পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
একটিমাত্র বিষয়—মানবিক চেতনা—মানুষের সঙ্গে অন্য প্রাণীদের মধ্যে মূলগত তফাত গড়ে দিয়েছে, যা নিয়ে মনুষ্যসমাজেরও গর্বের অন্ত নেই। এই মানবিক চেতনা কী? এ এমন একটি অনুভব, যার জন্য প্রকৃত মানুষ সবাইকে ভালোবাসতে পারে, তার মধ্যে পবিত্র প্রেমভাব অক্ষুণ্ণ থাকে, যে-কোনও প্রকার বিদ্বেষ ছলনা ষড়যন্ত্র ঘৃণা হিংসা নিষ্ঠুরতা অপরাধ থেকে সে নিজেকে শতহস্ত দূরে রাখতে সক্ষম হয়। আর এই মানবিক গুণগুলি হারিয়ে ফেললে মনুষ্যধর্ম থেকে আমরা বিচ্যুত হতে থাকি। কৃতজ্ঞতাবোধ হারানো মানুষের পক্ষে কৃতঘ্ন হয়ে ওঠাটা তখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। কৃতঘ্ন মানুষের প্রথম আঘাতটা অনুভব করেন তিনি, যিনি জন্মদাত্রী। যে-মানুষ নিজের মাকে আঘাত করতে বিচলিত নয়, তার কাছে নারীজাতির প্রতি শ্রদ্ধার লেশমাত্র প্রত্যাশিত নয়। এই মুহূর্তে দেশের সামনে যতগুলি বড় বিপদ উপস্থিত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় নিঃসন্দেহে মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ। শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুন, মেয়েদের শরীর লক্ষ করে অ্যাসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি। এছাড়া পরিবারে, বিয়ের পিঁড়িতে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, পথেঘাটে তারা বৈষম্যের শিকার। বৈষম্য ছাপিয়ে অনেক সময়ই নারীদের উপর নেমে আসে অত্যাচারের খাঁড়া। ভারতজুড়ে দশকের পর দশক কত নারীকে যে পণের বলি হতে হয়েছে তার সঠিক হিসেব পাওয়া দুষ্কর। ব্যাপারটি গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই পণপ্রথার বলির দৈনিক খবর আমাদের মনে আর আলাদাভাবে দাগ কাটে না। ভারত যে জগৎসভায় গুরুত্ব হারাচ্ছে তার অন্যতম কারণ নারীশক্তির এই অপব্যবহার।
শাসনব্যবস্থার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ভারত গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছে। আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভটির নাম হল সংসদ বা আইনসভা। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিদের সংসদে পাঠানো হয়। অন্যদিকে, রাজ্য বিধানসভাগুলির জন্য সদস্যরা নির্বাচিত হন সংশ্লিষ্ট রাজ্য থেকে। ‘সব কা বিকাশ’-এর নীতিতে উন্নত ভারত নির্মাণের পথ দেখানোর দায়িত্ব সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ সংসদের। সংসদই মানুষের প্রয়োজনে পুরনো আইন সংশোধন ব্যবস্থা এবং নতুন আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালনের ক্ষমতা ও অধিকার যাঁদের হাতে ন্যস্ত, তাঁদের সকলে কি তার যোগ্য? এই সংগত প্রশ্নটি অনেক দিনের। কারণ এমএলএ, এমপিদের মতো সর্বোচ্চ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একাংশের ভাবমূর্তি মোটেই পরিচ্ছন্ন নয়। যাঁরা বিধানসভা বা পার্লামেন্ট আলো করে থাকেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ খুন দাঙ্গার অভিযোগের পাশাপাশি নারীঘটিত অপরাধেও অভিযুক্ত! অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মসের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে নারীঘটিত অপরাধে জড়িয়ে পড়া লোকসভার সদস্য সংখ্যা ২ থেকে বেড়ে ১৯ হয়েছে! প্রার্থীদের নির্বাচনী হলফনামার ভিত্তিতে এডিআর আরও জানাচ্ছে, ফৌজদারি মামলায় জড়িয়ে আছেন ৭৫৬ জন এমপি এবং চার হাজারের বেশি এমএলএ! মহিলাঘটিত অপরাধে অভিযুক্ত বিধায়কের সংখ্যাটি ৫৮! দুর্ভাগ্যের যে, এই প্রশ্নে কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল বিজেপি এবং পূর্ববর্তী শাসক দল কংগ্রেসের নাম আসছে সবার আগে। প্রার্থী মনোনয়নে রাজনৈতিক দলগুলির উচিত এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া। অন্যথায় দেশের রাজনীতি আরও তলানিতে যাবে, যা গণতন্ত্রের সামনে এক অশনিসংকেত। জননী ও জন্মভূমির গরিমার কথা কি শুধু শাস্ত্রগ্রন্থেই বন্দি রাখবে ভারত?