পিতার স্বাস্থ্যহানী হতে পারে। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব হবে না। পঠন-পাঠনে পরিশ্রমী হলে সফলতা ... বিশদ
এরপর ২০১৯। মৃত্যুর সংখ্যা আগের দুটি ঘটনার প্রায় কাছাকাছি। ঘটনাস্থল মধ্য দিল্লির রানি ঝাঁসি রোডের আনাজ মান্ডির একটি কারখানা। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হল, চারতলা ওই বাড়িটি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার দরজা একটিই। তাও আবার সেটি যোগ হয়েছে একটি সরু গলির সঙ্গে। ফলে দূর দূরান্ত থেকে পেটের টানে আসা শ্রমিকরা যে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসবেন, সে রাস্তাও ছিল কার্যত বন্ধ। একদিকে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। অন্যদিকে বন্ধ ঘরে তৈরি হওয়া কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসে কারখানার ওই তিনতলা হয়ে উঠেছিল মরণফাঁদ। গলি এবং তস্য গলির ভিতরে এমন এটি কারখানা কী করে গড়ে উঠল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। উঠেওছে। মুখ বাঁচাতে প্রশাসনও তড়িঘড়ি কারখানার মালিক ও ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু যে সব তথ্য এই ঘটনার পর সামনে এসেছে, তাও চমকে দেওয়ার মতো। ওই বাড়িতে ওরকম একটি কারখানা তৈরির অনুমতিই নাকি ছিল না। দমকলও এমন কর্মকাণ্ডের জন্য কোনও ছাড়পত্র দেয়নি। দাহ্য পদার্থে কারখানা ছিল ঠাসা। অথচ ছিল না আগুন নেভানোর ন্যূনতম বন্দোবস্ত।
দিল্লির ঘটনা। তাই মৃত্যুর সংখ্যা দেখে নিয়মমাফিক উদ্বেগ প্রকাশ করে দায় এড়ালে বোধহয় বোকামিই হবে। কারণ, কলকাতা শহরেও ওই সব্জি মান্ডির মতোই বহু এলাকা রয়েছে, যেগুলি ঘিঞ্জি। জায়গায় জায়গায় তারের জটলা। বাজারের সামনে ফুটপাত জুড়ে এমনভাবে স্টল গড়ে উঠেছে যে, আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি পৌঁছতেই নাস্তানাবুদ হয়। তারপরেও জলের সঙ্কট এবং অগ্নি সুরক্ষাবিধি না মানার মতো গুরুতর বিষয় তো আছেই। ভুলে গেলে চলেবে না, এই কলকাতাতেই বিগত কয়েক বছরে আমরি, স্টিফেন কোর্ট, নন্দরাম মার্কেট, বাগরি মার্কেট, সূর্য সেন স্ট্রিট মার্কেটের মতো বড় বড় অগ্নিকাণ্ডে বহু প্রাণ ঝরে গিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু দেখা গিয়েছে, আগুন লাগার পর পুলিস এবং প্রশাসন নড়েচড়ে বসে, গ্রেপ্তার হয়। মামলা চলে বছরের পর বছর। অনেক ক্ষেত্রে আবার ন্যূনতম ব্যবস্থা নিয়েই আগের জায়গায় ফিরে যায় সবকিছু।
আগুন নেভাতে দমকল দপ্তরের পরিকাঠামোগত যে ঘাটতি রয়েছে, তাও বিভিন্ন সময় খবরে উঠে এসেছে। একদিকে দপ্তর যেমন গত আট বছরে এক হাজারটি নতুন গাড়ি কিনেছে। যে সব জায়গায় রাস্তা সরু ও ঘিঞ্জি, সেখানে দ্রুত পৌঁছতে কেনা হয়েছে ৪০০টি মোটরবাইক, আনা হয়েছে অত্যাধুনিক ফায়ার বল, তেমনি আগুন নেভাতে যাঁরা জীবন বিপন্ন করে সবার আগে ছুটে যান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামই নাকি তাঁদের জন্য নেই। রাজ্যের ১৪১টি দমকলকেন্দ্রের কমীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। অভিযোগ, পোশাক, জুতো, গামবুট, হেলমেট সহ নানা সরঞ্জাম যা তাঁদের পাওয়ার কথা, তা অনেকসময় মেলে না। আগুনের প্রবল তাপে কাজ করার জন্য যে বিশেষ পোশাক দরকার, বহু কেন্দ্রে তাও পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেই। এ তো যাঁরা আছেন, তাঁদের সমস্যা। এই মুহূর্তে শূন্য পদের সংখ্যাও কম নয়, প্রায় তিন হাজার। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব সমস্যার মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দের জন্য নবান্নে আবেদন
জানানো হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে গড়িয়াহাট মোড়ে একটি নামী বস্ত্র বিপণীতে আগুন লাগার পর ফুটপাতের স্টলগুলিতে প্লাস্টিকের ছাউনিও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই গড়িয়াহাটেই রবিবার দুটি স্টলে আগুন লাগে, যাদের মাথায় ছিল প্লাস্টিকের ছাউনি। ফলে আগুন লাগার পর তা নিয়ে হইচই না করে বছরভর বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, ফায়ার অডিট নিয়মিত করা এবং ঘাটতির জায়গাগুলি পূরণ করা আশু কর্তব্য। না হলে আরও অনেক প্রাণ ঝরে গেলেও হা হুতাশ ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না।