পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
পুলিসের বক্তব্য, প্রথমে ধারাল অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষত করা হয়। প্রায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চির প্রচুর ক্ষত রয়েছে দেহে। ওই অবস্থাতেই তাঁর পেট চিরে দেওয়া হয়। তারপর মুণ্ড থেকে ধড় আলাদা করে দেওয়া হয়। বৃদ্ধার শরীরে অস্ত্র দিয়ে প্রায় ২০টি কোপানোর চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। যদিও তাঁর ঘরের আলমারিতে হাত পড়েনি। দু’টি ঘরেরই ড্রয়ারগুলি থেকে জামাকাপড় বের করে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। মৃতদেহে সোনার অলঙ্কারও রয়েছে। মোবাইল ফোনও মিলেছে। পুলিসি তদন্তে জানা গিয়েছে, বাড়িওয়ালারা সেদিন রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেয়েছিলেন। ভোর চারটে নাগাদ উল্টোদিকের বাড়ির এক মহিলা বৃদ্ধার ঘরে আলো জ্বলতে দেখেন। পুলিসের অনুমান, গোটা ঘটনাটি সাড়ে ১২টা থেকে দু’টো-আড়াইটের মধ্যেই হয়েছে।
সাধারণত এই ধরনের খুনের ঘটনার নেপথ্যে অনেকগুলি রহস্যের জাল ছড়িয়ে থাকে, যা ভেদ করে অপরাধী খুঁজে বের করেন পুলিসের তদন্তকারী অফিসাররা। কিন্তু, এই ধরনের খুনের ঘটনার নেপথ্যে মনস্তাত্ত্বিক ও আর্থ-সামাজিক দিক সূক্ষ্মভাবে রয়ে গিয়েছে, যার মূলটি রয়েছে অনেক গভীরে। আমাদের দেশে বিশেষত শহরাঞ্চলে অনু-পরিবারভিত্তিক ব্যবস্থায় খুবই একাকী ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছেন প্রবীণ নাগরিকরা। উন্নত আর্থিক অবস্থা ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারে প্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়েরা পেশাগত কারণে বাবা-মায়ের কাছ থেকে দূরে চলে যায় অথবা উভয়ের যোগাযোগ কমে আসতে শুরু করে। তখন ঘরে থাকা প্রবীণ-প্রবীণারা অনেকসময়েই পরিচারক-নির্ভর হয়ে পড়েন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটির পর একটি বাইরের লোক তাঁদের ঘরে আসে, তাঁদের দেখাশোনা করে, তারাই বৃদ্ধবৃদ্ধার গল্পের সঙ্গী, পরিবারের গোপন বিষয় সম্পর্কে তারা অনায়াসেই অবগত হয়ে যায়। আর তাদের জন্য মাইনের টাকাও যে বৃদ্ধবৃদ্ধার অ্যাকাউন্টে চলে আসে বাইরে থাকা ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে এসবই তাদের জানা। তাই কারো উদ্দেশ্য খারাপ থাকলে অঘটন ঘটে যায়। ফলে, এই নিঃসঙ্গ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষা কীভাবে সম্ভব!
বয়স হয়ে গেলে মানুষের শরীরের ক্ষমতা ও বুদ্ধি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন একটি ওষুধও ড্রয়ার থেকে বার করে দিতে হয় পরিচারিকাকে। অথবা পাশবই, চেকবইটা তাদের বার করে দিতে হয় আলমারি থেকে। রান্নার লোক, কাজের লোক, সর্বক্ষণের দেখভাল করার লোক, গ্যাস-খাবার জল সরবরাহকারী যুবক এমনকী হোম ডেলিভারির খাবার দেওয়ার লোক, সর্বোপরি আবাসনের কেয়ারটেকার, কারও জানতে বাকি থাকে না যে, অমুকবাবু বা অমুকগিন্নি একলা থাকেন। মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে যায়, তাঁদের সম্পত্তি, টাকাকড়ির পরিমাণ, ঘরে সব সময় কত নগদ মজুত থাকে, গয়না কত থাকে ইত্যাদি!
সুতরাং, একাকী প্রবীণ-প্রবীণাদের একমাত্র ভগবানের দয়ায় বেঁচে থাকা ভিন্ন অন্য কোনও সম্বল থাকে না। দিনদিন পরিবার যত ভেঙে ছোট ছোট টুকরো হতে থাকবে, ততই এই সমস্যা বাড়বে। আত্মকেন্দ্রিকতা, প্রতিবেশীদের পরস্পরে মধ্যে আন্তরিকতা না থাকা, পুরনো পাড়া ছেড়ে নতুন পাড়ায় উঠে আসার পর সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারার মতো ব্যর্থতাও এসবের নেপথ্যে রয়েছে, যা আমাদের চোখে হয়তো ধরা পড়ে না। ফলে, প্রবীণদের নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র পুলিসি নজরদারিই যথেষ্ট নয়, এতগুলি কারণ জড়িয়ে আছে। সেখান থেকে যতদিন না পর্যন্ত আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি, ততদিন এ ধরনের অপরাধও হয়তো ঘটতে থাকবে।