পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
জঙ্গলের কথা বললেই আমাদের মনে প্রথমেই আসে আমাজন বা সুন্দরবনের নাম। তবে এই বিখ্যাত জঙ্গলগুলি ছাড়াও বিশ্বে এমন অনেক জঙ্গল রয়েছে যার সৌন্দর্য অতুলনীয়। রয়েছে প্রতি পদে রোমাঞ্চ। তাই চলো বন্ধুরা এবারের ‘হ য ব র ল’র পাতায় এমনই পাঁচটি অদ্ভুত জঙ্গলের সাফারি সেরে ফেলা যাক।
বর্নিও রেন ফরেস্ট
প্রায় ১৩ কোটি বছর! ঠিকই শুনছ বন্ধুরা, প্রায় ১৩ কোটি বছর ধরে পৃথিবীর বুকে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে বর্নিও রেন ফরেস্ট। তাই পৃথিবীর প্রাচীনতম জঙ্গলগুলির কথা উঠলে বর্নিওর জঙ্গলের নাম প্রথম সারিতেই চলে আসে। বর্নিওর সম্বন্ধে আরও একটি তথ্য জেনে রাখো বন্ধুরা, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বর্নিও। অর্থাৎ শুধু জঙ্গল নয়, দ্বীপের মধ্যে জঙ্গল! অবশ্য দ্বীপটির গোটাটাকে জঙ্গল ভেবে ভুল কোরো না।
বর্নিও রেন ফরেস্টের আনাচে কানাচে রয়েছে অদ্ভুত চিত্র। এখানে আসলে দেখা মিলবে সারি সারি উঁচু-নিচু সব ধরনের গাছ। সেই গাছে বসে খুনসুটি করা বিরল প্রজাতির বানর। আবার তার পাশের গাছে চোখ রাখলেই হয়তো দেখতে পাবে না দেখা সব রঙিন পাখি। ওদিকে জঙ্গলের অলিগলিতে গাছের ফাঁক দিয়ে ছুটে চলেছে বিভিন্ন ভয়ঙ্কর সব জন্তু। মোটের উপর এই জঙ্গলে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্ন সব প্রাণীর। সবথেকে বেশি চোখে পড়ে বহু প্রজাতির বাঁদরের। প্রোবোস্কিস বানর, ম্যাকাও বানর, গিবন, ওরাং ওটাং-এর নিরাপদ বাসস্থান হল এই জঙ্গল। এছাড়াও ভাগ্য সঙ্গ দিলে দেখা মিলতে পারে বিরল প্রজাতির সান বিয়ারের। তবে সাবধান, ভুল করেও এই ভল্লুকের কাছে যাওয়ার বায়না ধোরো না। তার থেকে বরং এগিয়ে চলো। হয়তো একটু এগলেই দেখতে পাবে বর্নিও পিগমি হাতি। জীব-জন্তু, পশু-পাখি, গাছ-গাছালি বাদ দিলেও বর্নিওর রেন ফরেস্টের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা ভুললে চলবে না। প্রকৃতির আপন খেয়ালেই অপরূপ সাজে সেজেছে এখানকার ভূপ্রকৃতি। তাই দুই চোখ খোলা রেখে সেই দৃশ্য উপভোগ কোরো বন্ধুরা।
গ্যাবোনের জঙ্গল
না, না, গ্যাবোন কোনও জঙ্গল নয়। গ্যাবোন একটি দেশের নাম। তবে ভাবছ, কেন এই লেখায় গ্যাবোনের কথা বলছি? আসলে এই দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়েই রয়েছে ঘন জঙ্গল। দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখের মতো। তবে এখন দক্ষিণ পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে ভীষণরকম কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গিয়েছে। চলছে শিল্পায়ন। তবে সেই কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখানকার সরকার খুব সচেতনভাবেই নিজেদের বন্যপ্রাণ
রক্ষায় বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যেই প্রায় এক দশক আগে গোটা দেশে ১৩টি জাতীয় উদ্যান তৈরি করা হয়। আর শুধু তৈরি
করে বসে থাকা নয়, জাতীয় উদ্যানগুলির রক্ষণাবেক্ষণের
