পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
প্রশ্নটা অন্য। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে কিংবা আগামীদিনেও আসবে, তাদের ক্ষেত্রেও কি এই আইন প্রযোজ্য হবে? নতুন আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু, আইনে বলা হয়েছে হিন্দুরা (এবং অন্য পাঁচটি অমুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায়) ধর্মীয় অত্যাচারে ভারতে আশ্রয় পেতে চাইছে এবং তাই তাদের শরণার্থী আখ্যা দিয়ে ভারত মানবিকতার স্বার্থে নাগরিকত্ব দেবে। খুব ভালো কথা। কিন্তু সেই অত্যাচার তো আগামীকালও হতে পারে? তা হলে সেই সম্ভাব্য অত্যাচারিত হিন্দু মানুষগুলি কী দোষ করল? তাদের ভারতে ঢুকতে কি বাধা দেওয়া হবে? যদি বাধা দেওয়া না হয়, তা হলে কি তাদেরও আগামী পাঁচ বছর ভারতে থাকার পর সমানভাবে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে? অর্থাৎ সেক্ষেত্রে আমরা কি ধরে নিতে পারি যে, বাংলাদেশ থেকে আগামীদিনে হিন্দু বাঙালিরা সকলেই যদি ভারতে এসে নাগরিকত্ব পেতে চায়, সকলকেই ভারত নিজেদের নাগরিক করে নেবে? প্রশ্নটার কারণ হল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারংবার বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর চরম অত্যাচার শুরু হয়েছে মুজিবর রহমানের মৃত্যুর পর। সেই অত্যাচার আজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমন কথা বলা হচ্ছে না। তাহলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন? এখন যারা বাংলাদেশ থেকে চলে আসতে চাইবে তাদেরও তো অনুমতি ও নাগরিকত্ব দেওয়া উচিত নীতি অনুযায়ী? বিনীত প্রশ্ন, কারা ২০১৪ সালের আগে এসেছে আর কারাই বা গতকাল এসেছে, এটা প্রমাণ হবে কী ভাবে? প্রমাণপত্র লাগবে না এটা তো সরকারই বলেছে। সেলফ ডিক্লারেশনই যথেষ্ট।
দ্বিতীয় প্রশ্ন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পর গোটা দেশে এনআরসি চালু হবে সরকারই ঘোষণা করেছে। এনআরসিতে স্বাভাবিকভাবেই নিশ্চয়ই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখই সময়সীমা হবে? এটাই প্রত্যাশিত। অর্থাৎ এনআরসিতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা ভারতে এসেছে, তাদেরই স্থান দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে অসমে যে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ গিয়েছে তাদের সিংহভাগই আবার নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু নতুন এনআরসি যখন সমাপ্ত হবে, তখন যারা ভারতের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ যাবে, তাদের নিয়ে কী করা হবে? ভারতের অভ্যন্তরে এনআরসি আর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে যতটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কথা বলছে, শেখ হাসিনাকে তো কিছুই বলা হচ্ছে না! বরং সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারতে আসার পর বলেছেন, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের চিন্তার কারণ নেই এনআরসি নিয়ে। এর অর্থ কী? ভারতে লক্ষ লক্ষ অথবা কোটি কোটি বেআইনি নাগরিক যখন ধরা পড়বে, তাদের তার মানে পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে না? কী করা হবে? ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে? কতদিন? নিয়ম হল ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্টে অনুপ্রবেশকারীদের পুশব্যাক করা। সেটা হবে না?
তৃতীয় প্রশ্ন, এনআরসিতে বিভিন্ন স্থানে যত মানুষ বাদ যাবে অবৈধ নাগরিক হিসাবে, তাদের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও ইস্তফা দেবেন তো? কারণ যে মানুষটি ভারতের নাগরিকই নয়, তার ভোটও অবৈধ। সুতরাং ভারতব্যাপী এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় জেলায় জেলায়, শহরে, গ্রামে, ব্লকে, পঞ্চায়েতে যখন অবৈধ নাগরিক ধরা পড়বে একজনও, তখন নীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, এমপি থেকে কাউন্সিলার, সকলেই নিশ্চয়ই পদত্যাগ করবেন? একজনও অবৈধ নাগরিকের ভোটে নির্বাচিত এমপি, বিধায়ক, কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যের নির্বাচনটাও তো অবৈধ হয়ে যাবে! তাই তখন সকলের উচিত নয় কি পদত্যাগ করা? অসমে সাড়ে ১৯ লক্ষ মানুষ বাদ গিয়েছেন। এটা যদি চূড়ান্ত এনআরসি তালিকাই হয়, তা হলে কেন্দ্র ধরে ধরে জেলায় জেলায় প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির ইস্তফা দেওয়া উচিত। সহজ যুক্তি, অবৈধ নাগরিক মানে হল নাগরিকত্ব নেই। সুতরাং ভোটদানের অধিকার নেই। তার অর্থ ভোটেরও তো বৈধতা নেই! অসমের এমপি, এমএলএ, কাউন্সিলার, পঞ্চায়েত সদস্যরা ইস্তফা দিচ্ছেন না কেন?
শেষ প্রশ্ন। যখন এনআরসি প্রক্রিয়া চালু হবে, তখন আমাদের, যাঁদের কাছে সমস্ত রকম নথিপত্র আছে, যাঁরা বছরের পর বছর আয়কর দিয়ে গেলাম, যাঁরা বছর বছর ভোট দিয়ে যাচ্ছি, যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পেনশন অ্যাকাউন্ট, সবই আছে, যাঁদের বার্থ সার্টিফিকেট থেকে আধার সার্টিফিকেট, সবই আছে, ভোটার কার্ড থেকে পাশপোর্ট, সবই আছে, তাঁদের কেন লাইন দিয়ে, ভিড় ঠেলে, ফর্ম ফিল আপ করে, কাজের সময় নষ্ট করে, নিজেদের আবার ভারতীয় প্রমাণ করতে হবে? বৈধ ভারতীয়দের কাছে এভাবে বারংবার বৈধতার প্রমাণ চাওয়া কি তাদের অপমান করা নয়! মাননীয় সরকার এনআরসি প্রক্রিয়া চালু করার আগে একটু ভেবে দেখবেন অনুগ্রহ করে! এটুকু সম্মান কি প্রাপ্য নয় বৈধ নাগরিকদের? সে নাগরিক ধনীই হন অথবা দরিদ্র।