ব্যবসায় অগ্রগতি ও শুভত্ব বৃদ্ধি। ব্যয়ের চাপ থাকায় সঞ্চয়ে বাধা থাকবে। গলা ও বাতের সমস্যায় ... বিশদ
পিতার ‘পশ্চিম-ভ্রমণের ডায়েরিটা ঠাকুরের পিঁড়েতে রেখে ফুল চন্দন মাখালেন। বিভূতিভূষণ লিখেছেন, ‘পিতা কি জানতেন তাঁর মৃত্যুর প্রায় পনেরো বছর পরে প্রথম যৌবনে তাঁর ছেঁড়ামোঁড়া লেখা খাতাখানি বিহারের এক নির্জন কাশ বনের চরের মধ্যে ফুল-চন্দনে অর্চিত হবে?’ ১৯২৫ সালের ৩ এপ্রিল ‘পথের পাঁচালি’ রচনার সূচনা দিবস।
কয়েক পাতা লিখেই কলকাতা ফিরলেন বিভূতি। সেখানে গিয়ে উঠলেন মেসে। তারপর নীরদ চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন গোলদিঘির ধারে। নীরদ চৌধুরীর সামনে তুলে ধরলেন ভাগলপুরের লেখা কয়েক পাতা। ‘দেখো তো কেমন হল?’
নিবিষ্ট মনে পড়ে নিলেন এক নিঃশ্বাসে। তারপর বললেন, ‘কী কাণ্ড করেছেন।’ আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন বিভূতিভূষণকে। চালিয়ে যান বিভূতিবাবু, অসাধারণ।
নীরদের ওপর আস্থা রাখেন বিভূতি। তাঁর কথায় মনে জোর পেলেন, উৎসাহিত বোধ করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, লেখাটা চালিয়ে যাবেন।
ফিরে এলেন ভাগলপুরের জঙ্গলমহলে। দোতলার ঘরে একটা টেবিল। টেবিলের ফুলদানিতে কিছু ফুল, জানলা খোলা। দেখা যায় নিমগাছ। সামনে গঙ্গা। সেখানেই চলে বিভূতির লেখা। চাকরিটা যেহেতু ছেড়ে দেননি, সেখানেও বেরতে হয়। সঙ্গে কাগজ কলম থাকে। কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে লেখেন। ‘নকছেদী জগতের দেওয়া বেলফুলের ঝাড়ের পাশে বসে পথের পাঁচালী লিখতুম। মহুরী গোষ্টবাবু বসে হিসেব বোঝাত।’
যখন লেখা শুরু করেছেন তখন তিনি ভাগলপুরে। তবু ‘বড় বাসায় নির্জন ছাদটায় শীত সন্ধ্যায় গঙ্গার বুকে শেষ রোদ মিলিয়ে যাওয়া ঝিকিমিকি ছায়া ভরা রোদের রেসটুকুর দিকে চেয়ে দূর ইছামতীর বুকের একটা অন্ধকার ঘন তীরের কথা মনে পড়ল।’
লেখা তো চলছে, তাই আড্ডায় আর যাওয়া হচ্ছে না। আদমপুরের আড্ডায় তাঁর অনুপস্থিতি অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে। একদিন পুরো আড্ডার টিমটাই হাজির হল বড়বাসার দোতলায়। ওখানে গিয়ে তো তারা একেবারে থ। বিভূতিভূষণ একেবারে উপন্যাস নিয়ে পড়েছেন। শোনান দেখি মশাই, কী লিখছেন? আড্ডার টিমের আকস্মিক আক্রমণে তিনি রীতিমতো অপ্রস্তুত। অগত্যা উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি মেলে ধরেন। কয়েক পাতা পড়ে বিভূতিভূষণ থামলেন। একটা নিস্তব্ধতা নেমে এল যেন। কারণ বাকি সবাই বিস্ময়াবিষ্ট।
নীরদের প্রশংসা আগেই পেয়েছিলেন। এঁদের প্রশংসায় বিভূতিভূষণের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ হল। যেমন যেমন লেখা হতো তিনি পড়ে শোনাতেন আর সকলের প্রশংসা পেয়ে আরও উৎসাহিত হতেন। সকলের উৎসাহ পেয়ে লেখার গতিও বাড়তে লাগল। লেখাটা দ্রুত প্রায় শেষ করে আনছিলেন। তখনই একটা দুর্ঘটনা ঘটল। বিভূতিভূষণের কথায়, ‘একদিন হঠাৎ ভাগলপুরের রঘুনন্দন হল-এ একটি মেয়েকে দেখি। চুলগুলো তার হাওয়ায় উড়ছে। সে আমার দৃষ্টি এবং মন দুই-ই আকর্ষণ করল—তার ছাপ মনের মধ্যে আঁকা হয়ে গেল, মনে হল উপন্যাসে এই মেয়েটিকে না আনলে চলবে না।’ অনেকের মতে, এরপর পথের পাঁচালি আবার নতুন করে লিখতে হল এবং রিকাস্ট করতে গিয়ে একটি বছর লাগল।
