বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং একান্নবর্তী পরিবারে বিয়ে হওয়া কুহুমিতা প্রথম থেকেই স্বপ্ন দেখত নিজের একটা সাজানো-গোছানো ছোট্ট বাড়ির। যার সামনে একটা ফুলের বাগান থাকবে। আর এই বাড়িতে সে তার স্বামী-সন্তান নিয়ে একটু একান্তে দিন যাপন করবে।
সুনয়না যখন তার মাতৃত্বের চিহ্নগুলো শরীরের মধ্যে ফুটে উঠতে দেখল এবং ডাক্তারের কথামতো যখন তার বিশ্রামের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, তখন অনায়াসেই সে তার বেসরকারি চাকরিটাকে বিদায় জানিয়ে দিল। কারণ চাকরির থেকে মা হওয়ার স্বপ্ন তাকে অনেক বেশি আনন্দ দিয়েছে।
দেবপর্ণা অনেক বছর ধরে সুপ্রতিমের সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। ওদের দু’বাড়ির লোকও ওদের এই সম্পর্ক মেনে নিয়েছিল। তাই সুপ্রতিম যখন চাকরি পেয়ে বাইরে চলে গেল, তখন সদ্য এমএ-তে ভর্তি হওয়া দেবপর্ণা তার মনের গভীরে লালন-পালন করা স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে দেরি করল না। তার কাছে মাস্টার ডিগ্রি পাওয়ার থেকে বিয়ে করাটা বেশি বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল।
যুগে যুগে দেখা একই স্বপ্ন:
মাত্র কয়েক যুগ আগেও মেয়েরা ছিল ঘোমটার আড়ালে। সংসারের চার দেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকত তারা। আর তখন তাদের কাছে স্বপ্নগুলোও ছিল পুরোপুরি পরিবার কেন্দ্রিক। স্বামী, শ্বশুরবাড়ি, সন্তান এসব নিয়ে ভাবনা ছাড়া তাদের ভাবার মতো আলাদা কিছুই ছিল না। আজকের জেট যুগে জেটগতিতে এগিয়ে চলা মেয়েরাও কিন্তু ঠিক একই স্বপ্ন দেখে।
আজকের মেয়েদের জীবনে বাইরের জগৎ আছে। কেরিয়ারের হাতছানি আছে। তারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়ও। কিন্তু তবুও সংসারকেন্দ্রিক স্বপ্ন তাদের মনে আলাদা জায়গা দখল করে রেখেছে। চাকরি করলেও আগেকার দিনের মতোই আজকের মেয়েদেরও স্বপ্নের বিষয়বস্তুগুলো একশো শতাংশ ঘরোয়া।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেরিয়ারটা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের পেছনে পড়ে থাকে। বিয়ের আগে বাবা-মা আর বিয়ের পরে স্বামী-সন্তানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মেয়েদের স্বপ্নগুলো। এমনটা হওয়ার কারণ কী? কী বলছেন মনস্তত্ত্ববিদ?
মনস্তত্ত্ববিদের কথায়:
মনস্তত্ত্ববিদ রাজ্যশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুসারে স্বপ্ন কথাটার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আমাদের অবচেতন মনের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছা, চাহিদা, দ্বন্দ্ব প্রভৃতির প্রকাশ। ঘুমের মধ্যে মনের গভীরতা ঠেলে এই চিন্তাগুলো ওপরে উঠে আসতে চায়।
সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্ন কথাটার মানে একপ্রকার ইচ্ছে মিশ্রিত কল্পনা। যা মানুষ সচেতনভাবেই করতে ভালোবাসে। অবচেতন মনে স্বপ্ন দেখাটা নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া ঘটায়।
কিছু চিহ্নর দ্বারা স্বপ্নগুলি আবৃত থাকে, যা কেবল এক মনবিশ্লেষক ছাড়া আর কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। নানা কারণে নারী-পুরুষের মানসিকতার প্রভেদ ঘটে। তাই তাদের ইচ্ছা মিশ্রিত কল্পনাগুলি সাধারণত ভিন্ন হয়। মহিলাদের মধ্যে স্বাভাবিক কিছু প্রবণতা আছে, যেটা তাদের প্রেরণাগত। সেই কারণেই পুরুষদের তুলনায় তারা অনেক বেশি ঘর-সংসারকে আঁকড়ে নিয়ে বাঁচতে চায়। ফলে তাদের কল্পনা জগতের অনেকটাই জুড়ে থাকে স্বামী ও সন্তান। চাকরিজীবী মহিলা হলেও একই কারণে তাদের অধিকাংশের মধ্যে দেখা যায় সংসারকেই বেশি প্রাধান্য দিতে। বাড়ি-ঘরদোর কীরকম সাজানো হবে, আসবাবপত্র কেমন হবে, পর্দার রং বা দেওয়ালের রং কী হবে, কোথায় বাজেটের মধ্যে ফ্যামিলিকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়া যাবে, বাজার দোকান কী করা হবে, রান্নার রেসিপি কোনদিন কেমন হবে, বাচ্চার টিউশন, স্কুল, বাচ্চার ভবিষ্যৎ ইত্যাদি ঘরোয়া জিনিসেই তাদের স্বপ্নের বিষয়বস্তু হয় এবং এসব স্বপ্নকেই সফল করার মধ্যেই তারা জীবনের আনন্দ ও সার্থকতা খুঁজে পায়।