প্রশ্নে বেশ কঠোর মনোভাব রয়েছে। তাই এ দেশের জঙ্গলগুলি হয়ে উঠেছে বিভিন্ন বিপন্ন প্রাণীর বসবাসের মুক্তাঞ্চল। তবে এতগুলি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লোয়ানগো ন্যাশনাল পার্কটি অবশ্য সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বলা হয়, এই জাতীয় উদ্যানের জঙ্গলটি অত্যন্ত প্রাচীন। তাই এই জঙ্গলকে ‘লাস্ট ইডেন’ নামেও ডাকা হয়। যার বাংলা অর্থ হল ‘শেষ নন্দনকানন’। এই জঙ্গলে এদিক-ওদিক নিজের মনের মতো
ঘুরে বেড়ায় গরিলা। এদের একবারটি দেখলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক! জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগতে এগতে দেখলে হয়তো সারি বেঁধে দৈত্যাকার সব আফ্রিকান হাতি চলছে। জঙ্গলের ভিতরের কোনও জলাধারে বন্য মহিষের স্নানের দৃশ্যও দেখা যায়। এছাড়াও নানা ধরনের বিরল প্রজাতির সরীসৃপ থেকে জীবজন্তু রয়েছে এই জাতীয় উদ্যানে। সারিবদ্ধ গাছের
ডালে অচেনা সব পাখির ঝাঁক দেখে অবাক হতেই হবে।
মন্টেভার্দে ক্লাউড ফরেস্ট
আধো আধো মেঘের আস্তরণ। চারদিকে ধোঁয়াশা। সামনে একটা ঝুলন্ত ব্রিজ। তুমি সেই ব্রিজে হাঁটছ। এদিক-ওদিক
যেই দিকেই চোখ যায় শুধুই উঁচু উঁচু গাছ। সেই বিশালাকার গাছের তলায় বাসা করা ছোট ছোট গাছগুলিতে ফুটেছে হরেক রঙের ফুল। ব্রিজে এগতে এগতে মাঝে মধ্যে কানে ভেসে আসছে পাখির গান। এক মায়াময় পরিবেশ! কী অবাক
লাগছে? ভাবছ কোনও হলিউড কল্পবিজ্ঞানের ছবির কথা বলছি? না, এমনটা ভাবলে তুমি বড্ড ভুল করছ। আমাদের সুন্দরী পৃথিবীতে এমন অবিশ্বাস্য জায়গাও রয়েছে। জায়গাটা
হল কোস্টারিকার মন্টেভার্দে ক্লাউড ফরেস্ট রিজার্ভ। ছবির
মতো সুন্দর এই জায়গাটিতে একবার এলে ছেড়ে যেতে মন চাইবে না।
১৯৭২ সালে কোস্টারিকা সরকারের পক্ষ থেকে এই জঙ্গলটিকে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়। প্রায় ৩৫ হাজার একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই জঙ্গল। প্রায় ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪০০ ধরনের পাখি, প্রায় ১২০০ প্রজাতির উভচর এবং সরীসৃপের বাস রয়েছে এখানে। এই বিশাল সংখ্যক বন্যপ্রাণের মধ্যে অনেকগুলিই বিরল প্রজাতির। এখানে
ভয়ঙ্কর জাগুয়ার থেকে শুরু করে অসিলট, পুমা, অঙ্কিলাস, মারগেস, জাগুয়ারুন্দিসের মতো বিড়াল গোত্রের প্রাণীর বাস রয়েছে। এই জঙ্গলের সাফারিতে বেরিয়ে দেখা পেতে পারো সুন্দরী বিরল প্রজাতির থ্রি ওয়াটেলজ বেল বার্ড বা রেসপ্লিডেন্ট কুইটজাল পাখির। এইসব পাখিগুলির দিকে একবার চোখ গেলে সত্যিই চোখ ফেরানো মুশকিল।
এই জঙ্গলের সর্বত্র মানুষের যাওয়ার অধিকার নেই। মানুষের জন্য জঙ্গলের ভিতরে ১৩ কিলোমিটার ঘোরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে চিন্তার কিছু নেই, মন্টেভার্দে ক্লাউড ফরেস্টের এতটুকু চলতে পারলেই সারাজীবন মনে থাকবে এই অরণ্যের কথা।
গ্রেট বিয়ার রেন ফরেস্ট
অগুনতি গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জঙ্গলকে মাঝামাঝি কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে বরফগলা জলের নদী। এদিক-ওদিক ঘুরে বেরাচ্ছে বন্যপ্রাণ। যেদিকেই তাকাবে চোখ ফেরাতে পারবে না। এতটাই সুন্দর অভিজ্ঞতা হবে ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডার গ্রেট বিয়ার রেন ফরেস্টে এলে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূল ধরে প্রায় ২৫০ মাইল এগিয়ে গিয়েছে এই জঙ্গল। প্রায় ২.১ কোটি একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই জঙ্গলকে অনেকসময় উত্তরের আমাজন নামেও ডাকা হয়। এখানে এলে দেখা মিলবে হাজার বছর ধরে দন্ডায়মান দারুবৃক্ষের। জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই হিমবাহ থেকে বেরিয়ে আসা নদী আপন মনে এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলছে। পাহাড়ি পথে কখনও সেই খরস্রোতা নদী আছড়ে পড়ছে নীচের পাথুরে জায়গায়। জলপ্রপাতের সেই গর্জন শোনা যাচ্ছে অনেক দূর থেকে। এমনই অবাক করা দৃশ্যের দেখা মেলে এই জঙ্গলের পরতে পরতে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তুরও বাসস্থান এই বিশালাকার জঙ্গলটি। এখানে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায় হিংস্র নেকড়ে। নদীর স্যালমন মাছ ধরতে দেখা যেতে পারে বাদামি রঙের গিজলি ভল্লুককে। এছাড়া এই জঙ্গলের অপর এক আকর্ষণ হল কারমোড স্পিরিট বিয়ার। শুনতে অবাক লাগলেও সাদা শরীরের এই বিরল ভল্লুকগুলিও কালো ভল্লুকেরই সাব স্পিসিস। তবে চাইলেই এই ভল্লুকের দর্শন মেলে না। ভাগ্যের সঙ্গ মিললেই তোমরা এই ভল্লুক দেখতে পাবে। এক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের স্থানীয় গাইডরা কারমোড স্পিরিট বিয়ার চাক্ষুস করার বন্দোবস্ত করলেও করতে পারে।
বাম্বু ফরেস্ট, কোয়োটো, জাপান
এবার তোমাদের এক আশ্চর্য জঙ্গলের কথা বলব। এই জঙ্গলে রয়েছে শুধু বাঁশ। সোজা কথায়, বাঁশের জঙ্গল। যেদিকেই তাকাবে লম্বা লম্বা বাঁশ গাছ। তার মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে সুন্দর পরিপাটি রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে তুমি হেঁটে চলেছ। পাশে রয়েছে অন্যান্য ভ্রমণ পিপাসুরা। জাপানের কোয়োটো সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের দূরত্বেই রয়েছে এমন অদ্ভুত এক জায়গা। জাপানের উঁচু উঁচু অট্টালিকার মাঝে প্রাণের সন্ধান দিতে পারে এই জঙ্গল। তাই রোজই দেশবিদেশের বহু মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন এখানে। এই জঙ্গলের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কানে আসে অদ্ভুত শব্দ। বাঁশ গাছের মধ্যে দিয়ে হাওয়া চলার ফলেই এমন আওয়াজ হয়। প্রাকৃতিক এই শব্দ বাম্বু ফরেস্টের অন্যতম আকর্ষণ। জাপান সরকারের ১০০টি সাউন্ডস্কেপের মধ্যে এই শব্দটিরও স্থান রয়েছে। তাই এখানে ঘুরতে এসে বেশি শব্দ কোরো না যেন। বরং মন দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গীত শুনো। প্রাণ ভরে যাবে। এই জঙ্গলে আসতে হলে ভিড় এড়িয়ে একটু সকাল সকাল বা বিকেলের দিকে আসাই ভালো। দিনের ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই জায়গা। পাশাপাশি এখানে প্রবেশ করতেও কোনও টাকা লাগে না। তবে এমন সুন্দর জঙ্গল দেখার পরও কিন্তু থামলে চলবে না। কারণ বাম্বু ফরেস্টের বাইরেই রয়েছে তেনরুজি মন্দির। এই মন্দিরটিকে ইউনেসকোর তরফে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দেওয়া হয়েছে। তাই এখানে এলে মন্দির দেখা মাস্ট।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে