পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
ব্রিটিশ শাসনের সূচনা থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের আগে পর্যন্ত ব্রিটিশ বিরোধী বিভিন্ন কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই সময়কালে যেহেতু অনেকগুলি বিদ্রোহ হয়েছিল তাই অধ্যায়টি ছাত্রছাত্রীদের কাছে অনেক বেশি তথ্যবহুল এবং ভারী মনে হয়। এই আলোচনার উদ্দেশ্য হল অধ্যায়টিকে অনুশীলনের মাধ্যমে সহজে কীভাবে আয়ত্ত করা যায় সে সম্পর্কে দিক নির্দেশ করা। এই অধ্যায়ে সাধারণত শিক্ষার্থীরা যে সমস্যায় পড়ে সেটি হল— একটি বিদ্রোহের সঙ্গে অন্য বিদ্রোহের কারণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে গুলিয়ে ফেলা। তাই প্রথমেই যদি তারা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিদ্রোহগুলির মধ্যে শ্রেণীবিভাগ করে নেয় তবে তাদের সুবিধা হবে।
ক. উপজাতি কৃষক বিদ্রোহ :
i. চুয়াড় বিদ্রোহ, ii. কোল বিদ্রোহ iii. মুন্ডা বিদ্রোহ
iv. সাঁওতাল বিদ্রোহ, v. ভিল বিদ্রোহ।
খ. ধর্মীয় ভাবাদর্শের মিশ্রণে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ: i. সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহ, ii. ওয়াহাবি আন্দোলন, iii. ফরাজি আন্দোলন, iv. পাগলাপন্থীদের বিদ্রোহ।
গ. শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ:
i. নীল বিদ্রোহ, ii. রংপুরের কৃষক বিদ্রোহ,
iii. পাবনা কৃষক বিদ্রোহ।
এইবার এই বিদ্রোহগুলি সম্পর্কে যদি একটি ছক তৈরি করে নেওয়া যায় তাহলে বিদ্রোহের সময়কাল এবং নেতৃত্ব সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা তৈরি করা সম্ভব । যেমন- বিদ্রোহের নাম/সময়কাল/ প্রধান নেতা/ বিদ্রোহের এলাকা।
এই অধ্যায় থেকে প্রতিটি বিভাগেই (ক-ঙ) সব ধরনের প্রশ্নই মাধ্যমিকে থাকে। ‘ক’ বিভাগের বহু বিকল্পভিত্তিক উত্তর লেখার ক্ষেত্রে ছকটি বিশেষ কার্যকরী হবে। ‘খ’ বিভাগে (প্রশ্ন মান-১) এই অধ্যায় থেকে অন্তত দুটি মানচিত্রে চিহ্নিতকরণ থাকে। বিদ্রোহের এলাকা ও কেন্দ্রের নাম লিখে চিহ্নিত করতে বলা হয়। পরীক্ষার্থীরা অনেক সময় কেন্দ্র ও এলাকা বলতে কী চিহ্নিত করতে হবে তা ভুল করে। কেন্দ্র বলতে বিদ্রোহ হয়েছিল এমন জায়গাকে চিহ্নিত করতে হবে। এলাকা বলতে পুরো অঞ্চলকে চিহ্নিত করতে হবে। ম্যাপ-এর ভেতরে চিহ্নিত জায়গাগুলিতে প্রশ্ন নম্বর এবং ম্যাপের পাশে প্রশ্ন নম্বর লিখে জায়গার নাম লিখতে হবে।
‘গ’ বিভাগে (প্রশ্নমান-২) সংক্ষিপ্ত উত্তর দুটি বা তিনটি বাক্যে লিখতে হয়। পরীক্ষার্থীরা অনেক সময় বুঝতে পারে না এই উত্তরের ক্ষেত্রে তারা কতটা লিখবে। এই উত্তর লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে দুটি বা তিনটি বাক্য তারা লিখবে সেই বাক্যগুলি যেন তথ্যসমৃদ্ধ হয়।
যেমন— ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন? উত্তর হবে হাজী শরিয়ৎউল্লাহ ইসলাম ধর্মসংস্কারের জন্য এই আন্দোলন শুরু করলেও দুদুমিঞার আমলে এটি জমিদার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। দুদু মিঞা বলেছিলেন আল্লাহর দান করা জমিতে কর ধার্য করার অধিকার সরকার বা জমিদার কারও নেই। এই বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মুসলিম, দরিদ্র হিন্দু কৃষকরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল।
এই বিভাগে বোধমূলক প্রশ্নগুলো অনুশীলন করা বিশেষ প্রয়োজন। যেমন বিদ্রোহ/ বিপ্লব/ অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝো? পাগলাপন্থীদের বিদ্রোহকে কি কৃষক বিদ্রোহ বলা যায়? নীল বিদ্রোহে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী ছিল?