যদিও বিভূতিভূষণের দিনলিপিতে কিন্তু এমন কোন উল্লেখ ছিল না যে, ‘পথের পাঁচালি’র প্রথম পাণ্ডুলিপিতে ওই চরিত্রটা ছিল না। এ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, লিখেছেন। যেমন গোপাল হালদার, যোগেশচন্দ্র সিনহা, চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। কিন্তু তাঁদের বক্তব্যের নির্যাস একই, অর্থাৎ প্রথম পাণ্ডুলিপিতে ওই মেয়েটি ছিল না। পরে কোনও এক জায়গায় মেয়েটিকে দেখে তাঁর মনে হয়, উপন্যাসে মেয়েটিকে না আনলে চলবে না।
তবে, সুনীলকুমার চট্টোপাধ্যায় একটি অন্য সূত্র খুঁজে পেয়েছেন। ‘...আরও একটি মেয়ে এই চরিত্রটির মূলে বর্তমান।’ তাঁর মতে, ‘এই চরিত্রটির মূলে রয়েছে আরেকটি মেয়ে। বিভূতিভূষণের ছোট বোন সরস্বতী, অল্প বয়সে মারা যান। ওই বোনকে আদর করে তিনি দুর্গা বলে ডাকতেন। পথের পাঁচালীতে সেই দুর্গাকেই ঠাঁই দিলেন স্মৃতির পাতা থেকে তুলে এনে।’ কিন্তু এ ব্যাপারে বিভূতিভূষণ নিজে কিছু বলেননি।
পথের পাঁচালির পাঠক হিসেবে আমরা জানি দুর্গা কোনও প্রক্ষিপ্ত চরিত্র নয়। নায়ক অপুর দিদি দুর্গা। সে-ই প্রকৃতিকে দেখতে শেখায় অপুকে। যেন হাত ধরে পথ চিনিয়ে দিল প্রকৃতিকে।
বাবা, মা, পিসিমাকে নিয়ে নিজের জীবন চিত্রণের বাস্তব উপাদানের মধ্যে একটি কাল্পনিক চরিত্র আঁকতে যেন সমস্ত হৃদয়কে উজাড় করে দিলেন লেখক। আমাদের বুঝতে কোন অসুবিধে হয় না যে বিভূতিভূষণ নিজেই অপু। তিনি দিনলিপিতে লিখেছিলেন, ‘আজকের নিষ্পাপ অবোধ দায়িত্বহীন জীবন কোরকগুলোয়—পাঁচশো বছরের ভবিষ্যৎ জীবনের ছবি কল্পনা করতে বড় ভালো লাগে। দিদি দুর্গা যেন রুক্ষ চুলে হাসি মুখে আঁচলে কদম বেঁধে নিজে মুচকুন্দ চাঁপায় অন্ধকার তলাটা দিয়ে বাড়ি ফিরছে। অপু, ও অপু, তোর জন্য খাবার এনেছি দেখ রে ও অপু। পাঁচশো বছরের ওপার থেকে ডাক আসে।’
লেখা শেষ করে— ‘পথের পাঁচালি’কে পাঠিয়ে দিলেন ‘প্রবাসী’তে।
উপেন্দ্রনাথ তাঁদের সাহিত্যের আড্ডায় প্রায়ই ইচ্ছে প্রকাশ করতেন একটি মাসিক পত্রিকা বের করবেন। এ জন্য কলকাতা গিয়ে কবিগুরুর সঙ্গে দেখা করেন। রবীন্দ্রনাথ উৎসাহ দেন। নতুন মাসিক পত্রিকার নামকরণ করেন— ‘বিচিত্রা’।
এ সময়েই একদিন বিভূতিভূষণ সাহিত্যের আড্ডায় নাকি এসে বলেছিলেন, ‘পথের পাঁচালি’ ‘প্রবাসী’তে পাঠিয়েছিলুম। ওরা ফেরত পাঠিয়েছে। তাঁর কণ্ঠে ছিল হতাশার সুর।
বিভূতিভূষণের কথা শুনে উপেন্দ্রনাথ বলেন, ‘ভালোই হয়েছে, যা আমার অদৃষ্টে আছে তা আপনি অন্যকে দেবেন কেন? ওটা আমিই ছাপাব।
—সে তো অনেকদিন ধরেই বলছেন বের করবেন। সেটা কবে হবে?
—শিগগির দেখতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি। শরৎচন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করে লেখা ঠিক করেছি। এবার পথের পাঁচালি আমার পত্রিকায় বের হবে।
কথাটা শুনে বিভূতি খুব খুশি হলেন।
অবশ্য বিভূতিভূষণ যে প্রথম ‘পথের পাঁচালি’কে প্রবাসীতে পাঠিয়েছিলেন—তা নিয়েও দ্বিমত আছে। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘১৯২৮-এ ২৬ এপ্রিল এই পুস্তকের পাণ্ডুলিপি সম্পূর্ণ হয় এবং ওই দিনই তিনি উহা বিচিত্রায় প্রেরণ করেন।’
একই তারিখে বিভূতিভূষণ তাঁর দিনলিপিতে লিখেছেন ‘আজ আমার সাহিত্য সাধনায় একটি সার্থক দিন—এই জন্য যে আমি আমার দুই বছরের পরিশ্রমের ফলস্বরূপ উপন্যাসকে বিচিত্রায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’
নীরদ চৌধুরীও প্রবাসীর ফেরত দেওয়ায় কথাটা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, ওই উপন্যাস লেখার ফলে বিভূতিবাবু জড়িয়ে পড়েছিলেন উপেনবাবুর আড্ডার সঙ্গে। সে জন্যই বইখানা বিচিত্রায় পাঠিয়েছিলেন।
পাঠিয়ে তো দিয়েছিলেন, কিন্তু ছাপাচ্ছেন না কেন? ইতিমধ্যে তাঁর দুটো গল্প—‘বউ চণ্ডীর মাঠ’ ও ‘নববৃন্দাবন’ ছাপা হয়েছে। কিন্তু ‘পথের পাঁচালি’ ছাপাচ্ছেন না কেন? বিভূতি একদিন গেলেন বিচিত্রার অফিসে। সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ ছিলেন না। যাঁরা ছিলেন তাঁরা তাচ্ছিল্যভাবে বিদায় দিলেন লেখককে।
হতভম্ব বিভূতি রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন। হঠাৎ সেই সময় উপেন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা। তিনি তাঁকে সাদরে ডেকে তাঁর ঘরে নিয়ে বসালেন। জানালেন, তাঁর পছন্দ হলেও কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। তবে উপেন্দ্রনাথ আশ্বাস দিলেন, ‘আমরা ক’জন লেখাটা নিয়ে বসব। তোমাকে ডাকব তখন।’
নির্দিষ্ট দিনে বিভূতি এলেন। কয়েকজন লেখকও উপস্থিত। তাঁদের মধ্যে একজন গোপাল হালদার। তিনি বিভূতিকে চিনতে পারলেন। বছর কয়েক আগে এই লোকটিকে দেখেছিলেন পূর্ববঙ্গ গোরক্ষা সভার প্রচারক হিসেবে। উপস্থিত ছিলেন নীরদ চৌধুরীও। বৈঠকের আগে নীরদ ও বিভূতিকে বলা হল ‘পথের পাঁচালি’ পাঠ করতে। তারপর গোপাল হালদারের ভাষায়, ‘সবাই মুগ্ধ এবং এক বৈঠকেই বিচিত্রায় প্রকাশ সাব্যস্ত হল।’
শেষ পর্যন্ত বিচিত্রায় দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা থেকে ‘পথের পাঁচালি’র প্রকাশ শুরু হয়। ওই একই সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথের তিনটি লেখা—উপন্যাস ‘যোগাযোগ’ ধারাবাহিকভাবে, রম্য রচনা ‘তেল আর আলে’ এবং ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ প্রকাশিত হচ্ছিল। একই সময়ে বের হচ্ছিল, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’। মোট পনেরো কিস্তিতে শেষ হল ‘পথের পাঁচালি’।
এদিকে বিচিত্রায় যখন এই উপন্যাস ছাপা হচ্ছে, নীরদ চৌধুরী তখন থেকেই লেগে আছেন কী করে ‘পথের পাঁচালি’কে বই হিসেবে বের করা যায়। একজন বললেন, ‘প্রেম নেই, কেচ্ছা কেলেঙ্কারি নেই, এমনকী খুন জখমও নেই, শুধু গ্রামের বর্ণনা—ওসব চলবে না।’ কেউ কেউ ‘পথের পাঁচালি’ নাম শুনলেই বলে—‘না মশাই কোনও পাঁচালি ছাপানো সম্ভব নয় আমার পক্ষে।’
‘পথের পাঁচালি’ বই হিসেবে বের করার জন্য তদ্বির করতে ভাগলপুরের পাট চুকিয়ে বিভূতি চলে এলেন কলকাতায়। অনেক আশা নিয়ে পরিশ্রম করে ‘পথের পাঁচালি’ লিখেছিলেন তিনি। মির্জাপুরের লজের ঘরে একা শুয়ে শুয়ে ঠিক করলেন, আবার ভাগলপুরেই ফিরে যাবেন। নিজের অজান্তেই বিভূতিভূষণের চোখে জল দেখা যায়। এমন সময়—
—বিভূতিবাবু—নীরদ ডাকলেন।
ঘরে ঢুকে হাত ধরে টেনে তুললেন। তৈরি হয়ে নিন একটু বের হতে হবে।
—থাক নীরদ। আমার জন্য আর কষ্ট করতে হবে না। কালই আমি ভাগলপুরে ফিরে যাব।
—সে তো কাল যাবেন। এখন আমার সঙ্গে চলুন।
নীরদ চৌধুরী জোর করে টেনে তুললেন। ‘পথের পাঁচালি’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। চলুন।
নীরদ ‘প্রবাসী’র ঘরে ঢুকেই হইচই বাধিয়ে দিলেন। খানিকক্ষণ শুনে, সজনীকান্ত বললেন, দাঁড়াও, দাঁড়াও লেখাটা একবার পড়তে দাও।
নীরদ শান্ত হলেন। সজনীকান্ত বললেন, তুমি কাল একবার এসো।
সেদিনই রাতে বিচিত্রার কপিগুলো সংগ্রহ করে সারা রাত ধরে পড়লেন। তারপর, ‘বেশ বুঝিতে পারিলাম রবীন্দ্রনাথ—শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা সাহিত্যে অভিনবের আবির্ভাব হইয়াছে। শেষ রাত্রিটা উত্তেজনায় প্রায় বিনিদ্র কাটিল।’
পরদিন নীরদ চৌধুরী আসতেই সজনীকান্ত বললেন, ‘কী ব্যাপার বল, কেউ কি ছাপাতে রাজি নয়?’
নীরদ কয়েকজন প্রকাশকের নাম করে বললেন—যাঁরা ছাপাতে রাজি হননি। একজন মাত্র প্রকাশক বলেছেন, বিনে পয়সায় বইটা পেলে ছেপে দেখতে পারেন।
—বিনে পয়সায় কেন?
—ও বই চলবে না—প্রকাশকের মত।
—যদি চলে?
—তখন চিন্তা করবেন। কিন্তু কোনও চুক্তি তাঁরা করবেন না। বিভূতিবাবু তাতেই রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আরেকজন অবশ্য মাত্র পঞ্চাশ টাকায় বইটা কিনে নিতে চেয়েছিলেন—আমি তাতেও রাজি হইনি।
—ঠিক করেছ। তুমি গিয়ে নিয়ে এসো ভদ্রলোককে।
বিভূতিভূষণের সঙ্গে এর আগে সজনীকান্তের কোনও পরিচয় ছিল না। নীরদ বন্ধুকে নিয়ে এলেন। এই প্রথম সাক্ষাৎকার। পরবর্তীকালে, ‘আত্মস্মৃতি’তে সজনীকান্ত ১৯২৯-এর এই সময়টাকে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ বছর বলে উল্লেখ করেছেন।
বিভূতিভূষণ সজনীকান্তের সঙ্গে দেখা করতে এলেন, হাতে চিরাচরিত সেই কঞ্চি। ‘পথের পাঁচালি’র অপু যেন হাজির সাহিত্যের আড্ডায়।
আলোচনা শুরু হল। নীরদ চৌধুরীকে বললেন সজনীকান্ত, ‘তোমার কথা আগে শুনি।’
নীরদ চৌধুরী ‘পথের পাঁচালি’ প্রকাশন সমস্যাটা তুলে ধরলেন। তাঁর কথা শুনে সকলেই চুপ করে রইলেন। সজনীকান্ত শুনছিলেন, হঠাৎ তিনি একটু উত্তেজিত হয়েই বললেন, ‘আমরা চাঁদা তুলে ছাপাব পথের পাঁচালি।’
হঠাৎ যেন সবাই আশার আলো দেখতে পেলেন। গোপাল হালদার উৎসাহিত হয়ে বললেন, ‘আমি টাকার দায়িত্ব নিচ্ছি। যেভাবেই হোক আমি বাবার কাছ থেকে টাকাটা আদায় করব।’ তারপর সজনীকান্তকে বললেন, ‘আপনি প্রেসের দায়িত্ব নিন।’
নীরদচন্দ্র ভীষণ উৎসাহিত হয়ে বললেন, ‘কম্পোজটা বাদে আর যাবতীয় প্রেসের কাজ আমি করব, সে জন্য কোন কর্মচারীর দরকার নেই।’
বিভূতিভূষণ সকলের উৎসাহ দেখে আবেগ-আপ্লুত।
আর একজন বললেন, ‘সাহিত্যিককে সাহিত্য আড্ডা না বাঁচালে কে বাঁচাবে? সুতরাং চিন্তার কিছু নেই।’ আবেগে ভাসার লোক সজনীকান্ত নন। তিনি সব কিছুই গুছিয়ে করতে ভালোবাসেন। বললেন, বই ছাপাতে হলে আগে একটা প্রকাশক সংস্থা খোলা হোক। কাগজে কলমে লেখা হোক।
—কিন্তু প্রকাশক সংস্থার নাম কী হবে?
একজন জানতেন সজনীকান্তের স্ত্রী আসন্নপ্রসবা। বললেন, ওই ভবিষ্যৎ ছেলের নামেই এই মহৎ কাজটা হোক। সজনী, তোমার ছেলের একটা নাম ঠিক কর।
—কিন্তু যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়?
—আলবত ছেলে হবে।
সমস্বরে দাবি উঠল। অগত্যা সজনীকান্ত নাম দিলেন—রঞ্জন।
সজনীকান্ত একটা কাগজ টেনে নিয়ে কিছু লিখলেন। তারপর বিভূতিভূষণের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, নিন, সই করুন।
—কিসের সই?
—সজনী-বিভূতি চুক্তিনামা। সাক্ষী নীরদ চৌধুরী ও গোপাল হালদার।
এসব বিভূতি বোঝেন না। কিন্তু আজ ভীষণ আনন্দের দিন। কলম তুলে নিলেন। তবু বললেন, এসবের কি সত্যি দরকার?
—ব্যবসা করতে গিয়ে কাঁচা কাজ করা ঠিক নয়। সই করুন।
—ব্যবসা? আমার সাহিত্য চর্চা একটা ব্যবসা? বিভূতি আহত, বিস্মিত।
—ব্যবসা নয়তো কি? এতদিন যে প্রকাশকের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরলেন, তাতে কী মনে হল? সজনীর স্পষ্ট কথা।
বিভূতির মনে পড়ে আচার্য প্রফুল্ল রায় তাঁকে এক সময় ব্যবসার উপদেশ দিয়েছিলেন। কলম তুলে নিলেন। কিন্তু কী যেন ভাবলেন। থেমে গেলেন।
—কী হল আবার?
—ব্যবসায় তো একটু দরাদরি চাই। এ যেন নিরামিষ ব্যবসা হয়ে যাচ্ছে। বলেই হাসতে শুরু করলেন।
—বেশ ফেলুন দর। আমি তিনশো টাকা দেব।
—একটু ভেবে বিভূতি বললেন, আমি আরও পঁচিশ টাকা চাই।
—বেশ তাই হবে। এবার সই করুন।
সকলেই মজা পাচ্ছিলেন দু’জনের কথোপকথনে। কিন্তু বিভূতির সেদিকে খেয়াল নেই। বললেন, বেশ সই করছি, কিন্তু কিছু অ্যাডভান্স দেবেন না?
এবার সবাই হো হো করে হেসে উঠলেন। সজনীকান্ত কিন্তু সবাইকে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। তিনি খুবই সিরিয়াস। তারপর পঁচিশ টাকা এগিয়ে দিলেন, এই নিন অ্যাডভান্স।
বিভূতি সই করলেন। সজনীকান্ত সই করলেন। নীরদ-গোপালও সই করলেন। কন্ট্রাক্ট পাকা হল।
সেদিনই ‘রঞ্জন প্রকাশনালয়ের’ শুভ উদ্বোধন হল।
এদিকে মহালের কাজে দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে নানা অভিযোগ আসে সিদ্ধেশ্বরবাবুর কাছে। তিনি ভাবছেন কী করা যায়। বিভূতি এমনটি করছেন কেন? ঠিক সে সময় বিভূতিভূষণ হাজির সিদ্ধেশ্বরবাবুর কাছে। নিজের লেখালেখি, বই ছাপানো এসব সমস্যার কথা বললেন। বললেন, এমতাবস্থায় কলকাতা ছেড়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এই কাজটি ছেড়ে দেওয়াই উচিত।
সিদ্ধেশ্বরবাবু বললেন, ‘তা আপনার চলবে কী করে? তারপর তো শুনলুম, ছোটভাইকে কলকাতায় এনে রাখবেন, ডাক্তারি পড়াবেন—এসবের জন্য তো একটা রোজগার দরকার?’
