পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে বহু স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ক্রিকেটের এই নন্দনকানন। ১৮৬৪ সালের জন্মলগ্ন থেকে পরিবর্তনের হাওয়ায় পাল তুলে সে ক্রমে হয়ে উঠেছে আধুনিক, আরও আকর্ষণীয়। ৪০ হাজারের দর্শকাসন ১৯৮৭ সালে সংস্কারের পর বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখে। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে আধুনিকীকরণের পর ইডেনের বর্তমান দর্শকাসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজারের মতো। পুরনো প্যাভিলিয়ন ভেঙে হয়েছে সুদৃশ্য ক্লাব হাউস। বন্দোবস্ত হয়েছে ফ্লাডলাইটের (’৯২)। যার প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৯৩ সালে, সিএবির ডায়মণ্ড জুবিলি টুর্নামেন্ট হিরো কাপের সময়। হিরো কাপের সেমি-ফাইনালে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সেই ম্যাচটি তাই পাকাপাকিভাবে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। বর্ণবিদ্বেষের কারণে প্রায় ২২ বছরের নির্বাসনের পর এই ইডেনেই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ (১০ নভেম্বর, ১৯৯১) খেলেছিল ক্লাইভ রাইসের দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এবার গোলাপি বিপ্লবের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এই ঐতিহাসিক ইডেন।
গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট খেলার রেওয়াজ অবশ্য অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়া আর প্রায় সব টেস্ট খেলিয়ে দেশই এই তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছে। এখনও পর্যন্ত পাঁচটির মধ্যে সবকটিতেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে অজিরা। গোলাপি বলে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট খেলার নজিরও রয়েছে তাদেরই দখলে। ২০১৫ সালের (২৭ নভেম্বর-১ ডিসেম্বর) সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। অ্যাডিলেডের সেই লড়াইয়ে অজিরা জিতেছিল তিন উইকেটে। দ্বিতীয় টেস্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খেলা হয়েছিল (১৩-১৭ অক্টোবর, ২০১৬) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ৫৬ রানে জিতেছিল পাকিস্তান। এভাবে এখনও পর্যন্ত ১১টি দিন-রাতের টেস্ট গোলাপি বলে খেলা হয়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়েও তাতে অংশ নিয়েছে। তবে, পরিসংখ্যানের নিরিখে বলাই যায় যে ‘অ্যাডভান্টেজ অস্ট্রেলিয়া’। ভারত এতদিন গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট খেলতে রাজি হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব তারা সুকৌশলে কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি হওয়ার পরই বদল হয়েছে মানসিকতায়। তাঁর উদ্যোগেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দু’ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্ট গোলাপি বলে খেলতে রাজি করানো গিয়েছে অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে।
ইডেন অবশ্য অনেক আগেই গোলাপি বলে ম্যাচ প্রত্যক্ষ করেছে। প্রশাসক সৌরভের উদ্যোগেই ২০১৬’র ১৮ জুলাই মোহন বাগান ও ভবানীপুর ক্লাবের মধ্যে সিএবি সুপার লিগের ফাইনাল ম্যাচটি খেলা হয়েছিল গোলাপি বলে। এই ম্যাচে খেলেছিলেন ভারতীয় দলের দুই বর্তমান সদস্য ঋদ্ধিমান সাহা ও মহম্মদ সামি। ম্যাচটি মোহন বাগান জিতেছিল ২৯৬ রানে। সেই বছর দলীপ ট্রফির ম্যাচও হয়েছিল নৈশালোকে। এখানে বলে রাখা ভালো, ’৯৭-এর এপ্রিলে দিল্লি ও মুম্বইয়ের মধ্যে রনজি ট্রফির ফাইনালটি হয়েছিল নৈশালোকে। কিন্তু, গোয়ালিয়রে পাঁচদিনের সেই ম্যাচে গোলাপি নয়, খেলা হয়েছিল সাদা বলেই। তবে অনেকের মতে, উজ্জ্বলতার কারণেই ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি টিভি ক্যামেরার পক্ষেও ফ্লাডলাইটে লাল বলের তুলনায় গোলাপি বল ট্র্যাক করতে না কি বেশি সুবিধা হয়।
তবে, নৈশালোকে গোলাপি বলে খেলার সুবিধা বা অসুবিধা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। বিশেষত, গোধূলিতে এই বলের দৃশ্যমানতা কেমন থাকবে তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে। আলোচনায় ডুবে রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরাও। আসলে, সাদা পোশাকে দিন-রাতের ম্যাচে লাল ও সাদা বলের থেকে গোলাপি বল এগিয়ে রাখার প্রধান কারণ হল এর দৃশ্যমানতা। ফ্লাডলাইটের আলোয় লাল বল অনেক সময়েই পিচের খয়েরি রঙের মধ্যে হারিয়ে যায়। ফলে, ব্যাটসম্যানদের দেখতে কিছুটা সমস্যা হয়। আর সাদা বল ময়লা হয়ে গেলেও ব্যাটসম্যানদের একই সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া, সাদা বল গোলাপি বলের তুলনায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। গোলাপি বলে অতিরিক্ত ল্যাকার থাকায় তা দ্রুত পুরনো হয় না। অর্থাৎ, এর জৌলুস বা উজ্জ্বলতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়। এর সিমটাও তুলনামূলকভাবে পোক্ত। এর আগে হলুদ এবং কমলা ক্রিকেট বল নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল মেলেনি। বরং, লাল এবং সাদার পর সসম্মানে পাশ করেছে গোলাপি বলই। তবে, এসজি গোলাপি বল রাতের শিশির ফ্যাক্টরে কেমন ব্যবহার করবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু, এর সুবাদে ইডেনের ইতিহাসের পাতায় যে আরও একটি উজ্জ্বল নজির যোগ হতে চলেছে, প্রাপ্তির সেই স্বাদই আলাদা। এই প্রেক্ষিতেই জানিয়ে রাখি, ইডেনে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ৫-৮ জানুয়ারি ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। আর ইডেনে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছিল ১৯৮৭’র ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। আর এখানে প্রথম আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১’র ২৯ অক্টোবর। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত ও ইংল্যান্ড। ফের ইডেনকে সাক্ষী রেখে ভারতীয় ক্রিকেটে এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হতে চলেছে।
অতীতের বহু লড়াইয়ের সাক্ষী এই ইডেন। ভি ভি এস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়ের মহাকাব্যিক ইনিংস এবং হরভজনের বলের জাদুতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে ফলো-অনের লজ্জা সামলে নাটকীয়ভাবে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল সৌরভের ভারত। ফের (প্রশাসক) সৌরভের হাত ধরেই ইডেন এবার আরও একটা সাহসী উদ্যোগের মুখোমুখি হতে চলেছে। সেই উৎসবে শান দিতে আয়োজনের কোনও ত্রুটি রাখতে চান না সংগঠকরা। আর তাই, সেই উৎসবের মহড়া শুরু হয়ে গিয়েছে এখন থেকেই।
সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে