একটা সময়ে ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম ছিল চিঠি। এক বুক অনিশ্চয়তা নিয়ে দু’ছত্র লিখে পাঠানো। আর দুরু-দুরু বুকে উত্তরের সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করা।
মেয়েদের স্বপ্নগুলো ইচ্ছেডানা হয়ে উড়ে বেড়ায় গোপনে মনের গভীরে। মেয়েরা স্বপ্ন দেখে সংসার করার, সুখে ঘর করার। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন নারী মনে অনেক পিছনের সারিতে স্থান পায়।
ভারতবর্ষ তথা এই উপমহাদেশ নারীজাতির প্রতি সুপ্রাচীনকাল থেকেই পরম শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছে। বেদের যুগে এই উপমহাদেশ নারীর প্রতি যে সম্মান জ্ঞাপন করত তা ছিল পূজার যোগ্য। পরবর্তীকালে নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে নারী জাতির অবস্থার অবনতি ঘটে।
বিংশ শতাব্দীতে মেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পেলেও বহির্জগতে তাঁদের যাতায়াত খুব একটা সুগম ছিল না। তাঁরা ‘মেয়েমানুষ’— এই তকমা তাঁদের গায়ে সাঁটা ছিল। তাঁদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের পথ প্রশস্ত ছিল না। সাহিত্যিক বাণী রায় প্রত্যক্ষতই নিজের চলার পথে সেই সীমানা ভেঙে দিতে পেরেছিলেন।
বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
ইতিহাসে ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত। দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হেরে গেলেও ভারতের পারফরমেন্স কিন্তু গ্রুপ পর্যায়ে ছিল নজরকাড়া। চার-চারটি ম্যাচ জিতে গ্রুপ শীর্ষে উঠে সেমি-ফাইনালে গিয়েছিল ভারত। ট্রফি না পেলেও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ভারত অধিনায়ক কিন্তু দুর্দান্ত ব্যাট করেন। চেনান নিজের জাতকে। তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষে ভারত এবং দলনায়ক হরমনপ্রীত কাউরকে নিয়ে আলোচনা সর্বত্র।
ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডদের দেশে প্রথম ম্যাচে প্রবল প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে ঝড় তোলেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত।
জীবনের প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি করেন জামাইকাতে। এককথায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত খেলে, প্রথম ম্যাচ থেকেই খেলার রান নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিল ভারত। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য সিদ্ধহস্ত হরমনপ্রীত টি-২০ বিশ্বকাপে নিজের অভিযান শুরু করেন দুর্দান্তভাবে।
কিউইদের বিপক্ষে ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন হরমনপ্রীত। আর শতরান করেন মাত্র ৪৯ বলে। ইনিংসের শেষ ওভারে যখন তিনি আউট হয়ে ফিরছেন তখন তাকে অভিনন্দন জানায় নিউজিল্যান্ড দল।
ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজদের পরবর্তী প্রজন্মের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হরমনপ্রীত। ছেলেবেলায় ঘুমোতে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন খেতে এবং তা অবশ্যই পাঞ্জাবি খাবার। বিদেশে খেলতে গেলে খাবার নিয়ে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হত তাঁকে। অনেকদিন না খেয়েও থাকতে হয়েছে। প্রিয় খাবার ছিল ‘বাটার চিকেন’। কিন্তু ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করে নিয়েছেন। এখন দেশে-বিদেশে ঘুরছেন, বিদেশি খাবারের সঙ্গেও মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর ছাপ পরেছে নেতৃত্বে। এখন তিনি দেখেশুনে খেলেন। প্রথমে ধরে খেলেন, পরে হাত খুলে মেরে নিজের ও দলের রান বাড়ান।
ভারত-অধিনায়ক বাংলার সর্বকালের সেরা মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর মুখেও হরমনপ্রীতের প্রশংসা। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘২০০৯ সালে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত চ্যালেঞ্জার্স ট্রফিতে তিনি প্রথম হরমনপ্রীতকে দেখেছিলেন, তখন সদ্য খেলতে শুরু করেছে পাঞ্জাবের মারকুটে মেয়েটি। প্রতিপক্ষ বোলারকে অবলীলায় লম্বা লম্বা ছয় মেরেছিল সেদিন। তখন থেকেই ঝুলন ঠিক করেছিলেন এই মেয়েটিকে জাতীয় দলে নেবেন। ২০০৯ সালের বিশ্বকাপে ঝুলন গোস্বামীর পরামর্শেই টিম ইন্ডিয়ায় জায়গা পান হরমনপ্রীত। তার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
প্রথম মাঠে নামার সুযোগ পান বিশ্বকাপ ফিল্ডার হিসাবে মিতালি রাজের পরিবর্তে। তবে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে প্রাক্তন অধিনায়ক মিতালি রাজকে বাদ দেওয়ায় অনেকেই সমালোচনা করেছেন তাঁর। কিন্তু হরমনপ্রীত টিমম্যান। নিজেকে সবসময় ফিট রাখেন। পাঞ্জাবি গানের সঙ্গে দুর্দান্ত ভাংড়া নাচতে পারেন। শপিং করতে ভালোবাসেন। এই মুহূর্তে ভারতের তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা মহিলা ক্রিকেটার হরমনপ্রীর কাউর। যার বিরুদ্ধে বোলিং করতে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন বিশ্বের তাবড় তাবড় মহিলা বোলাররা। ফলে হরমনপ্রীতকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার, দক্ষ ব্যাটসম্যান ও দেশের গর্ব বললে খুব ভুল হবে কি?
সুজন ঠাকুরতা
