পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
এমন সময়ে এই বিল পেশ করা হল যখন দেশের মানুষ এনআরসি-আতঙ্কে ভুগছে। অন্যদিকে, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় মানুষের সামগ্রিক জীবনযাত্রা পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে। কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে তাই সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। দু’মুঠো অন্ন জোটাতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি সঙ্গীন, কর্মসংস্থানের অভাব, বেকারত্ব, অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য ইত্যাদি সমস্যায় দেশের মানুষ জেরবার, তখনই তার থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে মোদি সরকার এমন একটি বিষয়কে সামনে নিয়ে এল, যে ব্যাপারে মানুষকে আবার নতুন করে তার নাগরিকত্ব নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। আসল জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর এ এক কৌশল। আনা হল এমন একটি বিষয়, কে নাগরিক আর কে নয়, সেটাই যেন এখন দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। বুঝতে অসুবিধা হয় না—মোদি সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপটিই হল এনআরসি।
বার বারই দেখা গিয়েছে, দেশের আসল সমস্যার থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে এই সরকারের জুড়ি মেলা ভার। মোদি-শাহ জুটির কৌশলী পদক্ষেপে বার বার ব্যতিব্যস্ত হতে হয়েছে দেশবাসীকে। এবং, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে রাতের আঁধারে। নোটবন্দির হয়রানির কথা এখনও দেশবাসী ভুলতে পারেননি। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা হয়েছে যাতে মনে হয়, যা করা হচ্ছে জাতীয় স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে। নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের মানুষকে এখন নাগরিকপঞ্জি, নাগরিকত্ব বিল ইত্যাদি নিয়ে মাতিয়ে রাখতে পারলে শাসকেরই সুবিধা। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। যেমন অর্থনীতির মূল সমস্যাটিকে আড়াল করা এবং সেইসঙ্গে ভোটব্যাঙ্কটিকেও শক্তপোক্ত করা। কারণ, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে—২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ জৈন, খ্রিস্টান, পার্শি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের কাছে বৈধ কোনও নথি না-থাকলেও প্রত্যেককে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ তা দেওয়া হবে না শুধু মুসলিমদের। এতে হয়তো বোঝানো গেল প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে আসা মুসলিম ছাড়া অন্য ধর্মের মানুষের কোনও দুশ্চিন্তা রইল না। কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে হিন্দুদের উদ্দেশে এমন বার্তাই কি দেওয়া হল না? সরকার পক্ষ অবশ্য এর কারণ ব্যাখ্যা করেছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, বিরোধীদের তোলা ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের অভিযোগটি কি একেবারেই অমূলক? নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সুফল কতটা মিলবে তা সময়ই বলবে, তবে মানুষের রুটিরুটির জন্য এই মুহূর্তে মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যবস্থা নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।