‘ঘ’ এবং ‘ঙ’ বিভাগের প্রশ্নগুলির অনুশীলনের ক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্রোহের লক্ষ্য, কারণ, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র, ফলাফল ও ব্যর্থতার কারণ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে সাঁওতাল, মুন্ডা ও নীল বিদ্রোহের ওপর এরকম প্রশ্ন তৈরি করা যেতে পারে। কারণ সম্পর্কে বলা যায়, প্রতিটি বিদ্রোহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একইরকম কতকগুলি কারণ আছে। যেমন—ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব নীতি, জমিদার এবং মহাজনদের শোষণ। আবার প্রতিটি বিদ্রোহের নিজস্ব কিছু কারণ ছিল যেমন -মুন্ডাদের ক্ষেত্রে ‘খুৎকাঠি’ ‘যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা বাতিল করা’। সন্ন্যাসী ফকিরদের ক্ষেত্রে তীর্থযাত্রা ধর্মাচরণে বাধাদান। নীল বিদ্রোহের ক্ষেত্রে ‘বেএলাকা চাষ’ বা ‘দাদনী’।এইরকম কারণগুলিকে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এই অধ্যায়ে আর একরকমের প্রশ্নের ধরন থাকে, চরিত্র বিশ্লেষণ করা। যেমন সংসদের নমুনা প্রশ্নে আছে নীল বিদ্রোহের চরিত্র বিশ্লেষণ কর। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে কতগুলি কথা মাথায় রাখতে হবে। যেমন— বিদ্রোহ সশস্ত্র না নিরস্ত্র, কোন আর্থসামাজিক স্তর থেকে অংশগ্রহণকারীরা উঠে এসেছেন, বিদ্রোহে ধর্মের ভূমিকা কতখানি ছিল ইত্যাদি।
এই অধ্যায় থেকে ‘ঙ’ বিভাগের প্রশ্ন (প্রশ্নমান-৮) লেখার ক্ষেত্রে ম্যাপ এঁকে বিদ্রোহের এলাকা বা কেন্দ্র চিহ্নিত করে নাম লিখলে উত্তরের মান বাড়বে।
সব ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে উত্তরের মান ও পরীক্ষা প্রস্তুতি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে। যেমন নীল বিদ্রোহে শহুরে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কী ছিল? সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এক্ষেত্রে আনন্দমঠ, নীলদর্পণ, অরণ্যের অধিকার-এর লেখক ও তার প্রেক্ষাপট সম্বন্ধে জানা থাকলে সুবিধা হবে। হিন্দু পেট্রিয়ট-এর ভূমিকা এই তথ্যগুলো উত্তরের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের অরণ্য আইনের কী ভুমিকা আছে সে বিষয়ে অবহিত থাকা জরুরি। কারণ এই অধ্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল আদিবাসীদের উপর উপনিবেশিক অরণ্য আইন-এর প্রভাব কী ছিল? ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ধাপে ধাপে অরণ্যকে সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত করা হয়েছিল কতকগুলি আইন পাশ করে। ১৮৫৫, ১৮৬৪, ১৮৬৫, ১৮৭৮ পর্যন্ত বিভিন্ন অরণ্য আইন পাশ করে আদিবাসীদের চিরাচরিত অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও আদিবাসীদের শায়েস্তা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে ‘ক্রিমিনাল ট্রাইবস অ্যাক্ট’ পাশ করা হয়েছিল।
এই অধ্যায়ে ব্যবহৃত বিশেষ কতকগুলি শব্দের অর্থ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে এই অধ্যায়টি বুঝতে বিশেষ সুবিধা হবে। যেমন— উলঘুলান, ধরতি আবা, খুৎকাঠি, সিংহ বোঙা, হুল, দামিন-ই-কোহী, কেনারাম বেচারাম, দার-উল-হারব, দার-উল- ইসলাম, তারিক-ই- মহম্মদীয়া, ওস্তাদ, ওয়াহাবি, ফরাজী, রায়তি, দাদনী ইত্যাদি।
সব কথার শেষ কথা হল সব অধ্যায়ের মতো এই অধ্যায়টিও খুঁটিয়ে পড়ো। বিষয়টি সম্পর্কে অকারণ ভয় দূর করলে সাফল্য অর্জন সম্ভব হবে।