—তা তো নিশ্চয়ই।
সিদ্ধেশ্বরবাবুর পিতামহ খেলাতচন্দ্রের স্মৃতিতে ধর্মতলা স্ট্রিটে রয়েছে ‘খেলাতচন্দ্র ক্যালকাটা ইনস্টিটিউশন।’ সিদ্ধেশ্বরবাবু তাঁর সভাপতি। তিনি স্কুলের সেক্রেটারি ও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে বিভূতিভূষণকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করলেন।
অতঃপর বিভূতিভূষণ এবং ছোট ভাই নুটু মির্জাপুরেই নিজেদের আস্তানা খুঁজে নিলেন। নুটু ক্যাম্বেলে ভর্তি হয়েছেন ডাক্তারি পড়তে।
প্রেস থেকে প্রুফ আসছে। প্রথমে দেখছেন নীরদচন্দ্র চৌধুরী, দ্বিতীয় প্রুফ সজনীকান্ত, তৃতীয় দফা নিজে দেখে চূড়ান্ত প্রিন্ট অর্ডার দিচ্ছেন বিভূতিভূষণ।
উপন্যাসের প্রথম ফর্মা যেদিন ছাপা হল, সেদিন ১৯২৯ সালের ২৪ জুলাই শুক্রবার। পরদিন প্রবাসীর অফিসে পড়া হল সে লেখা। সেখানে সজনী-নীরদ-গোপাল তো ছিলেনই, আরও হাজির ছিলেন, ডাঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কালিদাস নাগ। তাঁরাও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন লেখাটির।
এই বৈঠকের সাড়া পড়ে গেল। ভিড় হতে থাকল পথের পাঁচালি পাঠের অনুষ্ঠানে। লেখকও উৎসাহিত। একটা ফর্মা ছাপা হচ্ছে আর সেটা পড়া হচ্ছে বৈঠকে। একদিন মোহিতলাল মজুমদার হাজির ছিলেন। সেদিন যে ফর্মাটি পড়া হল সেই যেখানে দুর্গার মৃত্যুর পর অপু কাশী যাচ্ছে বাবা-মা’র সঙ্গে। মাঝেরপাড়া স্টেশনে ডিস্টান্ট সিগন্যালের দিকে তাকিয়ে মনে পড়ল, দিদি দুর্গা বলছিল, অপু, সেরে উঠলে আমায় একদিন রেলগাড়ি দেখাবি?—কথাগুলো শুনে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম তীক্ষ্ণ সমালোচক মোহিতলাল প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। বিভূতিভূষণের কাছে এসে তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘কী কাজটাই না করেছেন মশাই। অপূর্ব। লেখা তো নয় যেন অবন ঠাকুরের আঁকা ভারতীয় চিত্র।’
জীবন ও সাহিত্যের শাশ্বত সঙ্গীত নিয়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছেন একতারা হাতে বাউল বিভূতিভূষণ। সজনীকান্ত বলেছেন, ‘আমরা দীর্ঘ বিরোধ আর কঠিন প্রতিবাদের দ্বারা যে সহজ সত্যের প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি, এ যে কেবল দৃষ্টান্তের দ্বারা সেই চিরন্তন সত্যের প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন।’
নীরদ চৌধুরী কিন্তু কিছু না বলে নিবিষ্ট মনে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে প্রুফ দেখছেন, বিভূতিভূষণের সঙ্গে আলাপ করছেন, তর্ক করছেন। ‘কোটাবাড়ি’ কেটে করা হল ‘কোঠাবাড়ি’। ‘নৌকার লগি লইয়া এদিক-ওদিক তাড়াতাড়ি করা হইল।’ এখানে ‘তাড়াতাড়ি’ অর্থে ‘খোঁজাখুঁজি’—বিভূতিভূষণ রাখতে চান কারণ ওটা ওই অঞ্চলের ভাষা। কিন্তু নীরদ বলেন, ‘এই বই আপনার গ্রামের জন্য নয়, সারা দেশের। ওতে সবাই বোঝে চটপট মানে দ্রুত।’ নীরদ কেটে করলেন খোঁজাখুঁজি। বিভূতি মেনে নিলেন। তবে ‘ওম’ শব্দটি কিছুতেই পাল্টাতে চাইলেন না বিভূতি। ইন্দিরা ঠাকরুন এক জায়গায় বলছেন সুতির চাদর পেয়ে, ‘দিব্যি কেমন ওম।’ নীরদের আপত্তি। কিন্তু বিভূতি অনড়। কারণ, ‘ও আমার গ্রামের প্রাণের ভাষা, বদলাব না আমি।’ মতান্তরের এখানেই শেষ নয়, নীরদ বলেন ওই পাঁচালি ফাঁচালি চলবে না—ওটা ভীষণ গেঁয়ো শব্দ। নাম হোক ‘নিশ্চিন্দপুরের কথা’। কিন্তু বিভূতিভূষণ কিছুতেই রাজি হলেন না—‘পথের পাঁচালি-ই থাকবে। আজ না হোক কারণটা একদিন তুমি বুঝতে পারবে।’
বিভূতি নিজেও কিন্তু হাত চালিয়েছেন—প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত কলম চালিয়েছেন। ‘বিচিত্রা’য় যখন বের হয় পাণ্ডুলিপির পুরো পাতাটা পাল্টে দিলেন। বিভূতিভূষণ নিজেই দিয়েছেন সেই বৃত্তান্ত—‘উঃ গত ছ’মাস কী খাটুনিই গিয়াছে। জীবনে বোধহয় আমি এরকম পরিশ্রম করিনি—কখনও না। ভোর ছ’টা থেকে এক কলমে এক টেবিলে বেলা পাঁচটা পর্যন্ত কাটিয়েছি। ইডেন গার্ডেনে কেয়া ঝোপের বনে ও একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে লাল ফুল ফোটা ঝিলটার ধারে বসে কত সংশোধনের ভাবনাই না ভেবেছি।’
উপন্যাসের শেষ লাইন ‘সে বিচিত্র যাত্রা পথের অদৃশ্য তিলক’ বদলে করলেন ‘সে পথের বিচিত্র আনন্দ যাত্রার অদৃশ্য তিলক’। আবার বদলে করলেন, ‘ক্ষুদ্র জীবন পথের বিচিত্র আনন্দ যাত্রার অদৃশ্য জয় তিলক পরিয়েই তো তোমায় ঘর ছাড়া করে এনেছি...চলো এগিয়ে যাই।’
শেষ পর্যন্ত বইটা প্রকাশিত হল, ১৯২৯ সালের ২ অক্টোবর, বুধবার, মহালয়ার দিন। বইটি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর পিতৃদেবকে। পিতার ছবির কাছে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিভূতিভূষণ।
সজনীকান্তের ডাকে ফিরে তাকালেন। সজনীকান্ত জিজ্ঞেস করলেন, কী ভাবছেন?
—বাবার কথা।
সজনীকান্তের হাতে একখানা বই তুলে দিলেন। নীচে নাম সই করলেন, ‘অপু’।
‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে হইচই শুরু হল। বিভূতিভূষণ খুবই খুশি হলেন। নিজেই লিখেছেন, ‘পথের পাঁচালি’ তাঁর জীবনের কথা— ‘মূল নায়ক অপু অনেকখানিই আমার জীবনের সঙ্গে জড়ানো। সর্বজয়ার মধ্যে আমার মায়ের রূপ, ইন্দির ঠাকরুনের মধ্যে মেনকা পিসি, পিতা হরিহরের মধ্যে পিতা মহানন্দ।’
কিন্তু এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি যে ফ্যাসাদে পড়েছিলেন, সেটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন।
হরিহরের ডায়েরি থেকে একটা লেখা ছাপালেন ‘বিচিত্রা’য়। আসলে লেখাটা ছিল তাঁর পিতা মহানন্দের পশ্চিম ডায়েরির পাতা থেকে। ‘বিচিত্রা’য় লেখাটা পড়েই পত্রাঘাত এল—কে মশাই হরিহর? ত্রৈলোক্যনাথের কোনও বন্ধু নেই ও নামে, কেউ থাকেওনি এসে এটোয়ার বাড়িতে ওই তারিখে। এসব কী লিখেছেন, কেন লিখেছেন জানাবেন। আসলে ওই লেখায় হরিহরের এটোয়াতে বন্ধু—ত্রৈলোক্যনাথ শীলের বাড়িতে থাকার কথা আছে, আছে শীল পরিবারের ব্যবহার নিয়ে কিছু মন্তব্য।
শীল পরিবারের চিঠি পড়ে বিভূতিভূষণ গেলেন নীরদের কাছে। নীরদ চুপ করে থাকতে বললেন বিভূতিভূষণকে। বললেন, ‘এরপর কিছু বললে ডায়েরিটা দেখিয়ে দেবেন।’
কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারলেন না বিভূতি। ভয়টা রয়েই গেল। ফলে, দুটো প্যারাগ্রাফে চালালেন কাঁচি, একেবারে উধাও। ব্যাপারটা অবশ্য ওখানেই মিটে যায়।
‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। অভিনন্দন, সংবর্ধনা, আলোচনা, সমালোচনা পত্রপত্রিকায় লেখালেখির ঝড়। ‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে এক বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচক নীরেন্দ্রনাথ রায় যে প্রবন্ধ লেখেন এবং গুণীজনের নজর কাড়ে, তাতে লেখা হয়েছিল, ‘বিভূতিভূষণ অত্যন্ত সৌভাগ্যশালী লেখক, কারণ তাঁর প্রথম বই যে খ্যাতি ও স্তুতি লাভ করেছে তা বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্রের ভাগ্যেও জোটেনি।’
তবে, একথা ঠিক ‘পথের পাঁচালি’ ও ‘অপরাজিত’র মধ্যে ‘পথের পাঁচালি’ নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছিল। তবে এটাও তো মানতে হবে ‘অপরাজিত’ ‘পথের পাঁচালি’র সম্পূরক গ্রন্থ।
অনেকেরই প্রশংসা পেল ‘পথের পাঁচালি’। তবু বিভূতিভূষণ তৃপ্ত নন। তাঁর আরাধ্য সাহিত্যিকের কোনও মতামত জানা হল না আজও।
এই সময় তিনি খবর পেলেন, প্রশান্ত মহলানবিশের বাগানবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের আসার কথা। তিনি ঠিক করলেন কবির সঙ্গে দেখা করবেন। বিভূতিভূষণ বাগানবাড়িতে গেলেন, দেখা করলেন। রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাদ করলেন। ‘পথের পাঁচালি’র প্রশংসা করে বললেন, এ সম্পর্কে তিনি লিখে পাঠিয়েছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকায়।
‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল রবীন্দ্রনাথের আলোচনা— ‘আমার দেহ শ্রান্ত এবং কলম কুঁড়ে হয়ে এসেছে। সমালোচনা করবার মতো উদ্যম হাত নেই। বিপদ এই ঘটল, আধুনিক অনেক ভালো গল্প সম্বন্ধে আজও কোন মত দিইনি—এই অপরাধ হল নিবিড়—যথা বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী। পথের পাঁচালি আখ্যানটাও অত্যন্ত দেশী। কিন্তু কাছের জিনিসেরও অনেক পরিচয় বাকি থাকে। যেখানে আজন্ম আছি সেখানেও সব মানুষের সব জায়গায় প্রবেশ ঘটে না। পথের পাঁচালী যে বাংলা পাড়াগাঁয়ের কথা, তাঁকে নতুন করে দেখতে হয়। লেখার গুণ এই যে কোনও জিনিস ঝাপসা হয়নি। মনে হয় সব খাঁটি। উঁচু দরের মন ভোলাবার জন্য সস্তাদরের রাংতার সাজ পরাবার চেষ্টা নেই—বইখানা দাঁড়িয়ে আছে আসল সত্যের জোরে। এই বইখানিতে পেয়েছি যথার্থ গল্পের স্বাদ। এর থেকে শিক্ষা হয়নি কিছুই, দেখা হয়েছে অনেক যা পূর্বে এমন করে দেখিনি। এই গল্পে গাছপালা, পথঘাট, মেয়ে-পুরুষ, সুখ-দুঃখ সমস্তকে আমাদের আধুনিক অভিজ্ঞতার প্রাত্যহিক পরিবেষ্টনের থেকে দূরে প্রক্ষিপ্ত করে দেখানো হয়েছে। সাহিত্যে একটা নতুন জিনিস পাওয়া গেল, অথচ পুরাতন পরিচিত জিনিসের মতোই সুস্পষ্ট।’
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল
সহযোগিতায় : উজ্জ্বল দাস