বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
শুধু চিঠিই বা কেন সেকালে ছাদের প্রেমও চলত খুব। উত্তর কলকাতার ঘেঁষাঘেঁষি করা কোনও বাড়ির ছাদে যদি লাল ডুরে শাড়ি পড়ে কোনও কুমারি মেয়ে একঢাল কালো চুল শুকোতে শীতের দুপুরে উঠত তাহলে পাশের বাড়ির সদ্য গোঁফ গজানো তরুণের ছাদে আনাগোনা বেড়ে যেতে। সমস্ত কাজের একমাত্র জায়গা তখন তাঁর কাছে হয়ে উঠত ওই ছাদ। আড়চোখে দেখা, কবিতা আওড়ানো আরও একটু সাহসী হলে ‘কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো, কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো’র মতো দু-এক কলি গানও উড়ে আসত প্রতিবেশি পার্শ্ববর্তিনীর কানে।
কালের আবর্তে আর সময়ের স্রোতে পুরনো সংস্কৃতির জাল ভেঙে শুরু হল ভাসোবাসার নতুন চালচিত্র। বিশ্বায়নের দমকা হাওয়ায় এক টুকরো আকাশের মতো ঝকঝকে নীল খামের লাভ লেটার লেজ গুটিয়ে ছুটি নিল। বদলে এল এসএমএস আর হোয়াটস অ্যাপের জোয়ার। সাদা স্ক্রিনের মাঝে খুদি খুদি ঝকঝকে অক্ষর। উনিশটা দশ-এ দাঁড়াব কলেজের গেটে। আসবি একবার? তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।’
অথবা কলেজের করিডোরে ছুটে এসে প্রেমিকার রাস্তা আটকে গোলাপ হাতে জনসমক্ষে প্রেম নিবেদন। রসিক প্রেমিক হলে প্রেমিকা সরে যাওয়ার আগেই হাঁটু গেঁড়ে বসে গলা খুলে— ‘হাই মেরিলিন। আবার এসেছি আমি, তব চরণতলে। সেই অভাগা গ্যারি কুপার।’ কলেজে প্রেম নিবেদনে একেক জনের একেক স্টাইল।
ক্রমশ বদলাতে থাকল প্রেমের সংজ্ঞা। আর মুখ গোঁজা, ইতস্তত চাউনি, হাঁটু কাঁপা প্রেম নয় বরং রীতিমতো প্রত্যয় নিয়ে পাড়ার বজ্জাত ছোকরার প্রেমিকার বাড়ির সামনে দিয়ে চোখে রোদ চশমা দিয়ে আর দ্বিচক্রযান নিয়ে ‘লে জায়েঙ্গে লে জায়েঙ্গে দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে...র উচ্চকিত প্রেমের প্রকাশ শুরু হল। মেয়েরাও আর পিছিয়ে থাকল না তারাও গাইলো ‘দেখা হ্যায় পহেলিবার সজন কি আঁখো মে প্যার...’ এরপর তো ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন হিসেবে স্বীকৃতি পেল। প্রচলিত অনেক গল্পের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীটি ছিল এই যে ভ্যালেন্টাইন নিজেই প্রেমিক। জেলারের অন্ধ কন্যার প্রেমে পড়েন তিনি। ভালোবাসা আর আধ্যাত্মিক গুণের স্পর্শে সৎ প্রেমিক সারিয়ে তোলেন প্রেমিকাকে। কিন্তু খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইনের এই নিবিড় প্রেম ক্ষিপ্ত করে সম্রাটকে। বন্দি হন ভ্যালেন্টাইন। বন্দি অবস্থায় প্রেমিকাকে লেখা চিঠির শেষে তিনি লেখেন, ‘ফ্রম ইয়োর ভ্যালেন্টাইন।’ ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। সেই থেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমের দিবস। একালের সরস্বতী পুজোর দিনে বাসন্তী শাড়ি আর হলুদ পাঞ্জাবির প্রেম এখন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মিশে গিয়েছে। ফুল, ক্যান্ডি, চকোলেট, রেড হার্ট, কার্ড, উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা জানায় নবযুগের চালক-চালিকারা। তবু আজও প্রেম সর্বত্রগামী। আকুলতা সে যুগেও ছিল, এ যুগেও আছে।