্যমিকের প্রশ্নে এই ধারা লক্ষণীয়। মূল প্রশ্নটিকে বের করে আনতে পারলেই উত্তরের অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
ভাবমূল অনুসারে কতকগুলি অংশ উল্লেখযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এগুলি দেখা যেতে পারে।
জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় - উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোনের নাম কাজ উৎস প্রভাব। উদ্ভিদ চলনের প্রকারভেদ ও তার উদাহরণ। স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণী বিভাগ, স্নায়ুর ও স্নায়ুকোষের গঠন, প্রতিবর্ত ক্রিয়া, পাভলভের পর্যবেক্ষণ, মানব মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ ও তার কাজ। বিভিন্ন প্রাণীর গমন পদ্ধতি। চোখের লম্বচ্ছেদের ছবি ও তার গঠন, প্রতিবর্ত চাপের ছবি ও গঠনগত উপাদান।
জীবনের প্রবহমানতা - ক্রোমোজোমের গঠন ও ছবি (আদর্শ ক্রোমোজোম)। অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম। ডি এন এ অণুর গঠন উপাদান। মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের ছবি, ঘটনাবলি এবং গুরুত্ব। কোষচক্র ও ক্যান্সারের কারণ। উদাহরণসহ অঙ্গজজনন ও যৌনজনন। জনুক্রম। সপুষ্পক উদ্ভিদের দ্বিনিষেক প্রক্রিয়া।
বংশগতি ও সাধারণ জিনগত রোগ - বংশগতি সম্বন্ধীয় মেন্ডেলের পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ সিদ্ধান্ত। বংশগতির সূত্র। পরীক্ষা মাধ্যম হিসেবে মটরগাছ নেওয়ার সুবিধা। মটরগাছের সাতজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য। অসম্পূর্ণ প্রকটতা। সমপ্রকটতা। ক্রোমোজোমের সাপেক্ষে মানব শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ। থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া রোগের কারণ ও প্রভাব।
বিবর্তন ও অভিযোজন - প্রাণের উৎপত্তির রাসায়নিক ভিত্তি। ইউরে ও মিলারের পরীক্ষা। চার্লস ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব (প্রাকৃতিক নির্বাচন)। ঘোড়ার বিবর্তন। জীবন্ত জীবাশ্ম। সমসংস্থ ও সমবৃত্তীয় অঙ্গ। বিবর্তনের প্রমাণসমূহ। উদ্ভিদ ও প্রাণীর অভিযোজনের উদাহরণসমূহ। আচরণগত অভিযোজনে শিম্পাঞ্জী ও মৌমাছির বিশেষ অভিযোজন।
পরিবেশ, সম্পদ ও সংরক্ষণ - নাইট্রোজেন চক্র। বায়ু জল ও শব্দদূষণের কারণ, ফলাফল ও প্রতিকার। জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও তার সমস্যা। পরিবেশের প্রভাবজনিত নানা রোগব্যাধি। জাতীয় উদ্যান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও অভয়ারণ্য। বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ধারণা। ইনসিটু ও এক্সসিটু সংরক্ষণ।
জে এফ এম, পি বি আর। ভারতের বিপন্ন প্রাণীরা।
পরীক্ষা ব্যাপারটার অর্ধেক হল উত্তর, আর বাকিটা উত্তরপত্র। ভালো পরীক্ষার বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল ঝকঝকে খাতা। মুক্তোর মতো হাতের লেখা সবার হয় না। সেটা হওয়া খুব জরুরিও নয়। লেখা যেন পড়ে বোঝা যায়, যাকে ‘বোধগম্য’ বলে, তা যেন হয়। খাতায় যেন যত্নের ছাপ থাকে। কিছু একটা লিখে দিলাম, বুঝে নেওয়ার দায় যিনি খাতা দেখবেন তার—এই ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া ঠিক নয়। খাতায় অযথা নোংরা করে কাটাকুটি না থাকে, অপ্রাসঙ্গিক কথা না থাকে। একটি প্রশ্নের উত্তর যেন সারা খাতাজুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে না থাকে। একজায়গায় যেন পরপর থাকে। প্রশ্নের ক্রম অনুসারে খাতায় উত্তর লেখবার চেষ্টা করা উচিত। ভুল বানান এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে। অবশ্য এর জন্য বইটি ঘেঁটে পড়া থাকলে ভালো হয়। উত্তর হবে ছোট ছোট বাক্যে। প্রশ্নের নির্দেশ মেনে। অনেক সময় প্রশ্নের ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয়। সেখানে ইংরাজি ভার্সনের প্রশ্ন দেখে নিতে পারা যায়। ছবি অবশ্যই পেন্সিলে আঁকতে হবে। চিহ্নিত করতে হবে পেন্সিল দিয়েই। স্তম্ভ মিলের প্রশ্নে দাগ টেনে না মিলিয়ে পাশাপাশি মিলিয়ে লিখে মিল দেখানো সবচাইতে ভালো। আর কি। পরীক্ষা খুব ভালো হোক। শুভেচ্ছা রইল।